দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর হতে যাচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মলন। ২৫ নভেম্বর শুক্রবার হাজীগঞ্জ পৌরসভার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ঠিক একদিন পর শনিবার হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সন্মেলন।
দীর্ঘ বছর পর অনুষ্ঠিত সন্মেলনকে ঘিরে ইতিমধ্যে সাধারন নেতাকর্মীদের মাঝে শুরু হয়েছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। আসলে কিভাবে হবে সন্মেলন, কে হবেন পরবর্তী সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। ত্রিণমূলের ভোটাভোটি হবে নাকি কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষনা দেয়া হবে না সন্মেলনে হট্টোগোল হবে এমন নানা প্রশ্ন ইতিমধ্যে জন্মনিয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে। আইনশৃঙ্খলার প্রতি দলীয় নেতাকর্মীরা কতটুকু সহনশীল থাকবে এমনটাই এখন দেখার বিষয়। কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ প্রস্তত রাখবে বলে জানিয়েছেন অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ।
এদিকে আওয়ামী লীগের সন্মেলনে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে এক ঝাঁক প্রার্থী রয়েছেন। এই সন্মেলনে ৩০ হাজার নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটনা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক গাজী মাঈদুদ্দিন। আসছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন চাঁদপুর- কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে পৌর বাস টার্মিনালে উক্ত সন্মেলন ঘিরে বিশাল প্যান্ডেল করা হয়েছে।
এখানেই আজ বাদে কাল ৩০ হাজার নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটনো হবে। চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সমাবেশ স্থল হওয়ার কারনে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় সড়কটিতে যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। সমাবেশে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় অনেক নেতা বক্তব্য রাখবেন।
সন্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের ছাপানো পোস্টার দেখা যায়, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, সন্মানিত অতিথি হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি, বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ছাঈদ আল মাহমুদ স্বপদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ত্রান ও সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। সন্মেলনের উদ্ধোধক থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ। প্রধান বক্তা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নাঈম পাটোয়ারী দুলাল। আরো বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য ড. একেএম শামছুল হক ভূইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইফসুফ গাজী। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব হেলাল উদ্দিন মিয়াজী এবং সঞ্চালনা করবেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মাঈনুদ্দিন।
সম্ভাব্য সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব হেলাল উদ্দিন মিয়াজী, আলহাজ্ব আশফাকুল আলম চৌধুরী, রোটা. আলহাজ্ব আহসান হাবীব অরুন, আলী আশ্রাফ দুলাল, ইঞ্জিনিয়ার সফিকুর রহমান, জাকির হোসেন মিয়াজী।
সাধারন সম্পাদক পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো.জসিম উদ্দিন, গোলাম ফারুক মুরাদ, শাহাদাত হোসেন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সত্য ব্রত ভদ্র মিঠুন।
এদিকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানা যায় উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি বিল্লাল হোসেন গাজী।
সাধারণ সম্পাদক পদে উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম মামুন এবং পৌর যুবলীগের আহবায়ক হায়দার ভারভেজ সুজনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এসব সন্মেলন ঠিক কিভাবে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হবে তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। ভোটাভোটি হবে নাকি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সভাপতি সাধারন সম্পাদক ঘোষনা করবেন এ নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার হাজার হাজার নেতাকর্মী এ নিয়ে রয়েছে চরম দ্বিধাবিভক্ত। তবে নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই চায় তাদের নেতা নির্বাচিত হউক ভোটাভোটিতে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, প্রায় ১০ বছর পরে হতে যাওয়া উক্ত সন্মেলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিলেও সাধারন কর্মীদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। ঠিক কি হবে সন্মেলনকে ঘিরে। পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে নেতাদের পক্ষে বিপক্ষে যদি হাঙ্গামার সৃষ্টি হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা কতোটা সহনশীল মনোভাবে থাকবে। তবে নতুন পদ ঘোষনা নিয়ে একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা কেউ উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
এবারের সন্মেলনে ভোটার হয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এমন বেশ কয়েক জন আওয়ামীলীগের নেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা চাই সন্মেলনটি ভোটের মাধ্যমে হউক। এতে করে আমাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। এতো বছর পর সন্মেলন হচ্ছে ভোট দিতে না পারলে কি আর মজা আছে। এই সকল ভোটাররা আরো জানান, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রার্থী মোবাইল ফোনে কিংবা সরাসরি দেখা করে দোয়া আর ভোট ছেয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিন জানান, আমরা ৩০ হাজার নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটাবো। অপর এক প্রশ্নে তিনি আর কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ জানান, আওয়ামী লীগের সন্মেলনকে ঘিরে আমরা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করার পরিকল্পনা করেছি। অনাকাঙ্খিত যেকোন ঘটনা রুখে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা চাই অশান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হবে।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়,২৪ নভেম্বর ২০২২