প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কথাই সত্য হয়েছে। ইরাক এখন বিশৃংখল একটি দেশ। ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে অনেকেই আখ্যায়িত করেন এ দেশটিকে। ভয়াবহ আকারে রয়েছে সহিংসতা।
ইরাক আগ্রাসন থেকে সেখানে মারা গেছেন কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ। এসব পূর্বাভাষ সিআইএর কর্মকর্তা জন নিক্সনকে বলেছিলেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেছিলেন, ইরাক শাসন করা অতোটা সহজ নয়। আসলেও তাই ঘটছে এখন।
সাদ্দাম হোসেনকে অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন জন নিক্সন। তা নিয়েই তিনি লিখেছেন দ্য ডেইলি মেইলে।
তাতে তিনি বলেছেন, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ও ইরাক সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অনেক ভুল করেছে। তার সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে সাদ্দাম হোসেনের। এখন সেই জন নিক্সন বলছেন, ইরাকে আগ্রাসন চালানোর ক্ষেত্রে অনেক দিন থকে মারাত্মক ভুল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
১৯শে ডিসেম্বর এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। জন নিক্সন বলেছেন, সিআইএ তখন বিশ্বাস করতো সাদ্দাম হোসেন রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু তাদের এ ধারণা ছিল ভুল।
এ ছাড়া সাদ্দাম হোসেনের স্বাস্থ্য, তার ব্যক্তিগত অভ্যাস ও কিভাবে তিনি ইরাক পরিচালনা করেন এসব নির্ণয়েও যুক্তরাষ্ট্র ভুল করেছে। তখনকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশেরও কড়া সমালোচনা করেছেন জন নিক্সন।
প্রসঙ্গ, জর্জ ডব্লিউ বুশের নেতৃত্বে ইরাকে আগ্রাসন চালায় যুক্তরাষ্ট্র। বুশ সম্পর্কে জন নিক্সন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট যা শুনতে চেয়েছিলেন তিনি শুধু তা-ই শুনেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাদ্দাম হোসেনের কাছে জন নিক্সন জানতে চেয়েছিলেন, সৌদি আরবে ঘাঁটি গেড়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বিরুদ্ধে তিনি কি ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র (ডব্লিউএমডি) দিয়ে আগেভাগেই হামলা চালানোর কথা ভেবেছিলেন কিনা। এ বিষয়ে মেইল অন সানডে’তে জন নিক্সন লিখেছেন তার এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা কখনোই ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবি নি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনাই হয় নি। আর বিশ্বের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার? এমন কি কেউ আছেন যিনি এটা করার কথা ভাবতে পারেন? যখন তারা আমাদের বিরুদ্ধে এ জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করবে না তখন কে তা ব্যবহার করতে যাবে?
জন নিক্সন স্বীকার করেছেন ‘আমরা যা জানতে চেয়েছিলাম এটা সেই উত্তর ছিল না’। যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটিশ সরকার তখন ইরাক আগ্রাসনের পক্ষে যুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে এই ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের কথা। তারা বলে ইরাকের হাতে এই অস্ত্র রয়েছে। তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
এ পর্যায়ে সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এত বড় একটি ভুল বিচার করতে পারল! তারা শুধু কানকথা শুনেই এমন বিচার করেছে। প্রকৃত তথ্য তারা কখনোই বুঝতে চায় নি। ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের বিষয়ে গোয়েন্দাদের রিপোর্টই একমাত্র ভুল ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক হামলার সময়। জন নিক্সনের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইরাককে টার্গেট করেছে। এ জন্য জাতিকে হুঁশিয়ার করেছিলেন সাদ্দাম হোসেন।
জন নিক্সনকে সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, আপনারা ব্যর্থ হতে যাচ্ছেন। অচিরেই দেখবেন ইরাক শাসন করা অতোটা সহজ নয়।
কেন এমন বিশ্বাস আপনার? জন নিক্সনের এ প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, এটার কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ইরাকিদের বুঝতে পারেননি। কারণ, তারা ইরাকিদের ভাষা জানে না। ইরাকের মানুষের মনের চাওয়া পাওয়া, ইতিহাস এমন কি আবহাওয়া সম্পর্কে জানে না মার্কিনিরা।
সাদ্দাম হোসেনকে তার নিজ শহর তিকরিতের কাছ থেকে আটক করে আমেরিকান স্পেশাল ফোর্সেস। তার তিন বছর পর তার ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০০৬ সালে।
কিন্তু এর আগে সাদ্দাম হোসেন যে সতর্কতা দিয়ে গিয়েছেন তা যথার্থই। তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তার দেশ বিশৃংখলায় নিমজ্জিত। প্রায় দুই লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। এখন বৃহত্তর অর্থে ইরাককে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখা হয়।
সেখানে মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে সহিংসতা। উত্থান ঘটেছে আইসিসের মতো গ্রুপের। তারা বর্তমানে মসুল শহরে ঘাঁটি গেড়েছে। ১৩ বছর ধরে চলছে, কমপক্ষে ৫ হাজার মার্কিন সেনা এখনও অবস্থান করছে ইরাকে।
নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৬ : ৩০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ বৃহস্পতিবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur