প্রশংসায় ভাসছে সাহিত্য মঞ্চের হাতে লেখা পোস্টার ও বানান বিষয়ক ভাজপত্র

আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে চাঁদপুর শহরের দেয়ালে দেয়ালে শোভাপাচ্ছে হাতে লেখা পোস্টার। যাতে লেখা রয়েছে মহান ভাষা আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে সৃষ্টি নানান শ্লোগান আর বিখ্যাত সব গান ও কবিতার লাইন।

এবছর মাতৃভাষা দিবসে চাঁদপুরে এমন পোস্টার লাগিয়ে নগরবাসীকে চমকে দিয়েছে জেলার আলোকিত ও সুনামধন্য সাহিত্য সংগঠন সাহিত্য মঞ্চ। হাতে লেখা এসব পোস্টার দেখে একুশের চেতনাকে ধারণ করা যে কোন দেশপ্রেমীক নাগরীক যেন হারিয়ে যান, বায়ান্ন আর একাত্তরের উত্তাল সেই পটভূমিতে।

শুধু তাই নয়, মাতৃভাষা দিসব উপলক্ষ্যে
সংগঠনটি প্রকাশ করেছে শুদ্ধ বানান বিষয়ক ব্যতিক্রমী একটি ভাজপত্র। চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিণারের প্রভাত ফেরীতে আসা জনসাধারণের হাতে এমর ১ হাজার ভাজপত্র বিতরণ করেছে সংগঠনের সদস্যরা। ফলে সাহিত্য মঞ্চের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সচেতন নগরবাসীর প্রশংসায় জোয়ারে ভাসছে।

একটা সসময় ভারত উপমহাদেশের জনপ্রিয় প্রচার মাধ্যম ছিলো হাতে লেখা পোস্টার। প্রচারণার পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রামেও প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেও পোস্টারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাভাষী বাঙালী তথা স্বাধীন বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেকটা অষ্টেপৃষ্ঠে মিশে আছে হাতে লেখা পোস্টার। রক্তে অর্জিত ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে অনন্য হাতিয়ার ছিলো হাতে লেখা পোস্টার। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্র ধরে রাজনৈতিক কারণে দেয়ালে হাতে লেখা পোস্টার লাগানোর রীতি চালু হয়। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে পরিচালিত ভাষা আন্দোলনে হাতে লেখা পোস্টার গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তৎকালিন সময়ে পোস্টার লেখার জন্য অনেককে জেলজুলুম সহ্য করতে হয়েছে।

নিকট অতিথেও এদেশে দেয়ালে দেয়ালে হাতে লেখা পোস্টার দেখা যেতো। কিন্তু কালের আবর্তে এই প্রচার মাধ্যমটি আজ যেন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। মফস্বল শহর থেকে রাজধানী শহর সর্বত্রই এখন ডিজিটাল পোস্টারের আধিপত্য। তাছাড়া একটা সময় সাহিত্য পাড়ায় বেশ কদর ছিলো ভাজপত্রের। স্বল্প খরচ ও ছোট্ট পরিসরে সাহিত্যপ্রেমীদের আত্মক্ষুধা মেটাতে সাহিত্য সংগঠনগুলো বিভিন্ন নামে ভাজপত্র প্রকাশ করতো। বর্তমানে পত্র-পত্রিকার সাহিত্য পাতা ও লিটলম্যাগের ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় এই ভাজপত্রও খুব একটা দেখা মেলে না। এই দু’য়ের উপর সবচেয়ে বড় পেরেকটি বসিয়েয়ে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক। তবে চাঁদপুর সাহিত্য মঞ্চ তাদের বিভিন্ন আয়োজনকে ঘিরে ভাজপত্র প্রকাশ অব্যহত রেখেছে।

এ বিষয়ে সাহিত্য মঞ্চের সভাপতি কবি ও অনুবাদক মাইনুল ইসলাম মানিক জানান, সাহিত্য মঞ্চ সবসময় নতুনত্ব নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে। তবে অবশ্যই সেটি শেকড়ের সাথে সম্পৃক্ত থেকে। হাতে লেখা পোস্টার আমাদের বাঙালী জাতির ইতিহাস-ঐহিত্যে অবিচ্ছেধ্য অংশ। একটা সময় হাতে লেখা পোস্টারের যেমন কদর ছিলো, তেমনি গণমানুষের দাবী কিংবা অধিকার আদায়েও এর ভূমিকা ছিলো অতুলনীয়। এবছর মাতৃভাষা দিবসে আমরা হাতে লেখা পোস্টার এবং শুদ্ধ বানান বিষয়ক একটি ভাজপত্র প্রকাশ করেছি। পাশাপাশি চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহিদ মিণারে পুষ্পস্তবক অপর্নের মাধ্যে আমরা ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। সাহিত্য মঞ্চের এই অগ্রযাত্রার মূল শক্তি হলো একদল প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ। যারা মনে ও প্রাণে সত্য ও সুন্দরকে ধারণ ও লালল করে।

সাহিত্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কবি ও গল্পকার আশিক বিন রহিম বলেন, সাহিত্য মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লোক দেখানো এবং গতানুগতিক কর্মাকাণ্ডের বাইরে এসে বাংলা সাহিত্য বিকাশে ভিন্নধর্মী কিছু করার প্রত্যেয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন প্রমিত উচ্চারণ, উপস্থাপন, শুদ্ধ বানান এবং আবৃত্তি বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা। এছাড়া কবিতা প্রহর ও লেখক- পাঠক মৈত্রী প্রহর শীর্ষক ব্যতিক্রমী আয়োজনে পাঠকের কাঠগড়ায় লেখকে দাঁড় করানো। যেখানে পাঠকরা তার প্রিয় লেখকের মুখ থেকে তাদের কৌতূহলের নানা কথা জানতে পারেন। এছাড়া জোছনা উৎসব, চড়ুইভাতি, ফলচক্র, সাহিত্য আড্ডা এবং নির্বাচিত গ্রন্থ নিয়ে মাসিক পাঠচক্র আমাদের নিয়মিত আয়োজন। সাহিত্য মঞ্চের এ যাবত সবচেয়ে বড় অর্জন হলো পর পর দুই বছর বৃহৎ পরিসরে চাঁদপুর সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা। যেখানে দেশবরেণ্য সাহিত্যিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে লেখকরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। এই সাহিত্য সম্মেলনে সাহিত্য মঞ্চ প্রবর্তিত ‘মোহাম্মদ নাসীরউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা কয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক দেড় দশক যাবত চাঁদপুরে সাহিত্য আন্দোলন অতিথের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশ তুঙ্গে রয়েছে। প্রবীণদের পাশাপাশি জেলার একঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেখক জাতীয় পার্যায়ে অবদান রাখছেন। এই সময়টাতে চাঁদপুর থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক লিটলম্যাগ প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি সাহিত্য নিয়ে কাজ করছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়াচ্ছে চাঁদপুর সাহিত্য মঞ্চ। সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সস্পাদক ২০১৯ সালে ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত সার্ক সাহিত্য সম্মেলনে আমন্ত্রিত লেখক হিসেবে অংশ নিয়েছেন।

স্টাফ করেসপন্ডেট

Share