ফিচার

প্রেমে রাজি না হলেই জীবন দিতে হবে?

এভাবে আর কত? মাদারীপুরের কালকিনিতে মানুষরূপী বর্বর পাষণ্ড পশু কর্তৃক ছুড়িকাঘাতে প্রাণ হারালো আরেক কিশোরী ছাত্রী নিতু মন্ডল। মাত্র ১৪ বছরের বালিকাটি বইয়ের ব্যাগ কাঁধে করে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো।

পথিমধ্যে ছুরিকাঘাতে একটি করুণ মৃত্যু! মেয়েটির অপরাধ ছিলো সে বখাটের প্রস্তাবিত প্রেম গ্রহন করেনি।

ফলাফলে, আরেকটি সম্ভাবনা মুকুলে জড়ে গেল। আরেকটি তারার অনাকাঙ্খিত পতনের স্বাক্ষী হলো মানুষের বিবেক। সমাজ বোধহয় এখন আর এসব শুনে কম্পিত হয়না, এতটুকুন লজ্জাও পায়না। সমাজের পরিচালকরা যখন নির্লজ্জ তখন সমাজের লজ্জা পেয়ে লাভ কি?

প্রেমে রাজি না হওয়ায় যে কথিত প্রেমিক প্রাণ নিতে পারে সেই প্রেমিকের আশ্রয়দাতা-লালনকর্তা-পালনকর্তা-রক্ষাকর্তা এই সমাজের মানুষগুলো। আক্রান্তের নয় বরং আক্রমনকারীর মাথার ওপর ছায়া ফেলেই এরা তৃপ্ত হয়।

শুধু একজন নিতু মন্ডল নয় বরং আরও অসংখ্য নিতুদের ভাগ্য কেবল দুর্ভাগ্যের লাল রঙে লিখে যায় কখনো ছুড়ি, কখনো এসিড আবার কখনো ঠান্ডা মাথার খুন-ধর্ষণে।

এইতো নিতুদের নিয়তি। জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং হুট করে চলে যাওয়া। পৃথিবীর নামক গ্রহের ভূপৃষ্ঠে অসংখ্য নিতু শ্রেণীর নক্ষত্রের মধ্যে দু’পাঁচটি নিতুর প্রস্থানে কার কি আসে যায়? কে ভাবে কিংবা মনে রাখে হতভাগ্য নিতুদের?
…..
মেয়েটির অপরাধ সে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। অপরাধ বটে! গুরুতর অপরাধ ! কিন্তু বখাটের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হলেই কি নিতু রক্ষা পেত? অন্য নিতুরা রক্ষা পায়?

পত্রিকার যে পৃষ্ঠায় নিতুর হত্যার খবরটি পড়লাম তার ঠিক পাশেই আরেকটি খবরে চোখ আটকে থাকলো বহুক্ষণ। হৃদের স্পন্দন থেমে ছিলো ক্ষণকাল।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ক্লোজার সী-বীচ এলাকায় ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণ এদেশের স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হতে যাচ্ছে কেননা ধর্ষকদের দৌরাত্ম্য ও প্রভাব রোধে এদেশের আইনের প্রয়োগ সন্তোষজনক ও যথাযথ নয়।

যে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কালকিনির নিতুকে খুন হতে হলে সেরকম অপরাধ কোম্পানীগঞ্জের হতভাগ্য মেয়েটি করেনি ! সে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি ছিলো। মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসত ছেলেটিকে।

কিন্তু নিতুর মত জীবন না হারালেও মৃত্যুর খুব কাছে বাস করছে মেয়েটি। হাসপাতালে বিছানায় যন্ত্রনায় কোঁকড়াচ্ছে শুধু। যে ছেলেটিকে সবচেয় বেশি বিশ্বাস করেছিলো তার বিশ্বাসঘাতকতায় মেয়েটি হয়ত আর কোনদিন কোন পুরুষকে বিশ্বাস করবে না, শ্রদ্ধার চোখে তাকাবে না। বন্ধুদের নিয়ে যে প্রেমিক প্রেমিকাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করতে পারে সে প্রেমিকের জাত যে বিশ্বাস রক্ষা করবে তার ভরসা আর কে নতুন করে দিতে পারবে?

এসবের প্রতিকার হওয়া দরকার। শুধু সংশোধনমূলক নয় বরং প্রতিশোধাত্মক ও প্রতিরোধাত্মক শাস্তিটাও এখন বড়বেশি জরুরী।

কালকিনির নিতু কিংবা কোম্পানীগঞ্জের হতভাগা মেয়েটির জন্য না হোক অন্তত আমাদের বোন, কন্যাদের নিরাপত্তার জন্য সকলকে একবার জাগতেই হবে। জাগা উচিত। আজও যদি চুপ থাকা হয় তবে সেদিন বোধহয় খুব বেশি দূরে হবে না যেদিন আমার/আমাদের আত্মীয়াদের খুন ও ধর্ষণের খবর দেশবাসী জানবে।

ধর্ষক ও খুনী মুক্ত একটি সমাজ গঠনের চিন্তা কি আমরা করতে পারি না? পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র যদি তদীয় দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করে তবে আমাদের চাওয়াটা অসম্ভবের চাদরবৃত্ত থাকবে না।

নারী-পুরুষ যেন বিশ্বাস এবং ভরসার পয়গাম নিয়ে পাশাপাশি অবস্থান করতে পারে তার বিহীত বিধান হওয়া জরুরী। এজন্য সবার সহযোগীতা, কঠোরতা ও দায়িত্ববোধ একান্ত কাম্য। যে পরিবার ধর্ষক লালন করে, খুনী পালন করে তাদের সাবধান হওয়া দরকার। কুকুরের প্রভূ জ্ঞান আছে বটে কিন্তু মানুষরূপী কুকুরগুলো বড়বেশি খতরনাক।

এদেরকে সময় থাকতে শোধরাতে না পারলে আপন-পরের কেউ এদের দংশন থেকে রক্ষা পাবে না, পায়নি কোনদিন।

রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।
fb.com/rajucolumnist/

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:২০ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ

Share