বিশেষ সংবাদ

প্রেম অস্বীকার : প্রেমিকাকে মেরে বিষপান করেছিলেন বিক্রম?

কালিয়াকৈরে দশম শ্রেণির ছাত্রী কবিতা রাণী দাসকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর বিক্রম চন্দ্র সরকার নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন পুলিশের কাছে। তবে তার বিষপানে আত্মহত্যা চেষ্টার কোনো আলামত পায়নি পুলিশ।

বখাটে বিক্রম আরো দাবি করেছেন, কবিতার সঙ্গে তার গত পাঁচ বছর ধরে প্রেম চলছিল। কয়েকদিন আগে কবিতা জানিয়ে দেয় সে বিক্রমের সঙ্গে আর প্রেম করবে না। এরপর বিক্রম সিদ্ধান্ত নেন কবিতাকে হত্যা করে নিজেও বিষপানে আত্মহত্যা করবেন।

বুধবার গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে কবিতা রাণী দাসকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বিক্রম চন্দ্র সরকার।

দুপুরে আদালতের বিচারক তাহমিনা খানম শিল্পির কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কবিতা রাণী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রাসেল জানান, কবিতাকে হত্যার পরে বিক্রম বিষপান করেছিল বলে জানিয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

এসআই রাসেল আরো জানান, ঘটনার পরই স্থানীয় লোকজন বিক্রমকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। তাকে গ্রেপ্তার করে বুধবার আদালতে পাঠানো হয়। সে আদালতে জানায়, কবিতার সঙ্গে তার পাঁচ বছর ধরে প্রেম চলছিল। কয়েকদিন আগে কবিতা তার সঙ্গে প্রেম না করার কথা জানিয়ে দেয়। এরপরই সে কবিতাকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে দাবি করেছে, কবিতা হত্যা করার পরে সে বিষপান করেছিল।

কবিতার স্বজনদের দাবি, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কবিতাকে হত্যা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে বিভিন্ন সময় বিক্রম কবিতার হাত ধরে টানা-হেঁচড়া ও উত্ত্যক্ত করে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। কয়েকবার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় বখাটে বিক্রম কবিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে জানানোর পরেই কেউ ব্যবস্থা না নেয়ায় হত্যাকাণ্ডের মতো পরিণতি হয়েছে বলে কবিতার পরিবারের দাবি।

কবিতার খালা রঞ্জনা রাণী জানান, মাস ছয়েক আগে স্কুলে যাওয়ার সময় বিক্রম কবিতার হাত ধরে টান দেয়। তার সঙ্গে যেতে বলে। ওই সময় কবিতা বই ফেলে দিয়ে হাত ফসকিয়ে বাড়িতে ফিরে এসে বাবা মাকে জানায়। তার বাবা-মা ও আমি মিলে ঘটনাটি স্থানীয় সূত্রাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ধীরেন্দ্রনাথকে জানাই। মেম্বার ধীরেন্দ্রনাথ বিষয়টি দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর মেয়েকে বিয়ে দিব কিনা সে ব্যাপারে জানতে চান। পরে এ নিয়ে আর কোনো কিছু জানাতে চাননি। কবিতা তার পরিবার ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার মাধ্যমে স্কুলে যাতায়াত করতো।

রঞ্জনা রাণী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইউপি সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ কোনো ব্যবস্থা নিলে আজকের এ ঘটনা ঘটত না। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর কবিতার দুই মামা রূপকুমার ও ভবেশ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়। কিন্তু বিক্রমের বড় ভাই বিপ্লব ও তার সহযোগিরা দুই মামাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে।

প্রসঙ্গত, কবিতা রাণী সূত্রাপুর ইউনিয়নের বোর্ডঘর এলাকার বিজয় সরণি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। গত ১৩ অক্টোবর দুপুর একটার দিকে স্কুল থেকে বের হওয়ার সময় গেটের সামনেই বিক্রম তার ওপর হামলা করে। বুকে, পেটে ও কাধে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করার পরে কবিতা ঢলে পড়ে। তার সহপাঠীরা ঘটনা দেখে দৌড়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। সহাপাঠী ও স্থানীয়রা তাকে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় কবিতা রাণীর বাবা ঢাকার ধামরাই উপজেলার রাবরাবন গ্রামের সাগর মণি দাস কালিয়াকৈর থানায় মামলা করেন। এতে ছোট কাঞ্চনপুর এলাকার রামপদ সরকারের ছেলে বিক্রম চন্দ্র সরকারকে অভিযুক্ত করা হয়। বিক্রম সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র।

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৯:০০ পিএম,১৪ অক্টোবর ২০১৫, বুধবার

 

এমআরআর

Share