প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হাজীগঞ্জের অর্ধশতাধিক নারী

হাজীগঞ্জ উপজেলা মহিলা-বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলাদের জন্য  ৯টি ট্রেডে গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের বিনা খরচে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সরকার।

প্রকল্পের আওতায় টেইলারিং, ব্লক বাটিক, বিউটিফিকেশন, ক্রিস্টাল শোপিস ও ডেকোরেটেড মোমবাতি, মাশরুম চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট ও মৌচাষ, ফ্যাশন ডিজাইন, শতরঞ্জি ও হস্তশিল্প, সেলসম্যানশিপ ও ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজমেন্ট, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং অ্যান্ড রিপেয়ারিং ও কম্পিউটার সার্ভিসিং অ্যান্ড রিপেয়ারিং কোর্সে প্রতি উপজেলায় দুটি ট্রেডে মোট ৫০ গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়ে হাল ধরেছেন পরিবারের। স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ের পরিধি বাড়িয়ে অন্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে কর্মের সুযোগ করে দেয়ার।

হাজীগঞ্জ উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় ১১টি ব্যাচের মধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২০ জনের গ্রুপে দুটি ট্রেডে ২০০ জন। ষষ্ঠ থেকে ১০ম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২৫ জনের গ্রুপে দুটি ট্রেডে ২৫০ জন। ১১তম ব্যাচে ২৫ জনের গ্রুপে দুটি ট্রেডে ৫০ প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন।

উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৫০০ প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে এখন অর্ধশতাধিক দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারী উদ্যোক্তা সেলাই প্রশিক্ষণ ও ব্লক বাটিক ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের সাদেকা আক্তার সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীরা সাদেকার কাছে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে নিজেরাও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সেলাই কাজ করেই সংসারের হাল ধরেছেন সাদেকা। স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে সাদেকা উপায়হীন হয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মির্জা শিউলি আক্তারের পরামর্শে এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নেন।

একই উপজেলার পৌর এলাকার কংগাইশ গ্রামের ফরিদা ইয়াসিন পারুল সেলাই কাজ শিখে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজের অর্ডার নিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি অন্যদেরও শেখাচ্ছেন সেলাই কাজ।

কংগাইশের আরেক সুবিধাবঞ্চিত নারী রোজিনা আক্তার। সেলাইয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করছেন। বিক্রি করছেন কাপড়। ছোট একটি দোকান দিয়ে আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা।

পৌর এলাকার মকিমাবাদের আরেক সফল উদ্যোক্তা জান্নাতুল ফেরদৌস। এ প্রকল্পের আওতায় ব্লক-বাটিকের কাজ শিখে তিনি নিজেই এখন অন্যদের শিখিয়ে আয় করছেন। ব্লক-বাটিকের নানা ড্রেস তৈরি করে বিক্রি করছেন। ব্লক-বাটিকের কাজ শেখার পর জান্নাতুল ফেরদৌসের জীবনের গল্প বদলে যায়। শুরু করেন টিকে থাকার লড়াই। মানুষের কোনো অবহেলা পাত্তা না দিয়ে শুরু করেন পুরোদমে ব্লক-বাটিক নিয়ে কাজ। ব্যবসার পরিধি ধীরে বাড়তে থাকে। আজ তিনি ব্লক-বাটিকের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী ও সফল উদ্যোক্তা।

আরেক সফল উদ্যোক্তা কামরুন নাহার। পৌর এলাকার বাসিন্দা। ঘরোয়াভাবে ব্লক-বাটিকের ব্যবসা করেন। এ ব্যবসা করে তিনিও সফল। শত প্রতিকূলতা আর নিজের ইচ্ছাশক্তির বলে কামরুন নাহার আজ এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা করে সফল ও স্বাবলম্বী।

একইভাবে কংগাইশের আকলিমা আক্তার, মুনহার আক্তার নয়ন, মুসলিমা খাতুন রুমি, আলীগঞ্জের কুহিনুর আক্তার, সুবিদপুরের লাকি বেগম, টোরাগড়ের জেসমিন বেগম, আশ্রাফপুরের ইশরাত বেগম, সুহিলপুরের অপিরাণী দাস, ধেররার সোমা আক্তার, হোটনীর আয়েশা বেগম, পূর্ব কাজিরগাঁয়ের তানজিনা আক্তার, জাকনীর কুলসুমা আক্তার, খাকবাড়িয়ার জয়নব আক্তারসহ অর্ধশতাধিক নারী আইজিএ প্রশিক্ষণ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন।

এ প্রকল্পের কর্মসূচি সম্পর্কে হাজীগঞ্জ উপজেলা মহিলা-বিষয়ক কর্মকর্তা সানজিদা মজুমদার বলেন, সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র নারীদের উন্নয়নের জন্য দরকার আত্মবিশ্বাস ও জেন্ডার-বিষয়ক সচেতনতা।

এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেমন অনেক নারী অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, পেয়েছেন সামাজিক মর্যাদা, পাশাপাশি তারা অন্য নারীদেরও কর্মসংস্থান করছেন। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো সুবিধাবঞ্চিত নারী এ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এবং নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরি করতে পারছেন, ব্যাপারটা সত্যিই আনন্দের।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রতিবেদকঃ জহিরুল ইসলাম জয়, ৬ জুন ২০২১

Share