>> বৈষম্যের আশঙ্কা পরীক্ষার্থীদের
>> সর্বোচ্চ আবেদন চট্টগ্রাম জেলায়
>> কোন জেলায় কবে পরীক্ষা, জানা যাবে আগামী মাসে
>> প্রশ্নের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না : অতিরিক্ত সচিব
>> একসঙ্গে সব জেলার ফল প্রকাশ করা হবে না
>> এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে অন্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব দেয়া হবে
প্রথমবারের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা জেলাভিত্তিক পৃথক প্রশ্নে নেয়া হবে। যেসব জেলায় ৫০ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে সেসব জেলার পরীক্ষা কয়েক ধাপে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
একই জেলার আবেদনকারীদের কয়েক ধাপে আলাদা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার এ সিদ্ধান্তের কারণে চাকরীপ্রার্থীরা বৈষম্যের আশঙ্কা করছেন। একই সময়ে জেলাভিত্তিক একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারীরা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, আগামী ১৫ মার্চ থেকে ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮’ পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় কয়েক ধাপে পরীক্ষা নেয়া হবে। ৫০ হাজারের বেশি যেসব জেলায় আবেদন জমা পড়েছে সেসব জেলায় কয়েক ধাপে পরীক্ষা নেয়া হবে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে সভা করে কোন জেলায় কবে পরীক্ষা হবে তা নির্ধারণ করা হবে।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারী একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, একই জেলা ও উপজেলার চাকরিপ্রার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আলাদা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হলে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। কারোর প্রশ্ন সহজ হবে। আবার কারোর কঠিন প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে হবে। উত্তরপত্র মূল্যায়নে কেউ এগিয়ে যাবেন। আবার কেউ পিছিয়ে পড়বেন, চাকরি বঞ্চিত হবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে মানসম্মত প্রশ্ন তৈরি করা হবে। প্রশ্নের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না। এ ছাড়া একাধিক প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ থাকবে না। তবে আসন সংকুলান হলে একই জেলার পরীক্ষা একই সময়ে একই প্রশ্নে নেয়া হবে।
অপরদিকে জানা গেছে, এবার পরীক্ষার কক্ষে পরিদর্শক নিয়োগের ক্ষমতা কেন্দ্র প্রধানের থাকছে না। এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে অন্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব দেয়া হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কক্ষ পরিদর্শকদের শুধু দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন কেন্দ্রপ্রধান। এবার একসঙ্গে সব জেলার ফল প্রকাশ করা হবে না। যেসব জেলার পরীক্ষা আগে শেষ হবে সেসব জেলার লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে পর্যায়ক্রমে মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করা হবে এবং ফল প্রকাশ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার নিয়োগ পরীক্ষা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে নেয়া হবে। নির্ধারিত জেলায় পরীক্ষার আগের রাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে প্রশ্নপত্রের সব সেট পাঠানো হবে। পরীক্ষার দিন সকাল ৮টায় প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে তা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে। পৌর এলাকার মধ্যে এবার পরীক্ষা নেয়া হবে। আবেদনকারীর আসন বুয়েটের অত্যাধুনিক সফটওয়ারের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেবে। একই সঙ্গে আবেদনকারীর আসন বণ্টন অনুযায়ী প্রশ্নের সেট নির্ধারণ করে দেবে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার ২০ সেট প্রশ্ন তৈরি করা হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, পরীক্ষা পদ্ধতি ডিজিটালাইজড করতে আমরা বুয়েটের সহায়তায় একটি আধুনিক সফটওয়্যার তৈরি করেছি। সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর সিটবিন্যাস, কক্ষ পরিদর্শক নির্বাচনসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ জুলাই ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ১ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম শেষ হয়। ১২ হাজার আসনের বিপরীতে সারাদেশ থেকে মোট ২৪ লাখ ৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। সে হিসাবে প্রতি আসনে লড়বেন ২০০ জন।
কোন জেলায় কত আবেদন
ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, এবার সর্বোচ্চ আবেদন জমা পড়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। এ জেলায় মোট ৯৮ হাজার ৯৬৯টি আবেদন পড়ে। এরপরে ময়মনসিংহ জেলায় ৮৮ হাজার ২১৮টি, কুমিল্লায় ৮৪ হাজার ৭২৮টি, দিনাজপুরে ৬২ হাজার ৯৭১টি, রংপুরে ৫৯ হাজার ৭১টি, জয়পুরহাটে ১৮ হাজার ১৭৮টি, বগুড়ায় ৬৪ হাজার ৭২৭টি, জামালপুরে ৫০ হাজার ৫০টি, যশোরে ৫৫ হাজার ৯৩২টি, টাঙ্গাইলে ৬১ হাজার ৬৩০টি, নওগাঁয় ৪৯ হাজার ৮৬৩টি, রাজশাহীতে ৫৭ হাজার ৩৮২টি, ঢাকায় ৬৪ হাজার ৫৫৮টি, বরিশালে ৬১ হাজার ৮৮৩টি, সিলেট জেলায় ৫০ হাজার ৩৭০টি আবেদন জমা পড়েছে।
এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩০ হাজার ২৭১টি, নাটোরে ৩৫ হাজার ২৫৭টি, সিরাজগঞ্জে ৫৮ হাজার ১৪৯টি, পাবনায় ৫১ হাজার ২৩১, কুষ্টিয়ায় ৩২ হাজার ৬০৯টি, মেহেরপুরে ১০ হাজার ৮৮৮টি, চুয়াডাঙ্গায় ১৮ হাজার ৬৬১টি, ঝিনাইদহে ৩৭ হাজার ৬১৭টি, মাগুরায় ২১ হাজার ৯৬২টি, নড়াইলে ১৫ হাজার ৬১৪টি, সাতক্ষীরায় ৪৫ হাজার ৬১টি, খুলনায় ৪৭ হাজার ১৮৮টি, বাগেরহাটে ৩২ হাজার ৯৭টি, শেরপুরে ২৫ হাজার ৪৬৬টি, নেত্রকোনায় ৪২ হাজার ৭৫৩টি, কিশোরগঞ্জে ৪৭ হাজার ৮৮৫টি, গাজীপুরে ৩৫ হাজার ৫১৭টি, নরসিংদীতে ৩৮ হাজার ১৪৩টি, মানিকগঞ্জে ২৫ হাজার ৭১১টি, নারায়ণগঞ্জে ২৭ হাজার ১২৭টি, মুন্সিগঞ্জে ১৮ হাজার ৭৫৯টি, রাজবাড়ীতে ২১ হাজার ৯০৬টি, ফরিদপুরে ৩৩ হাজার ৬৪৩টি, মাদারীপুরে ২৪ হাজার ৮০৭টি।
শরীয়তপুরে ১৮ হাজার ৭৮৬টি, গোপালগঞ্জে ২৯ হাজার ২১৫টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ হাজার ৪০টি, চাঁদপুরে ৪৬ হাজার ৯১টি, লক্ষ্মীপুরে ২৩ হাজার ৩৩০টি, নোয়াখালীতে ৪০ হাজার ৭৩৯টি, ফেনীতে ২১ হাজার ৫০১টি, কক্সবাজারে ২৬ হাজার ৭৫০টি, পিরোজপুরে ২৯ হাজার ২৭৮টি, ঝালকাঠিতে ১৯ হাজার ১৩৮টি, বরগুনায় ২১ হাজার ৭১৭টি, পটুয়াখালীতে ৪০ হাজার ৮০৭টি, ভোলায় ২৫ হাজার ১৪৫টি, সুনামগঞ্জে ৩৫ হাজার ৫১২টি, হবিগঞ্জে ৩৩ হাজার ৪৭৫টি, মৌলভীবাজারে ৩২ হাজার ১০৬টি, পঞ্চগড়ে ২১ হাজার ৬২৯টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩১ হাজার ৭৯৭টি, নীলফামারীতে ৩৯ হাজার ৭৫২টি, লালমনিরহাটে ২৬ হাজার ১২২টি, কুড়িগ্রামে ৪৩ হাজার ২৯৪টি এবং গাইবান্ধায় ৫৫ হাজার ৫১৭টি আবেদন পড়েছে। (জাগো নিউজ)
৩০ জানুয়ারি,২০১৯