Home / চাঁদপুর / প্রশিক্ষণ পেয়েও চাঁদপুরের হরিজন যুবক-যুবতীদের কাজ জুটছে না
প্রশিক্ষণ পেয়েও চাঁদপুরের হরিজন যুবক-যুবতীদের কাজ জুটছে না
চাঁদপুর হরিজন সম্প্রদায়ের ফাইল ছবি

প্রশিক্ষণ পেয়েও চাঁদপুরের হরিজন যুবক-যুবতীদের কাজ জুটছে না

চাঁদপুরে হরিজন সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীরা দীর্ঘ বছর সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো প্রশিক্ষণ পায়নি। তারা প্রশিক্ষণবিহীন বেকার জীবন যাপন করে যাচ্ছলো।

সরকারের সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে চাঁদপুরে হরিজনদের ৩টি কলোনির শত- শত বেকার যুবক-যুবতীদের মধ্য থেকে মাত্র ২১ জনকে বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও এখনো তাদের কার্মের ব্যাবস্থা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন হরিজন নেতা বিধান চন্দ্র জনি।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন হরিজন জানান, চাঁদপুরের ৩টি কলোনির ২ শতাধিক যুবক-যুবতি রয়েছে, যারা কোন প্রকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সুযোগ পায়নি। এরা এখন অতি কষ্ঠে তাদের অভিভাবকের ঘাড়ে চরে জীবন যাপন করছে। প্রশিক্ষণ নেওয়া যুবক-যুবতিরা কর্ম না পেয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তাদেরকে সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে সেলাই কাজ, বুটিকসের কাজ, চুল কাটা, মোমবাতি বানানো এসব প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এছাড়া ফুট ফর হাংরি এর কর্মসূচীর আওতায়, নিজেদের মধ্যে একতা ভাবে কাজ করা ও বিভেদ সৃষ্টি হলে নিরশন কল্পে গ্রাম্য শালীশের ওপর প্রশিক্ষণ ও শুকর পালনে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় তার উপরও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, হরিজনদের উপার্জনের বিশেষ লাভবানের জন্য।

গত কয়েকদিন যাবত এ সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন চিত্র নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, এরা সত্যিকার অর্থে এদেশের অন্য সম্প্রদায়ের কাছে বৈষম্যের শিকার, কর্ম পাচ্ছে না, শিক্ষা অর্জন করে মর্যাদার আসনে যেতে পারছেনা।

এদের পেশা অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা বর্তমানে করছে। তাদের পেশায় নাম লিখিয়ে এদেরকে সামান্য মাইনে দিয়ে অন্য ব্যাক্তিরা সকল সুবিধা গ্রহণ করে যাচ্ছে।

এদের জন্য স্থানীয় পৌরসভা থেকে ১ মাসের বেতন রয়েছে মাত্র ৯শ’ টাকা। পৌরসভার বাসস্থান ফ্রি পেলেও প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে ৫-৬শ’ টাকা।

পৌরসভার কাজ শেষ করে বাহিরে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে কষ্ট হচ্ছে। অনেকে প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ধারনা বুঝে থাকলেও পরবর্তীতে কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারেনি বলে হরিজনরা জানায়।

এরা সরকারের কাছে বেকারত্ব দূরীকরণে সার্বিক সহযোগিতা চায়।

চাঁদপুরের হরিজনরা জানান, তাদের পূর্ব পুরুষের বসবাস থেকে এ পর্যন্ত তারা এদেশের মাটিতে বসবাস করছে প্রায় ২শ’ বছর। তবে ২০১৬ সালে তারা অতি অল্প সংখ্যক যুবক-যুবতিরা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করতে পারলো। এ সম্প্রদায়ের নেতাদের দাবি সরকার এদেরকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করলে তাদের সঠিক ভাবে মূল্যয়ন করা হবে।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে হরিজন কলোনির শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক বিধান চন্দ্র হরিজন (জনি) চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘সরকার সেবা বলয়ে দলিত যুবক-যুবতিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তবে এর সংখ্যা কম। অল্প সংখ্যক হরিজন সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে গত জুলাই মাসে ৩ কলোনির ২১জন যুবক-যুবতিদের।’

এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন চাঁদপুর সমাজ সেবা অধিদপ্তর।

এর মধ্যে ১৫জন সেলাই মেশিন চালানোর উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এছাড়া ৬ জনকে চুল কাটার উপর প্রশিক্ষণ দেয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর।

এ ৩ কলোনিতে সেলাইর উপর প্রশিক্ষণ নেওয়া যুবতীরা নিজেরা কাজ করতে পারছে। তারা যে পরিমান কাজ করছে তাতে বুঝা যায় তারা ভালো ধারনা নিতে পেরেছে।

এ প্রশিক্ষণের সহযোগিতায় ছিলেন, চাঁদপুর হরিজন সমাজ উন্নয়ন সংগঠনের নেতা সভাপতি আকাশ দাস ও সাধারণ সম্পাদক মুন্না দাস।

তবে তাদেরকে সমাজসেবা কর্মকর্তারা বলেছে, ভবিষ্যতে বিউটি পার্লার ও বুটিকসের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

২১ জন প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে ১৫ জন যুবতী ও ৬ জন যুবক।

তবে এ প্রশিক্ষণ নিয়ে খুব কম সংখ্যক যুবক-যুবতী পরবর্তি বিকল্প কর্ম করতে পারছে। তারা সরকারিভাবে এ পর্যন্ত কোন স্থায়ী কর্ম পায়নি বলে জানান। তবে তাদের কাজ করার আগ্রহ রয়েছে। রেলওয়ে হরিজন কলোনিতে শিক্ষিত বেকার ৩৫ ও স্বশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতি রয়েছে ৪০ জনের মতো। তারা বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে।

হরিজন সম্প্রদায়ের চাকরি অন্যরা হাতিয়ে নিচ্ছে। হরিজন শিক্ষিত যুবক-যুবতিরা হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ায় বৈষম্যে শিকার হচ্ছে।

এ ব্যাপারে হরিজন পল্লির পুরাণ বাজার হরিজন যুব ক্লাবের সভাপতি শ্যামল হরিজন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আমাদের এখানে রেজিস্ট্রিকৃত হরিজন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি স্কুল রয়েছে। সে স্কুলের মাধ্যমে চাঁদপুর সমাজ সেবা অধিদপ্তর ১৫ জন যুবক-যুবতিকে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এবং সেলাই মেশিন ক্রয় করার জন্য নগদ ১৫ হাজার টাকা প্রদান করে। সেলাই প্রশিক্ষণ নেয়া ছাড়াও এ কলোনিতে বেকার যুবক-যুবতি রয়েছে ৪০ জন।’

তবে প্রশিক্ষণ পাওয়া শিক্ষার্থীরা কর্ম পাচ্ছে না। তারা এখন অভিভাবকের উপর বোঝা হয়ে অতি কস্টে জীবন যাপন করছে। সেলাই প্রশিক্ষণ ছাড়াও বুটিকস, মোমবাতি, গ্রাম্য শালীশের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফুটফর হাংরি এ কর্মসূচির আওতায় শুকর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

যেনো বেকার যুবক-যুবতিরা শুকর পালন করে উপার্যনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এ কলোনিতে যে সব বেকার যুবক-যুবতি রয়েছে তারা মাদক মুক্ত পরিবেশে বসবাস করছে। এরা মাদকের ছোঁয়ায় যাওয়ার পূর্বে এদেরকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা।

চাঁদপুর পৌরসভার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের হরিজন সম্প্রদায়ের সুপার ভাইজার নন্দ কিশোর হরিজন জানান, চাঁদপুরে কয়েক হাজার হরিজন রয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশরাই বেকার জীবন যাপন করছে।

৩টি কলোনি মিলে কয়েক শ’ যুবক-যুবতী রয়েছে। এদের মধ্যে সামান্য সংখ্যক যুবক-যুবতিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও এরা কোন কর্ম করে খেতে পারছে না।

যার ফলে এদের জীবন কাটছে অতি কস্টে। স্বর্ণখোলা হরিজন কলোনিতে প্রায় ৪০ জন যুবক-যুবতি বেকার রয়েছে। এদের মধ্যে সমাজ সেবা অধিদপ্তর স্বল্প সংখ্যক আমাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এরা সরকারি বেসরকারি কোন কাজ পাচ্ছে না। এদেরকে কর্মের মধ্যে না রাখলে এসব যুবক-যুবতিরা ভুল পথে দাবিত হওয়া আশঙ্কা বিরাজ করছে।

স্বর্ণখোলা সূর্যমূখী যুব ক্লাবের সভাপতি শ্যামল হরিজন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ৩ কলোনি মিলে গত ১মাস পূর্বে ১৬ জন যুবক-যুবতিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে চাঁদপুর সমাজসেবা অধিদপ্তর। এ সংস্থা থেকে সেলাই শিক্ষা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, চুল কাটা ও বিউটি পার্লারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেলাই শিক্ষার পর ৮জনকে ৮টি সেলাই মেশিন, ৫টি কম্পিউটারের জন্য প্রতি জনকে ৮ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে। চুল কাটা প্রশিক্ষণের শেষে তাদের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১৬ হাজার টাকা করে নগদ প্রদান করা হয়।

এ সব প্রশিক্ষণের পরও যুবকরা বেকার জীবন যাপন করছে। তারা এ কর্ম করার জন্য স্থানীয় ভাবে দোকান বরাদ্ধ নেওয়ার টাকা না থাকায় কর্মে যেতে পারছে না।

সরকারি বেসরকারি ভাবে তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা তাদের দাবী। স্বর্ণ খোলা হরিজন কলোনিতে শতাধিক বেকার যুবক-যুবতি রয়েছে। যাদের জীবন যাপন চলছে অভিভাবকের সহযোগীতা নিয়ে। তার পরও তারা বেকার জীবনে না থেকে কর্মে ফিরে যেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করছে।

এ ব্যাপারে শারীর পষ্ণায়েত কমিটির সভাপতি নারায়ন রবিদাস দাস চাঁদপুর টাইমসকে জানান, নতুন বাজার রিষি কলোনিতে প্রায় ১হাজার মানুষের বসবাস। এখানে ৩০-৪০জন যুবক ও যুবতী রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বেকার যুবক-যুবতীদের সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও আমাদের এ কলোনির জন্য কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচেছ না।’

সবমিলিয়ে হরিজন সম্প্রদায়ের যুবক যবতীরা হতাশা আর কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছে। এদেরকে কোনো কাজ দিতে না পারলে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন সচেতনমহল।

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৬:০০ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

প্রশিক্ষণ পেয়েও চাঁদপুরের হরিজন যুবক-যুবতীদের কাজ জুটছে না

About The Author

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম

Leave a Reply