Home / চাঁদপুর / প্রসঙ্গ : বায়ূ দূষণ রোধ করি ; বাসযোগ্য ভবিষ্যত গড়ি
প্রসঙ্গ : বায়ূ দূষণ রোধ করি ; বাসযোগ্য ভবিষ্যত গড়ি
দিবসের প্রতীকী ছবি

প্রসঙ্গ : বায়ূ দূষণ রোধ করি ; বাসযোগ্য ভবিষ্যত গড়ি

চাঁদপুরে‘২০ জুন বিশ্ব পরিবেশ’ দিবসের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্যের আলোকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনে চাঁদপুরে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো :‘বায়ূ দূষণ রোধ করি ; বাসযোগ্য ভবিষ্যত গড়ি।’

৫ জুন ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৯।এ দিন মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল ফিতর হওয়ায় আমাদের দেশে এবার সরকারিভাবেই তারিখ পরিবর্তন করে ২০ জুন (বৃহস্পতিবার) করা হয়েছে।

পরিবেশবিদদের মতে,বায়ূর ক্ষতিকারক পদার্থ বাতাসে মেশার পর বায়ু দূষণ হয়। বায়ু দূষণের ফলে স্বাস্থ্য,পরিবেশ ও সম্পদ নষ্ট হয়। এর ফলে বায়ুম-লে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে জলবায়ুর ওপর এবং তা’ বিশ্বব্যাপি জলবায়ু পরিবর্তনেরও কারণ হয়ে দাঁিড়য়েছে। শিল্প, যানবাহন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং নগরায়ন বায়ু দূষণের কয়েকটি প্রধান কারণ বলে জানা গেছে। নানা কারণে বায়ু দূষণ ঘটে যার অনেকগুলোই আবার মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মরুভূমি অঞ্চলে ধুলো ঝড় এবং অরণ্যে বা ঘাসে আগুন লাগার ফলে নির্গত ধোঁয়া অথবা আগ্নেগিরির অগ্নিতোপাতে বাতাসে রাসায়নিক ও ধুলিকণাজনিত দূষণ ঘটিয়ে থাকে। পেট্রোল,ডিজেল এবং কাঠসহ নানা ধরনের কার্বন-যুক্ত জ্বালানি আধপোড়া হলে এ রঙবিহীন গন্ধবিহীন গ্যাস তৈরি হয়। সিগারেট পোড়ালেও এ গ্যাস সৃষ্টি হয় ।

এ গ্যাস আমাদের রক্তে অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের প্রর্বতিত ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সব সময় ঝিমোনো ভাব আসে। এ জন্যে অনেক সময় বাসে বা অন্যকোনো যানবাহনে চড়লেই এরকম সমস্যা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতারও শিকার হতে হয় মানুষকে। মানুষের নানা কর্মকা-ের ফলে নির্গত প্রধান গ্রিন হাউস গ্যাস। কয়লা,তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে নির্গত হয়।

পরিবেশবিদদের মতে , রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনিং মেশিন থেকে এক ধরণের গ্যাস নির্গত হয়। বাতাসে এ গ্যাস নির্গত হওয়ার পরে স্ট্র্যাটেস্ফিয়ারে চলে যায়। সেখানে অন্যান্য গ্যাসের সংস্পর্শে আসে। এর ফলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির বিকিরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার স্বাভাবিক ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ পদার্থটি লেড ব্যাটারি, পেট্রোল, ডিজেল, হেয়ারডাই ও রঙ প্রভৃতি পণ্যে পাওয়া যায়। সিসা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের ক্ষতি করে থাকে। এটির প্রভাবে হজমের প্রক্রিয়া ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে ক্যানসারও হতে পারে।

ওজোন বায়ুম-লের উচ্চস্তরে পাওয়া যায়। এ গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসের চাদর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ থেকে পৃথিবীকে বাঁচায়। কিন্তু মাটির কাছাকাছি এ গ্যাস অত্যন্ত বিষাক্ত ধরনের। মাটির কাছাকাছি যে ওজোন পাওয়া যায় তা মূলত কলকারখানা এবং যানবাহন থেকে নির্গত হয়। ওজোনের প্রভাবে চুলকানি হয় ও জ্বালা করতে পারে। ওজোনের প্রভাবে ঠা-া লাগার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ রকম গ্যাসের প্রভাবে ধোঁয়াশা তৈরি হয় এবং অ্যাসিড বৃষ্টি হয়। নাইট্রোজেন অক্সাইডের প্রভাবে বাচ্চাদের শীতের সময় সর্দিকাশি হতে পারে। ধোঁয়া, ধুলো, বাষ্প এবং একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে বাতাসে ভেসে থাকা কঠিন পদার্থের কণাকে এসপিএম বলে। এটি বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।

ধোঁয়াশা একটা অন্যতম কারণ এসপিএম। এসপিএম বেশি থাকলে দূরের জিনিস দেখার ক্ষেত্রে খুব অসুবিধা হয়। এ ধরনের পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে শরীরের এ অন্যমূলত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পোড়ানোর ফলে এ গ্যাস নির্গত হয়।

অন্যান্য শিল্পজাত প্রক্রিয়ার ফলেও এ গ্যাস নির্গত হয় যেমন কাগজ উৎপাদন পদ্ধতিতে, ধাতু গলানোর ক্ষেত্রে ইত্যাদি।এ গ্যাস অ্যাসিড বৃষ্টি এবং ধোঁয়াশা সৃষ্টির একটি প্রধান কারণ। সালফার ডাইঅক্সাইডের প্রভাবে ফুসফুসের নানা ধরনের জটিল রোগ হয়।

রাসায়নিক দূষণ, গার্হস্থ্য বর্জ্য, শিল্পজাত বর্জ্য , বর্জ্যস্থল থেকে বর্জ্য চুইয়ে অন্যত্র মিশে যাওয়া,আবহাওয়ার প্রতিক্রিয়া, সমুদ্রে দুর্ঘটনা বা তেল মিশে যাওয়া,তেলের রিগ থেকে নির্গত বর্জ্য,খননের সময় খনির বর্জ্য,হাসপাতালের বর্জ্য ও কৃষিজ বর্জ্য ইত্যাদি এ সব কারণে বায়ূ দূষণে সহায়ক ।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতিবছর বিশ্বব্যাপি রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ ও জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে এ দিবসটি পালন করে আসছে।

যে সব রাসয়নিক পদার্থ বরাবরই মানুষের চিন্তার প্রধান কারণ সেগুলোই সব চেয়ে দূষিত পদার্থ হিসাবে চিহ্নিত।এগুলো সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খলে মিশে যায় এবং সমুদ্রের দূষণ প্রচ- রকম বাড়িয়ে দেয়। এ ধরনের ধারাবাহিক দূষণের কারণ হল ডিডিটির মতো কীটনাশক ও ট্যানারির মতো কলকারখানায় নি:সৃত রাসায়নিকমিশ্রিত পদার্থগুলো।

যতদূর জানা গেছে, ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশের বিপুল পরিমাণ প্লাাস্টিক দ্রব্যর ব্যবহার শুরু হয়। ফলে আমেরিকার জনৈক বিজ্ঞানী হালকা,পাতলা ও শক্ত নমনীয় এক ধরণের পলিথিন উদ্ভাবন করেন। সে থেকে ১৯৫৮ সালের সর্বপ্রথম আমেরিকায় উৎপাদন ও ব্যবহার শুরু হয়।

অপর এক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে ফিলিপাইনের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড.সোকানো গবেষণা করে ক্যারোলিনা বা এক ধরণের টেট্রন উদ্ভাবন করেন। এর ওপর ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে ৮০’র দশকে প্লাাস্টিক ও পলিথিন দ্রব্য বাজারজাত শুরু হয়।

সে থেকেই আমাদের দেশে এর প্রচলন দেদারছে অনুপ্রবেশ করে। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন পণ্য কিনে প্লাস্টিক বা পলিথিনে করে তখন তারা নিয়ে আসতে শুরু করে ।

১৯৮৩ সালের ঢাকায় সর্ব প্রথম পলিথিন উৎপাদন কারখানা স্থাপিত হয়। ধীরে ধীরে ব্যাপক চাহিদা মেটাতে সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার ছোট বড় পলিথিন কারখানা স্থাপিত হয়। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও পলিথিন দেশের সর্বত্র পরিবেশের ওপর মারাত্নক হুমকি সৃষ্টি করে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্মুখীন হচ্ছে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ।

প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের ব্যাপকতা যে কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে-তা বলে শেষ করা যাবে না। এক কথায় দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার মাত্রারিক্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ছোট, বড়, শহর, বন্দর নগর হাট বাজার রেলস্টেশন, লঞ্চ স্টেশনের যে কোনো দোকানেই পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক দ্রব্য পাওয়া যায়। এখন গ্রামে,শহরে , বন্দরে গৃহিণারা ব্যাপক হারে প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে। এ প্লাস্টিক বা পলিথিন পচনশীল নয় বিধায় পরিবেশের ওপর মারাত্নক হুমকি। এটা সম্পূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা তৈরি।

বিজ্ঞানীদের মতে, পলিথিন বা প্লাস্টিক ক্ষয় হয় না এবং অনেক বছর অক্ষত থাকে। ইহা মাটির জন্য খুবই ক্ষতিকর। ব্যবহারের পর মাটিতে ফেলে দেয়া হলে মাটির মারাত্নক ক্ষতি করে, মাটিতে সূর্য রশ্মি পৌঁছাতে বিঘ্ন ঘটায়, ফসলের জমিতে উৎপাদন ব্যহত করে, আগুনে পুড়লে জনস্বাস্থ্যের মারাত্নক ক্ষতি করে, শহর নগর , বন্দরের সকল প্রকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার মারাত্নক বিঘœ সৃষ্টি করে, নালা নর্দমা বন্ধ করে মারাত্নক দুর্গন্ধ বাড়ায় বিধায় জনস্বাস্থ্যের মারাত্নক ক্ষতিকর, শহর বা গ্রামের গৃহিণী তাদের আর্বজনা ও শিশুদের মলমূত্র পলিথিন বা ভাঙ্গাচুড়া প্লাস্টিক পাত্র ভরে যেখানে সেখানে ফেলে দেয়। পশু পাখিরা তা’পা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরিবেশ দূষণ বাড়ায়।

অপর দিকে এর ব্যাপক ব্যবহারের ফলে দেশের সোনালী আঁশ পাটের সকল প্রকার দ্রব্য সামগ্রীর শিল্প কারখানা ধ্বংস হয়ে বেকার সমস্যা বাড়াচ্ছে ও এসব শিল্প দ্রব্যের বিলুপ্ত ঘটিয়েছে। পৃথিবীর উন্নত দেশেই পলিথিন বা প্লাস্টিক দ্রব্য ও ব্যাগের উৎপাদন,ব্যবহার ও বাজারজাত সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়াও দ্রুত পচনশীল ও ধ্বংস হয় এমন ব্যাগ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিকল্প দ্রব্য হিসেবে উৎপাদন করছে। যাহার কোনোই নেতিবাচক প্রভাব নেই।

ঐ সব উৎপাদনে নিয়োজিত মাত্র কয়েক হাজার লোক সচেতনতার অভাবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতি করে চলছে। যার ফলে ১৯৯৪ সালে পলি বা প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকের হুমকির ভয়ে তা আর কার্যকরি করা সম্ভব হয় নি।

পরবর্তীতে সরকার দেশের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে এর সকল প্রকার ব্যবহার, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১ জানুয়ারি ২০০২। ১ মার্চ ২০০২ থেকে সারা দেশে এর কার্যক্রম অব্যহত থাকে। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ছিলো। যা পরিবেশ আইন নামে খ্যাত।

পরিবেশের কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার এরইমধ্যে দেশের উৎপন্ন ১৭ দ্রব্য প্যাকেট বা বাজারেজাত করতে প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার ও পরিবেশ ছাড়পত্রের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করে। পাটের ব্যাগের বিপক্ষে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার লক্ষ্যে বস্ত্র ,পাট ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশও দেয়া হয় ।

পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এ নির্ধারিত ১৭ টি পণ্য যেমন ধান, চাল,গম, ভূট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেয়াঁজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা ও তুষ-খুদ-কুড়া পরিবহণ ও সংরক্ষণে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সরকার পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি ও পরিবেশ সুরক্ষায় সারাদেশে বিশেষ অভিযান শুরু করে। জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ এ অভিযান সফল করতে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথেও আন্ত : মন্ত্রণালয় সভা এবং পাটজাত পণ্য প্রদর্শনী অব্যাহত রাখার নির্দেশ রয়েছে ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সোনালী আঁশ পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ায় দেশে-বিদেশে পাটের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন এবং এর বহুমুখী ব্যবহারকে উৎসাহিত ও জনপ্রিয় করতে ১৭টি পণ্যের পাটজাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিরোধী প্লাস্টিক-পলিথিনের ব্যবহার ও উৎপাদন বন্ধে সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তাই সরকার এ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাদেশের সকল প্রকার সড়কপথ, জলপথ, স্থলবন্দর, মালামাল পরিবহণকারী যানবাহন, উৎপাদনকারী, প্যাকেটজাতকারী, আমদানিকারক-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অভিযান স্বরাষ্ট্র,বন ও পরিবেশ, সড়ক ও সেতু পরিবহণ, নৌ-পরিবহণ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ,জেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাবের সহায়তায় এ অভিযান পরিচালিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে পরিবেশের ওপর রিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশের দূষণ বাড়ছে ।

এছাড়াও বায়ু দূষণ,শব্দদূষণ,পানি দূষণ প্রভৃতি দূষণে জনজীবন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। সরকার প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করে এর বিকল্প দ্রব্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে প্লাস্টিক বা পলিথিনের বিকল্প দ্রব্যগুলোর দাম ও সহজলভ্য করার প্রক্রিয়া সৃষ্টি করায় ব্যাপক গণসচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

এদিকে ওয়েল্ড্রিং কারখানা, সাবান, রং, ট্রেনারি শিল্প কারখানা ও হাসপাতালের বর্জ্যে পরিবেশকে দূষণ করছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে নদী,খাল,বিল পুকুর ও ডোবার পানি দূষণও বাড়ছে । এসব কারণে আমাদের জীব-বৈচিত্র্য ও মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। দেশের নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে মৎস্য সম্পদ, কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত ও জলবায়ূ পরিবর্তন হয়ে মানুষের নানা রোগ বালাই দৃশ্যমান হচ্ছে।

আমাদের দেশ প্রকৃতির লীলাভূমি । যেকটি বন রয়েছে তম্মধ্যে সুন্দরবন একটি । সুন্দরবনসহ অন্যান্য বনে ৪০ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী আজ বিপন্ন,অতিবিপন্ন বা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বন বিনাশ, পিটিয়ে মারা,শিকার করে , রোগাকান্ত দ্বারা আক্রান্ত ,পর্যাপ্ত খাবার ও প্রাকৃতিক বন্যা,মহামারি, দুর্যোগ,ঘূর্ণিঝড় ও আশ্রয়ের অভাব ও আগুন লাগিয়ে বন উজাড় হওয়াতে এ সব প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।

পৃথিবীর বৃহত্তম ৩ টি ম্যানগ্রোব এর মধ্যে বাংলাদেশের সুন্দরবন একটি। এর আয়তন ১০ হাজার কি.মি.। আর বাংলাদেশের অংশে রয়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কি.মি.। জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম।এ বনে ২ শ’৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৬৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণীর আবাস্থল আছে। তৈলবাহী টাংকারের দুর্ঘটনায় ২-৩ বছর আগে এ সব প্রাণিদের বিপর্যয় দেখা দেয় ।

এর আশ-পাশের লোনা পানিতে রযেছে হাঙ্গর, কুমির,ডলপিন ও ২শ’৫০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ সব প্রাণীকূল ও জীব বৈচিত্র পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। জলবায়ূর পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। তাই জীব-বৈচিত্র্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমাদের দেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থায় প্রতিয়মান হচ্ছে যে, প্রচলিত ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া, যানবাহনের কালো ধোঁয়া,গাড়ির টায়ার-টিউব পোড়ানোর ধোঁয়া, পলিথিন ও কারেন্ট জাল পোড়ানোর ধোঁয়া, বিভিন্ন বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া, প্লাস্টিক বর্জ্য,অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা,সেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ,দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বর্জ্য স্তূপ আকারে পড়ে থাকায় নানা দুর্গন্ধ সৃষ্ঠি,জীব-জন্তুর মৃত দেহ হতে নানা দুর্গন্ধ বাতাসে মিশানো, বেপরোয়াভাবে বর্তমানে প্লাস্টিক দ্রব্য ও পলিথিনের অপব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক সচেতন না হলে বায়ূ দূষণ বাড়তেই থাকবে।

কেননা নানা কারণে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ূর পরিবর্তনে আমাদের পরিবেশের অনেক কিছ’ই পরিবর্তন হচ্ছে। জীব-বৈচিত্র্যের ওপর নানা প্রভাব পড়ছে। বায়ূ দুষণ প্রতিরোধ না হলে আমাদের বাসযোগ্য ভবিষ্যত গড়ারার স্বপ্ন বাস্তবায়ন মোটেই সম্ভব নয়। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তার খেসারত আমাদেরই দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ৫ জুন জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ কনফারেন্স শুরু হয়েছিল। এ কনফারেন্স ১৯৭২ সালের ৫ জুন নির্ধারিত হয়। কনফারেন্স ঐ বছরই চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯৭৩ সালে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে ও আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়ে আসছে। প্রকৃতিগত কারণে উত্তর গোলার্ধে দিবসটি বসন্তে আর দক্ষিণ গোলার্ধে দিবসটি শরতে পালিত হয়।

চাঁদপুরে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৫ জুন সকাল সাড়ে ৯ টায় চাঁদপুর সার্কিট হাউজ থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শেষ হবে। বেলা সাড়ে ১০ টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নদী রক্ষা, বন্যপ্রাণি,ও পরিবেশ,বায়ূ ও শব্দ দূষণ রোধে ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রদর্শন,১০.৫০ মিনিটে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও পুরষ্কার বিতরণ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক মো.মাজেদুর রহমান ।

অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-বেলা সাড়ে ১০ টা ৩০ মি.চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নদী রক্ষা, বন্যপ্রাণি ও পরিবেশ,বায়ূ ও শব্দ দূষণ রোধে ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রদর্শন। ১০.৩৫ মিনিটে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক মো.মাজেদুর রহমান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রূপক রায় ।

বিশেষ অতিথি থাকবেন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান,জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র নাসির উদ্দিন আহমেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল । সভাপতিত্ব করবেন চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ এইচ এম রাসেদ।

লেখক পরিচিতি : আবদুল গনি , সহ-সম্পাদক, চাঁদপুর টাইমস। ১৮ জুন ২০১৯ ।