নিউজ ডেস্ক
মাইকেল গ্রেগরি, বাস ক্যালিফোর্নিয়া, বর্তমান বাস কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের সামনের ফুটপাত। কারণ ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে বাড়িঘর ছেড়ে সাত সাগর তেরো নদী পার হয়ে এসেছিলেন ইট-পাথরের সেই শহরে। সংসারও পেতেছিলেন। কিন্তু সময় আজ তাকে পথে বসিয়েছে। যদিও কমেনি ভালোবাসা।
গ্রেগরির সাথে ই-মেইলে পরিচয় হয় কলকাতার খিদিরপুরের মেয়ে রানীর। তার সাথে দেখা করতেই আট বছর আগে প্রথম কলকাতায় আসেন গ্রেগরি। তারপর প্রেম। গ্রেগরি থাকতেন একটি গেস্ট হাউসে। অনলাইন ডেটা এন্ট্রির কাজই তার মূল রোজগার ছিল। কিছুদিন পরই চার হাত এক হয় মাইকেল গ্রেগরি ও রানী ন্যান্সির। সুখের সংসার বাঁধেন রানীর খিদিরপুরের বাড়িতেই।
সেই সুখে যবানিকা পড়লো কদিন পরই। মারা যান রানীর বাবা-মা। রোজগারও কমে যায় গ্রেগির। হিপ্পিদের মতো পথে ঘুরেই জীবন কাটাচ্ছিল তারা। অভাব ছিল কিন্তু ভালোবাসা অচ্ছেদ্য।
রানী ন্যান্সি জানান, ৫১ বছরের মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে ই-মেলের মাধ্যমে আলাপ হয় তার। পত্রালাপের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতাও বাড়তে থাকে। ভারতে এসে রানীর সঙ্গে দেখা করতে চান মাইকেল। চলেও আসেন। আর প্রথম দেখাতেই প্রেম। শুরুতে মাইকেল থাকতে শুরু করেন সদর স্ট্রিটের একটি গেস্ট হাউসে। অনলাইন ডেটা এন্ট্রি করে চালিয়ে নিচ্ছিলেন খরচ। এর মাঝেই বিয়ে করে ফেলেন দু’জনে। বিয়ের পর রানীর খিদিরপুরের ভাড়া বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন দু’জনে। পরিকল্পনা ছিল, আগামী দিনে কলকাতারই অন্য কোথাও বাড়ি নিয়ে পাকাপোক্ত ভাবে ভালোবাসার বাসা বাঁধবেন তারা।
কিন্তু বছর দেড়েক আগে রানীর মা-বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়িওয়ালা তাদের উচ্ছেদ করতে চায়। কিছুটা বাধ্য হয়েই মালিকের দাবি মেনে ভাড়া বাড়ি ছাড়েন তারা। বিনিময়ে অবশ্য বাড়িওয়ালা ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু টাকা দেন তাদের। এরপর আবার স্ত্রীকে নিয়ে মাইকেল সদর স্ট্রিটের একটি গেস্ট হাউসে থাকা শুরু করেন। কিন্তু সামান্য ডেটা এন্ট্রির আয়ে আর সংসার চলছিল না। এরপরই তারা সিদ্ধান্ত নেন, ষাটের দশকের হিপ্পিদের মতো তাদেরও ঠিকানা হবে ফুটপাতে। গত পাঁচ মাস ধরে এ ভাবেই ওদের রাত কেটেছে। কখনো হাওড়া স্টেশন, কখনো বিবাদী বাগ, কখনো ময়দান চত্বরে ফ্লাইওভারের নীচে। তা সত্ত্বেও তারা কখনো একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি।
আগস্টের শুরুতে হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়েন মাইকেল। তাই তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিত্সকরা মেডিসিন বিভাগে ভর্তির পরামর্শ দেন। ১৮ তারিখ ম্যাকেঞ্জি ওয়ার্ডে ভর্তি হন মাইকেল। কিন্তু আচমকাই ৫ সেপ্টেম্বর মাইকেলকে ছুটি দিয়ে দেন চিকিত্সকরা। দীর্ঘদিন একটা বেড আটকে রাখা তো সম্ভব নয়! এছাড়া বাড়িতে থেকেই এখন চিকিত্সা সম্ভব।
বাড়ি তো নেই। নিরাশ্রয় দম্পতির ঠিকানা তাই আবার সেই ফুটপাত। হাসপাতালের সামনের সিমেন্টের একটি বেঞ্চ। তবে আশার আলোর সন্ধানে ন্যান্সি ঘুরে বেরিয়েছেন চার্চে, মিশনারিজ অফ চ্যারিটি, এমনকি মার্কিন কনসাল জেনারেলের অফিসেও
। কিন্তু সাহায্য পাননি কারও।
কঠিন জন্ডিসে আক্রান্ত মাইকেল তার ভালোবাসার কোলে মাথা রেখে ফুটপাতে মৃত্যুর অপেক্ষায়। এ প্রেম কাহিনী হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যস্ত শহরের ভীড়ে।