কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় মুহিন নামে এক কলেজছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর প্রেমিকার সঙ্গে কলেজছাত্রের একান্ত কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। পরে এসব ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। একই সঙ্গে প্রেমিকার বাবা ও ভাইয়েরা কলেজছাত্রকে হত্যা করেছে বলে ঘটনার চারদিন পর অভিযোগ তুলেছে মুহিনের পরিবার। তবে প্রেমিকার পরিবারের দাবি, বিষপানে আত্মহত্যা করেছে মুহিন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে মুহিনের মা সুরাইয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে মুহিনকে হত্যা করেছে তারা। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। তার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য আগামী রোববার আদালতে আবেদন করব।
নিহত মুহিন উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের চুলাশ গ্রামের সৌদিপ্রবাসী আবুল হাশেমের ছেলে। স্থানীয় রাজামেহার ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি কলেজ থেকে এইচএসসিতে এক বিষয় ফেল করায় এবার ওই বিষয়ের পরীক্ষার্থী ছিল মুহিন। তার প্রেমিকা একই ইউনিয়নের বেতরা গ্রামের আবুল হাশেম বেপারীর মেয়ে এবং স্থানীয় মরিচা ছায়েদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
মুহিনের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মুহিন ও ওই স্কুলছাত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। উভয়ের প্রেম নিয়ে প্রেমিকার পরিবার একাধিকবার মুহিনকে মারধর করেছে।
নিহতের পরিবার ও মুহিনের বন্ধুরা জানান, গত শনিবার (১৮ জুলাই) রাতে মুহিন ও তার প্রেমিকা পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। বিষয়টি তার পরিবার জানতে পেরে ঘটে যায় বিপত্তি। রাত পৌনে ১০টার দিকে তার বড় ভাই মেহেদি হাসান মুহিনের খালাতো ভাই আবু তাহেরের কাছে ফোন করে বলেন, ‘তোর ভাই আমাদের বাড়িতে এসে বিষ খেয়েছে, তারে হাসপাতালে নিয়ে যা’।
নিহতের খালাতো ভাই আবু তাহের বলেন, প্রেমিকার বড় ভাই মেহেদির ফোন পেয়ে রিয়ার বাড়িতে আসি, এসে দেখি মুহিন রিয়ার বাড়ির পেছনের পাকা সড়কে দুই পা ও হাঁটু গেড়ে মাথা নিচের দিকে ঝুঁকে বসে আছে। এ সময় তাকে খুব অসুস্থ দেখা গেছে। পাশে তার বাবা ও তার দুই ভাই মেহেদি ও জামাল দাঁড়িয়ে আছে। সিএনজিতে মুহিনকে ওঠানোর জন্য মেহেদি ও তার বাবাকে বলার পরও তারা কেউ এগিয়ে আসেননি। হাসপাতালে নেয়ার পথেই মুহিনের মৃত্যু হয়। মুত্যুর সময় তার মুখে বিষের কোনো গন্ধ পাওয়া যায়নি।
মুহিনের দাফন-কাফনকারী মাওলানা আবদুল জলিল বলেন, মুহিনের অণ্ডকোষ লাল ফুলা ছিল। তার মুখ থেকে বিষের গন্ধ বা মুখ থেকে লালা বের হয়নি। শরীরের অন্য কোথায়ও আঘাত দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানায়, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিহত মুহিনের স্বজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য করান। চারদিন পর মুহিনের ফোন থেকে মুহিন ও প্রেমিকার একান্ত কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মুহিন ও তার প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। সেই সঙ্গে ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
নিহত মুহিনের বন্ধু মিনহাজ বলেন, ৫-৬ মাস আগে তাকে উত্ত্যক্তের অভিযোগে মরিচা ছায়েদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে মুহিনকে মারধর করেন তার ভাইয়েরা। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় লিখিত একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে মুহিনকে ছাড়িয়ে আনেন তার মা। এরপর থেকে তার ভাইয়েরা তাকে বিভিন্ন সময়ে মারধরের হুমকি দিয়ে আসছিল।
প্রেমিকা মুহিনের সঙ্গে প্রেমের কথা স্বীকার করে বলেন, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো আমাদের একান্ত মুহূর্তের। মুহিন আমাকে বাড়ি থেকে পালানোর জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দিয়েছে। আমি তার সঙ্গে না পালালে আমার বাড়িতে এসে আত্মহত্যা করবে বলে আমাকে একাধিকবার বলেছে। ওই দিন রাতে কি ঘটেছে এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যায় সে।
তার সহপাঠী সুমি আক্তার জানায়, মুহিন ও রিয়ার মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একে-অপরকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু কি থেকে কি হয়েছে আমরা বিষয়টি বুঝতেছি না।
এ ব্যাপারে প্রেমিকার বাবা আবুল হাশেম বেপারী বলেন, তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা আমার জানা নেই। তবে মুহিন আমাদের বাড়িতে এসে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে।
মুহিনের মা সুরাইয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে মুহিনকে তার বাবা ও ভাইয়েরা হত্যা করেছে। এর আগেও আমার ছেলেকে কয়েকবার মেরেছে তারা। ঘটনার পরদিন হুমকি দিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই এবং পুলিশকে না জানিয়ে মরদেহ দাফনে বাধ্য করা হয়। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য আগামী রোববার আবেদন করব। আমি ন্যায়বিচার চাই।
দেবিদ্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল আনোয়ার বলেন, মুহিনের মৃত্যুর খবর কেউ থানায় জানায়নি। বিষয়টি জানালে তার অবশ্যই ময়নাতদন্ত করা হতো। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থেকে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা এলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বার্তা কক্ষ,২৪ জুলাই ২০২০