নারী

প্রেম করে বিয়ে করেও ‘ঝামেলা’ সরাতে অভিনব কায়দায় স্ত্রী খুন

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক | আপডেট: ০১:৫৬ অপরাহ্ণ, ০৫ আগস্ট ২০১৫, বৃহস্পতিবার

দ্বিতীয় বিয়ের পর ‘ঝামেলা’ সরিয়ে ফেলতে ছয় বছর আগে নাম ভাড়িয়ে বিয়ে করা প্রথম স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে এক রঙমিস্ত্রিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জুয়েল বিশ্বাস নামের ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক তার প্রথম স্ত্রীকে হত্যার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ জোনের সহকারী কমিশনার আরএম ফয়জুল ইসলাম জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এক মাস ধরে অনুসন্ধানের পর মঙ্গলবার রাতে আমরা ধানমণ্ডি থেকে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করেছি।”

গত ৩০ জুন কামরাঙ্গীর চরের রসুলপুরের একটি ভবনের তৃতীয় তলা থেকে হাত-পা বাঁধা অর্ধগলিত এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়েই পুলিশ শেষ পর্যন্ত জুয়েলের কাছে পৌঁছায়।

পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুল ইসলাম জানান, ছয় বছর আগে মোহাম্মদপুরে এক বাসায় রঙের কাজ করার সময় ওই বাসার গৃহপরিচারিকা নাসিমা আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় জুয়েলের। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পরিবারকে না জানিয়ে নাসিমাকে বিয়ে করেন জুয়েল।

“জুয়েল শুরু থেকেই নাসিমার কাছে নিজের আসল পরিচয় গোপন করে আসছিলেন। তিনি বিয়ে করেছেন ইমন নামে; গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের পরিবর্তে বরিশাল বলেছিলেন। শ্বশুরবাড়িতেও ভুয়া নাম-পরিচয় বলেছিলেন।”

বিয়ের পর নাসিমাকে তার গ্রামের বাড়ি যশোরের কোতোয়ালির পালবাড়িতে পাঠিয়ে দেন জুয়েল। প্রতি মাসে দুই/তিনবার যশোরে শ্বশুরবাড়িতে গেলেও নাসিমাকে কখনো নিজের গ্রামের বাড়িতে নেননি তিনি।

প্রথম বিয়ের তিন বছর পর পারিবারিকভাবে সুমি নামে আরেকজনের সঙ্গে জুয়েলের বিয়ে হয়। সেই ঘরেও দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার।

জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল পুলিশকে বলেছেন, দুই বছর আগে দ্বিতীয় স্ত্রী সুমি তার প্রথম বিয়ের বিষয়টি টের পান। এক পর্যায়ে তার কাছে জুয়েল প্রথম বিয়ের কথা স্বীকারও করেন।

“তবে এখানেও তিনি (জুয়েল) মিথ্যার আশ্রয় নেন। সুমিকে তিনি বলেন, একটি ছেলে হওয়ার পর তার প্রথম স্ত্রী মারা গেছে। প্রথম স্ত্রীর এক আত্মীয় ছেলেটির দেখাশোনা করছে,” বলেন ফয়জুল ইসলাম।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীকে বলা মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করতে জুয়েল প্রথম স্ত্রী নাসিমাকে হত্যার পরিকল্পনার করেন।

“ছয় মাস আগেও একবার ঢাকায় এনে তাকে হত্যার চেষ্টা করেন জুয়েল; কিন্তু পারেননি। দ্বিতীয় চেষ্টায় তিনি সফল হন।”

সহকারী পুলিশ কমিশনার ফয়জুল জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার পর নাসিমাকে হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করেন জুয়েল।

“তিনি বলেন, ২৮ জুন রাতে ছেলে দিপু যখন ঘুমিয়ে ছিল, তখন নাসিমাকে ‘দুষ্টুমির ছলে’ হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। সকালে দরজায় তালা ঝুলিয়ে ছেলেকে নিয়ে গোপালগঞ্জে চলে যান।”

ওই বাসা থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে ভবনের অন্য বাসিন্দারা থানায় খবর দিলে ৩০ জুন পুলিশ দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। তখনো নাসিমার পরিচয় পুলিশের জানা ছিল না।

লাশ উদ্ধারের পর বাসার মালিক আনোয়ার হোসেন পুলিশকে জানান, ২৭ জুন এক যুবক তার স্ত্রী ও সন্তানসহ এসে জরুরিভিত্তিতে বাসা দরকার বলে ২২ শ’ টাকায় তৃতীয় তলার ঘরটি ভাড়া দেন।

ওই ভবনের তৃতীয় তলার এক বাসিন্দার কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, নিহতের গ্রামের বাড়ি যশোরের কোতোয়ালির পালবাড়িতে।

“সেই সূত্র ধরে যশোরে পুলিশে পাঠিয়ে জানা যায়, নিহত তরুণীর নাম নাসিমা আক্তার (২৫)। স্বামী ইমনের সঙ্গে ২৬ জুন রাতে ঢাকায় এসেছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়।”

এরপর শুরু হয় ইমনকে খোঁজা। কামরাঙ্গীরচরের ওই বাসায় ইমনের একটি ছবি পাওয়া যায়। আর নাসিমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে পাওয়া যায় তার ফোন নম্বর।

সেই মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে এক মাসের তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়, জুয়েল এবং ইমন একই ব্যক্তি। এরপর মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ধানমন্ডিতে তার ভাইয়ের বাসা থেকে।

ফয়জুল ইসলাম জানান, নাসিমা হত্যার ঘটনায় কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। যাচাইবাছাই ছাড়া বাসা ভাড়া দেওয়ায় বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

Share