কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সক্রিয় অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চক্রটি যেন মাটি বিক্রির মহোৎসবে মেতে উঠেছে। প্রতিনিয়ত মাটি কেটে ধ্বংশ করছে শতশত একর তিন ফসলী ঊর্ব্বর কৃষিজমি। অন্যদিকে এই ঊর্বর কৃষি জমি রক্ষায়, অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিমূলে নিয়মিত অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা ভূমি অফিস। এসব অভিযানে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শতশত অবৈধ ড্রেজার মেশিন জব্দ করা, ধ্বংস করাসহ অসাধু ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে। তারপরও থামছেনা চক্রটি! একদিকে অভিযান শেষ অন্যদিকে আবারও শুরু হয় মাটিকাটা! চোর-পুলিশ খেলায় মেতে উঠেছে চক্রটি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা তাদের ড্রেজার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেই!
তবে, সচেতন মহল মনে করছেন এই চক্রটিকে নির্মূল করতে হলে আরোও কঠিন ভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে। বাড়াতে হবে জরিমানার অংক এবং দিতে হবে কারাদণ্ডও! তা না হলে চক্ররি চোর-পুলিশ খেলা কোনো মতেই থামানো যাবে না। এর অন্যতম কারন হচ্ছে, এ পদ্ধতিতে মাটি কেটে বিক্রিতে অনেক লাভ।
জাতীয় কৃষি ও পরিবেশ পদক প্রপ্ত সংগঠক অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন, একেকটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিমাশে যে পরিমাণ আয় হয়, সেতুলনায় ড্রেজার ব্যাবসায়ীকে জরিমানা কিংবা মেশিন জব্ধ করে যে ক্ষতি হয় তা অতি সামান্য। যারজন্যে মোবাইলকোর্ট করে চলে গেলে আবাও একটি মেশিন কিনে মাটিকাটায় মরিয়া হয়ে উঠে। মতিন সৈকত মনে করেন, এক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক ছত্রছায়াও থাকে ড্রেজার ব্যাবসায়ীদের পক্ষে। ড্রেজার বন্ধ না হওয়ার এটিও একটি বড় কারন। মতিন সৈকত বলেন, এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাস ও উপজেলা ভূমি অফিসের অভিযান অব্যাহত না থাক গোটা উপজেলাটি গিলে খেতো এইড্রেজার চক্র।
এব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: নাজমূল হুদা বলেন, মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অসাধু ড্রেজার ব্যবসায়ী দীর্ঘ দিন যাবৎ সক্রিয় রয়েছে। উপজেলার কৃষিজমি রক্ষায় ইতিমধ্যে দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ড্রেজার মেশিন জব্দ করাসহ অসাধু ড্রেজার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও এরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব মেশিন চালিয়ে আসছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: নাজমূল হুদা জানান, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার দিনব্যাপী উপজেলার বংগরা বাজার থানা এলাকায়া পৃথক পৃথক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: নাজমূল হুদা জানান, কৃষি জমি রক্ষায় মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের বলীঘর ও হিরাকাশি গ্রামে অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুসারে শনিবার এ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। বাংগরা বাজার থানা পুলিশের সহযোগিতায় মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিস এ অভিযান চালায়।
অভিযানের সময় একটি অবৈধ ড্রেজার মেশিন জব্দ করে নিয়ে আসা হয় এবং রাস্তা দূর্গম ও বর্ষার পানি থাকায় আরও ৪ টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন ও বার বার ড্রেজিং কাজে ব্যবহৃত ১৮ হাজার ফুট অবৈ পাইপ ধ্বংস করা হয়। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ধ্বংস ও জব্ধ করা হচ্ছে শতশত ড্রেজার মেশিন, হাজার হাজার পুট পাইপ।
এই চক্রকে নির্মূল করার লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: নাজমূল হুদা বলেন, আমার উপর রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব আমি যাথাযথ ভাবে পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। দিন রাত খেটে আমাদের ফসলী জমি রক্ষার চেষ্টায় চক্রটিকে নির্মূলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। এক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের বাইরে কাউকে জেল জরিমানা করার কোনো বিধান নেই। সুতরাং সবাইকে সচেতন হতে হবে। নাগরিকরা দেশের প্রতি আন্তরিক না হলে প্রশাসনের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব হয় না।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ২৭ আগস্ট ২০২৩