বুধবার শহরের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপি, জাতীয় পার্টি , গন-অধিকার পরিষদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি, প্রশাসন, পুলিশ, সাংবাদিক, সমাজের প্রতিনিধি, যুব সংগঠন প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক গোলাম জাকারিয়া। তিনি বক্তব্যে বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা সমস্যার কথা সবাই জানি ও বলি। তবে এর সমাধান আমাদেরকেই বের করতে হবে। সকলে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলতে হবে। সমাজ পরিবর্তনে শুধু প্রশাসন, পুলিশের একা দায়িত্ব নয়, তা আপনার আমার সকলের দায়িত্ব। সকলে ন্যায় সঙ্গত কাজের সাথে থাকবেন।
তিনি বলেন, আত্ম-সামাজিক উন্নয়ন করতে হবে। এর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ কয়েকটি বিষয় জড়িত। মেয়েদের শিক্ষার মান না বাড়লেও হার বেড়েছে। আমাদের মধ্যে কিছু কালচার বিদ্যমান রয়েছে। এর মধ্যে খারাপ কালচার থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
ম্যাফ চাঁদপুরের সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুনির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের পলাশ, জেলা মহিলা অধিদপ্তরের ফিল্ড অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা গন অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন।
ম্যাফের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বাহার ও দপ্তর সম্পাদিক নাহিদা সুলতানা সেতুর পরিচালনায় আরোও বক্তব্য রাখেন জেলা মহিলাদলের নেত্রী অ্যাড. রেহেনা ইয়াসমিন কচি, তালতলা পাটওয়ারীবাড়ি জামে মসজিদের খতিব মাও. আব্দুস সালাম, সদর থানা জাতীয়পার্টি সভাপতি জাকির হোসেন হিরু, জেলা কৃষকদলের সভাপতি ও ম্যাফের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খোকন, চাঁদপুর প্রভাতি কাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুল আউয়াল রুবেল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি সাকিবুল ইসলাম, পৌর মহিলাদলের সহ-সভাপতি ফারজানা রুজি, সদর থানা ছাত্রদলের সভাপতি জিসান আহমেদ, তারণ্যের অগ্রদুতের সাধারণ সম্পাদক তাহসিনুর রহমান বুনন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার আবুল বাশার। সভার শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ম্যাফের সদস্য তানিয়া ইসলাম।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে চাঁদপুরে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে বাল্য বিবাহের এ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকগন জীবনযাপনের ব্যয়ভার কমাতে অনেক সময় কন্যা সন্তানের দ্রুত বিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
এছাড়া বর্তমান সামাজিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তার অভাবে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। আলোচনায় জানানো হয়, ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের অপরিণত সন্তান জন্মদান বা কম ওজনের সন্তান জন্মদানের আশঙ্কা ৩৫-৫৫ শতাংশ বেশি। এক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচে বয়েসী মায়েদের শিশু মৃত্যুর হার ৬০ শতাংশ বেশি জানান তারা। এজন্য সম্মিলিতভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেন।
সভায় বক্তারা যে সকল সমস্যা ও সুপারিশ তুলে ধরেন তা হলঃ বর্তমানে চাঁদপুরে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে বাল্য বিবাহের এ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাল্যবিবাহ তুলনামূলক ভাবে রিমোট এলাকাগুরোতে বেশী সংগঠিত হচ্ছে। এরমধ্যে ২নং ওয়ার্ড থেকে ৮ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত ব্যাপক হারে হচ্ছে। উল্লেখ্যযোগ্য হল ৭ নং ওয়ার্ডের ব্যাপারে কয়েকটি স্কুল যেমন- শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, আক্কাস আলী , উত্তর শ্রীরামদি প্রাথমিক স্কুল, এছাড়াও অন্যান্য ওয়ার্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা । লক্ষনীয় বিষয় হল তৃতীয় শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিশুদের বাল্যবিবাহ ঘটছে বেশী। এই কনফারেন্স হতে চাঁদপুরে বাল্যবিবাহরে মত জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে নাগরিক সমাজ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান করা হয়।
চাঁদপুর জেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্থানীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার করণীয় ঠিক করতে মাল্টি-পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম (এমএএফ) চাদঁপুর এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
যুক্তরাজ্যের এফসিডিও -এর অর্থায়নে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশন্যাল পরিচালিত বি-স্পেস প্রকল্প এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে সহায়তা করে।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
এজি