ফরিদগঞ্জে প্রেম করে প্রতারণা শিকার যুবক

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে প্রেম করে প্রতারণা শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উল্টো আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে পারভীন আক্তার নামে এক নারীর বিরুদ্ধে। পারভীন আক্তার উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব গোবিন্দপুর গ্রামের গাজী বাড়ির আলী গাজীর মেয়ে।

সরেজমিন গিয়ে ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, পারভীন আক্তার ২০১৫ সালে একই বাড়ির কালাম গাজীর ছেলে রহিম হোসেন (২৮) এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ২০১৭ সালে রহিম কর্মের তাগিদে প্রবাসে পাড়ি জমায়। রহিম প্রবাসে থাকাকালীন পারভীনের সাথে মোবাইলে যোগাগোগ বজায় রাখে।

এরপর রহিম প্রবাসে থাকা কালিন অবস্থায় পারভীন আক্তার ২০১৮ সালে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহের হলফনামা তৈরি করে। ওই হলফনামায় রহিম ও তার পরিবারের কারো স্বাক্ষর নেই এবং রহিম ও তার পরিবারের লোকজন এব্যাপারে কিছুই জানতো না বলে জানাযায়। শুধূ তাই নয় এসময় পারভীন তার পরিবারের লোকজনকে জানায় রহিম মোবাইলে তাকে বিয়ে করেছে এবং প্রবাস থেকে ফিরে তাকে ঘরে তুলে নিবে। এরই ধারাবাহিকতায় পারভীন মোবাইলে রহিমের সাথে কথোপকথনের সময় তার পিতা আলী গাজী ও মা শিল্পী বেগমের সাথেও কথা বলার সুযোগ করে দেয়।

এদিকে, পারভীনের সাথে প্রেমের নেশায় মত্ত হয়ে রহিম তার পিতা কালাম গাজীসহ পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পারভীন আক্তার রহিমের কাছ থেকে বিগত ৪বছরে মোবাইলে ও বিকাশের মাধ্যমে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে রহিম অভিযোগ করেন।

কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে রহিম প্রবাস থেকে বাড়ি ফিরে এসে পারভীনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে পারভীন রহিমকে এড়িয়ে চলতে থাকে।

অপরদিকে, পারভীনের পিতা আলী গাজী থেকে ক্রয়কৃত সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে আলী গাজীও এড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে ন্যায় বিচার পেতে এলাকার গন্যমান্য ব্যত্তিদের দ্বারস্থ হয় রহিম গাজী।

এব্যাপারে কয়েকদফা সালিশ বৈঠক হলে আলী গাজী রহিমকে এক লক্ষ টাকা ফেরত দিতে রাজী হয়। পরে রহিম গাজী তার ন্যায্য পাওনা না পেয়ে বিগত ২৫ জানুয়ারী চাঁদপুরস্থ মোকাম বিজ্ঞ ফরিদগঞ্জ আমলী আদালতে পারভীন ও তার পিতা আলী গাজীকে বিবাদী করে দ; বি: ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। বর্তমানে মামলাটি সিআইডি পুলিশ তদন্ত করছে।

অপরদিকে, রহিম গাজী কতৃক মামলা দায়েরের প্রায় চার মাস পর গত ৯মে পারভীন আক্তার ও তার পরিবার নিজেদের অপরাধ ঢাকতে রহিম গাজীকে প্রধান বিবাদী করে রহিমের পিতা কালাম গাজী ও বড় ভাই জাকির হোসেন গাজীর বিরুদ্ধে চাঁদপুরস্থ মোকাম বিজ্ঞ বিচারিক আমলী আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করে। মামলায় পারভীন আক্তার নিজেকে রহিম গাজীর স্ত্রী দাবী করে ২০১৮ সালে ঢাকা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে অসম্পন্ন বিবাহের হলফনামাটি উপস্থাপন করে। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন তদন্ত করছে।

কিন্তু, মামলা দায়েরের পর পারভীন আক্তার ও তার পরিবারের লোকজন যখন বুঝতে পারে যে, মামলায় উপস্থাপিত ২০১৮ সালে ঢাকা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহের জন্য সম্পাদিত হলফনামাটিতে রহিম গাজী ও তার পরিবারের কারোরই স্বাক্ষর নেই। তাই তারা কীভাবে পরভীনের দায়েরকৃত মামলাটি দিয়ে রহিম ও তার পরিবারের লোকজনকে হয়রানী করা যায় সে ফন্দি আঁটতে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ মে রহিম গাজী বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার পথে পারভীন গংরা বহিরাগত ফিল্মি স্টাইলে জোরপূর্বক রহিমকে তুলে স্থানীয় কাজীর বাড়িতে একটি কাবিননামা সম্পাদন করে। শুধু তাই নয় পারভীন গংরা বহিরাগত মানুষ ভাড়া করে রহিম গাজীকে প্রাণনাশের ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩জুন বিকালে স্থানীয় গাজী বাড়ির মসজিদের সামনে রহিম গাজীকে একা পেয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি মারধর করে আহত করে।

এব্যাপারে অভিযুক্ত পারভীন আক্তার রহিম গাজীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্কে পর বিয়ে হয়েছে বলে স্বীকার করে জানায়, ২০১৮ সালে রহিম প্রবাসে থাকাবস্থায় মোবাইলে আমাদের বিয়ে হয়। সে সূত্র ধরে রহিম খরপোষ বাবদ টাকা দিয়েছে। কিন্তু প্রবাস থেকে ফিরে এসে স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি না দেয়ায় বাধ্য হয়ে মামলা দায়ের করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে পারভীন আরো জানায়, রহিম দেশে ফিরে আসার পরে ফরিদগঞ্জে ভাড়া বাসা নিয়ে একসাথে বসবাস করতে চাইলে আমি রাজী হইনি। কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, উভয়ের পারিবারিক সম্মতিতে আমাকে না দিলে আমি সংসার করবো না। আমাকে খরসের জন্য টাকা দিয়েছে। জমি ক্রয়ের জন্য না।

রহিম বলেন, পারভীনের সাথে আমার র্দীঘদিন প্রেমের সর্ম্পক ছিলো। তার সাথে মোবাইলে ফোনে আমার বিয়ে হয়েছে। দেশে এসে একসাথে সংসার করবো বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দেশে আসার পর সে আমার সাথে সংসার করবেনা বলে অস্বীকার করে। পারভিনের পিতা আলী গাজী তার নিজ নামীয় কতেক সম্পত্তি বিক্রয় করিবে বলে আমাকে প্রস্তাব দেয়। সম্পত্তির মূল্য ৪লক্ষ টাকা নির্ধারন করে পারভীন ও তার পিতা আলী গাজী। এমন প্রস্তাবে সম্পত্তি ক্রয় করতে আমি পারভীনের নামে ১লক্ষ ৩৩হাজার টাকা ও আলী গাজীর নামে ২লক্ষ ১৫হাজার আটশত ২০ টাকা প্রেরন করি। বাকী টাকা বাড়িতে এসে পরিশোধ করবো তাকে জানাই। কিন্তু সে আমার টাকা না দিয়ে উল্টো আমার বিরোদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আমাকে দিয়ে জোর পূর্বক কাবিন নামায় সাক্ষর করান।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৭ জুন ২০২২

Share