Wednesday, 27 May, 2015 11:51:58 PM
চাঁদপুর টাইমস, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের নালাপাড়ায় মা ও মেয়েকে গলা কেটে হত্যার ২০ দিন পর আটক নিকটাত্মীয় বেলাল (২২) স্বীকার করেছে বিয়ের টাকা জোগাড় করতে তাদের খুন করে।
হত্যাকারী বেলাল কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর ইউনিয়নের কোরবানপুর গ্রামের মনা মিয়ার ছেলে। পেশায় টিউবওয়েল মেরামতকারী। বেলাল নাসিমার স্বামী মাংস বিক্রেতা শাহআলমের খালাত ভাই।
বুধবার সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান বলেন, ‘ফারজানা নামের এক মেয়ের সঙ্গে বেলালের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ফারজানাকে বিয়ে করার জন্য জরুরিভাবে বেলালের কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। এজন্য শাহআলমের বাসায় চুরির পরিকল্পনা করে বেলাল। চুরি করতে গিয়ে দু’জনকে বেলাল খুন করেছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিয়ের খরচ জোগাড় করতে বেলাল টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরির পরিকল্পনা করে। ঘটনার তিনদিন আগে রাতেও সে শাহ আলমের বাসায় ছিল। তিনদিন আগে শাহ আলমের দোকানে টিউবওয়েল মেরামত করতে যায়। মেরামতের এক পর্যায়ে সে দোকান থেকে একটি ছুরি নিয়ে একটি ডাস্টবিনের পাশে লুকিয়ে রাখে। ঘটনার দিন (৭ মে) সকাল ৯টার দিকে বেলাল কালো শার্ট-প্যান্ট পরে ছুরি কোমড়ে বেঁধে শাহআলমের বাসার সামনে যায়। দুই ছেলে হৃদয় ও রিয়াদ স্কুলে যাবার পর সে বাসায় ঢুকে। এসময় নাসিমা রান্নাঘারে এবং রিয়া ঘুমাচ্ছিল।নাসিমা তাকে দেখে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে বেলাল তাকে পেটের মধ্যে ছুরিকাঘাত করে। এসময় নাসিমা বেলালের চুলের মুঠি ধরে ফেলে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নাসিমা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বেলাল তার শরীরের উপর বসে তাকে গলা কেটে খুন করে।এর আগেই নাসিমার চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায় রিয়ার। সে উঠে ড্রইংরুমে এলে তাকে বাথরুমে নিয়ে জবাই করে বেলাল। এরপর চাবি দিয়ে স্টিলের আলমিরা খুলে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও এক ভরি তিন আনা স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায় বেলাল। এছাড়া নাসিমার দু’টি মোবাইল সেটও নিয়ে যায় সে।
দু’টি মোবাইলের মধ্যে একটি বেলাল তার বান্ধবী ফারজানাকে উপহার দেয়। আরেকটি বন্ধু আশরাফুল আলম ভূঁইয়ার কাছে রাখে। পুলিশ দু’টি মোবাইল ফোন ওই দু’জনের কাছ থেকে উদ্ধার করে। দু’জনই পুলিশকে জানায়, মোবাইল ফোনগুলো তারা বেলালের কাছ থেকে পেয়েছে। এতে খুনের সঙ্গে বেলালের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়।
এদিকে বেলাল হত্যাকান্ডের পর সেলুনে গিয়ে চুল-দাঁড়ি কাটে। শাহআলম তাকে ফোনে হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানানোর পর সে ওই বাসায় গিয়ে লাশগুলো নামায়। এরপর সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে।
স্বর্ণালংকারগুলো বেলাল ৩৯ হাজার টাকায় বাকলিয়ার মৌমিতা জুয়েলার্স নামে একটি দোকানে বিক্রি করে। পুলিশ ওই দোকানের মালিক টিটু সাহাকে গ্রেপ্তার করেছে। চোরাই স্বর্ণ কেনার অভিযোগে টিটু সাহা’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার এস এম তানভির আরাফাত জানান।
স্বর্ণ বিক্রির টাকা দিয়ে বেলাল একটি টেলিভিশন, একটি ডিভিডি প্লেয়ার, দু’টি সাউন্ড বক্স কিনে। পুলিশ সেগুলোও উদ্ধার করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে শাহআলম তার দুই ছেলেকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার স্ত্রী আর মেয়েকে যে নিষ্ঠুরভাবে বেলাল খুন করেছে, তার চেয়েও যেন নিষ্ঠুরভাবে তাকে মারা হয়। আমি তার শাস্তি চাই।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার গভীর রাতে নগরীর সদর ঘাট এলাকা থেকে বেলালকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৭ মে দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকার ছয় তলা একটি বাড়ির চতুর্থ তলার বাসায় স্থানীয় মাংস বিক্রেতা শাহ আলমের স্ত্রী নাসিমা বেগম (২৮) ও তাদের মেয়ে রিয়া আক্তার ফাল্গুনীর (১০) গলা কাটা লাশ পাওয়া যায়।
চাঁদপুর টাইমস/ডিএইচ/2015
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে ক্লিক লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।