শান্তিবাগে মো. জামাল উদ্দিনের ভাড়া বাসাটি এখন শোকে মুহ্যমান। মেয়েকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পরিবারের চোখেমুখে রাজ্যের বিষণ্নতা ভর করলেও নেই কোনও অভিযোগ। এভাবে মেয়েকে হারাতে হবে কে ভেবেছিল! দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত সামিয়া আফনান প্রীতির পোষা বিড়ালটিও চুপচাপ। প্রীতির পড়ার টেবিলটিও পড়ে আছে সাজানো গোছানো। পানি খাওয়ার প্রিয় মগটিও সযত্নে টেবিলের ওপর। প্রীতির মা-বাবা জানেন, আর কেউ এই মগে পানি খাবে না। আর কেউ পড়তে বসবে না এই টেবিলে।
শনিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে শান্তিনগরের বাসাটিতে গিয়ে দেখা গেলো প্রীতির বাবা-মা অবসন্ন, ক্লান্ত শরীরে বসে আছেন। কাঁদার শক্তিও আর অবশিষ্ঠ নেই যেন। কিছুক্ষণ পরপর আসছেন সংবাদকর্মীরা। পরিচিতরাও সান্ত্বনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বাবা-মার মনে যে নীরব ঝড় বয়ে চলেছে, সেটা বাইরে থেকে কেই-বা বুঝবে। এ ক্ষত যে কোনোদিন সারার নয়।
শান্তিবাগের বাসায় হতাশা নিয়ে প্রীতির বাবা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, এত কষ্টে মেয়েটাকে বড় করলাম। এভাবে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। যে ক্ষত তৈরি হলো বাকি জীবন সেটা নিয়েই কাটাতে হবে। প্রীতি খুব আদরের ছিল।
অশ্রুসজল কণ্ঠে প্রীতির বাবা একফাঁকে জানালেন, টানাপোড়েনের সংসার। আগামী মাসে মেয়েটার একটা চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সে ভেবেছিল সংসারে অবদান রাখবে। পরিবারে স্বচ্ছলতা আনবে। মেয়েটার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না।
আলাপচারিতায় তিনি বলেন, আমার মেয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এমন ঘটনা যেন আর কোনও মা-বাবার সন্তানের সঙ্গে না ঘটে। আমার এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়েটা ছিল বড় আদরের। সংসারটাকে হাসি-আনন্দে মাতিয়ে রাখতো।
তিনি আরও বলেন, ‘মিরপুরের একটি প্লাস্টিক কারখানায় চাকরি করি। প্রতিদিন সকাল আটটায় বের হই। ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে দশটা এগারোটা বাজে। সন্তানদের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু এক সন্তান এভাবে চলে গেলো।’
অশ্রুসজল প্রীতির মা হোসনে আরা বলেন, কষ্টের সংসারে ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালোই ছিলাম। মেয়েটা বলতো, সে চাকরি পেলে আমাদের আর চিন্তা থাকবে না।’ এরপর মেয়ের সাথে মোবাইলে শেষ কথার বিষয়টিই বারবার বলতে থাকেন। একপর্যায়ে মূর্চ্ছাও যান তিনি। (বাংলা ট্রিবিউন)