শান্তির আর সম্প্রীতির গ্রাম হিসেবে পরিচিত পদ্মা-মেঘনা বেষ্টিত চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নটি ক্রমেই অসান্ত আর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সামান্য একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১ মাস ধরে ইউনিয়নটিতে বকাউল ও গাজী বংশের মাঝে সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা এবং ডাকাতি আর শেষত মৃত্যু পর্যন্ত গড়িয়েছে।
তবে মৃত্যুর মধ্যদিয়ে সংঘর্ষ থেমে গেলেও সম্প্রতি আবার নতুন পন্থায় শুরু হয়েছে শোধ-প্রতিশোধ খেলা। এই মৃত্যুকে পুঁজি করে প্রতিশোধের মোড়কে গেলো এক সপ্তাহে প্রতি রাতেই চলছে ডাকাতি আর লুটপাটের ঘটনা। এখন পর্যন্ত অসহায় চরবাসীর জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম প্রায় ২০০ গরু-ছাগল ডাকাতি করে নিয়ে গেছে সুবিধাবাদী একটি পক্ষ। শুধু তাই নয়, মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে পুরুষশূণ্য দুটি গ্রামের অসহায় নারীদের উপর শারীরিক নির্যাতনের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। যা উল্লেখিত ইউনিয়নের অতিত ইতিহাসে কখনোই ছিলো না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত পরকীয়া প্রেম এবং একটি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষ চলছে। দুলাল মাঝী স্ত্রী’র পরকিয়া প্রেমকে কেন্দ্র করে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এটিকে কেন্দ্র করেই দুটি পরিবারের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি হয়। যা বাড়তে বাড়তে সংঘর্ষ এবং খুনাখুনিতে রুপ নিয়েছে। সর্বশেষ গত ২৮ মে সংঘর্ষে লোকমান গাজী (৬০) এবং মোহাম্মদ বকাউল সহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঘটনার
৯ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় লোকমান গাজী মারা যায়। অপরদিকে আহত মোহাম্মদ বকাউল ১১৮টি সেলাই নিয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে এখনো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
এদিকে ডাকাতি এবং লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে আসমা বেগম নামের এক নারী ইউপি সদস্য পারভেজ রণিকে প্রধান করে শরবত আলী গাজী, হারুন গাজী, মমিন আলী হাজী, মনি গাজী, দিদার গাজী, ফয়সাল গাজী, মরন আলী গাজীসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, গত কয়েক দিনে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের শিলারচর এবং লগ্মির চরে ৫০টি পরিবারের বাড়ি থেকে প্রায় ২০০টি গরু-ছাগল ডাকাতি করে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। শুধু গরু-ছাগল ডাকাতিই নয়, পুরুষশূণ্য ঘরগুলোতে লুটপাটসহ নারীদের শ্লিলতাহানি করা হচ্ছে। অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত ডাকাতির শিকার হওয়া অসহায় পরিবারগুলো হলেন, সিদ্দিক মাল, ইয়াকুব বকাউল, ইসমাইল বকাউল, বিল্লাল বকাউল, শহীদ বকাউল, আবুল খায়ের,হানিফ বকাউল, আনোয়ার হোসেন, লিটল বকাউল প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী হযরত আলী বেপারী বলেন, আমাদের এই ইউনিয়নটি শান্তিপূর্ণ গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রতিটি পরিবারই একে অন্যের আত্মীয় স্বজন। কিন্তু গত ১ মাস ধরে সামান্য একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখানে এখন অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি নিজে বহুবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু কেউই আমাদের কথা শুনছে না। যার কারণে ইতিমধ্যে এক পক্ষের একজন মুরব্বী লোক মৃত্যু এবং অপর পক্ষের একজন মৃত্যুশয্যায় রয়েছে। আমিও চাই এর সুষ্ঠু বিচার হোক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ন্যায় বিচার পাক।
হযরত আলী বেপারী আরো বলেন, তবে এই ঘটনাকে পুঁজি করে একটি পক্ষ গ্রামের অসহায় পরিবারের বাড়ি-ঘরে ডাকাতি আর লুটপাট করছে। মহিলাদের শরীরেও হাত দিচ্ছে। যা খুবই ন্যাক্কারজনক। যারা গরীব মানুষের গরু-ছাগল চুরি করছে এবং মা-বোনের সাথে খারাপ আচড়ন করছে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক।
চাঁদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, রাজরাজেশ্বরের মারামারির ঘটনায় মামলা হয়েছে। গরু ডাকাতির ঘটনা আমরা জেনেছি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। এই ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। আমরা আদালতে ধারা পরিবর্তনের জন্যে আবেদন করেছি। এই ঘটনায় দোষীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধী যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন। তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন এর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ১০ জুন ২০২০