প্রমাণ করতে পেরেছি আমি ষড়যন্ত্রের শিকার : ইউছুফ গাজী

চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত (নৌকা প্রতীকের) চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মো. ইউছুফ গাজী। ১৫ অক্টোবর শনিবার দুপুরে তিনি শহরের মুখার্জিঘাটস্থ নিজ বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

লিখিত বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের এ সহ-সভাপতি বলেন, গত ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন প্রদান করেন। এরপর ১৪ নভেম্বর আমি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন আমার প্রতিপক্ষের লিখিত ও মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে রিটার্নিং অফিসার আমার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মহোদয় ও নির্বাচন আপীল ট্রাইবুনাল বিভাগ বরাবরে আমার মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপীল করি। ২২ নভেম্বর শুনানিঅন্তে আমার আপীলটিও নামঞ্জুর হয়। অতঃপর মনোনয়নপত্র বৈধতার জন্য আমি একটি রিট দাখিল করি।

তিনি বলেন, আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর বিজ্ঞ অনেক আইনজীবীর কাছে আইনি পরামর্শ নিয়ে দ্রুত সময়ে মামলা শেষ করার জন্য আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আত্মসমর্পণ করে রিভিশন দায়ের করি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন দিয়েছেন নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য; তাই দলের প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে শুধুমাত্র নির্বাচনটি করার জন্য আমি এই বয়সেও কারাগারে যেতে পিছপা হইনি। আমি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করি এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাই। আমি এখন সেই মামলা থেকে পুরপরি খানাশপ্রাপ্ত।

আমি মনে করি আমার ব্যক্তিগত মামলাটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে আমার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করার জন্য। দুঃখের বিষয় এই যে মহামান্য উচ্চ আদালতের অবকাশ, পূজা, সাপ্তাহিক ও সরকারী বিভিন্ন ছুটি থাকার কারনে যে আইনি প্রক্রিয়া ১০-১২ দিনে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব হতো সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ২৩ দিন সময় লেগে গেলো। কিন্তু আমার মনোনয়নপত্র বৈধতার রিট পিটিশনটি এই সময়ের বেড়াজালে বাধাগ্রস্থ হয় এবং রিটে আইনি ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা ছিল যা সময় সাপেক্ষ হওয়ায় মহামান্য উচ্চ আদালত আমার ব্যাপারটি সময় নিয়ে শুনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নির্বাচনের দিনক্ষণ নিকটে চলে আসায় আমার রিট পিটিশনটি শুনানি করাই সম্ভব হয়নি। আপাতদৃষ্টিতে আমাকে নির্বাচন থেকে বঞ্চিত রাখার সেই নীলনক্সায় তারা সফল হয়েছে। কিন্তু মাত্র ২৩ দিনে আমি আমার সেই ব্যক্তিগত মামলাটির সমাপ্তির মাধ্যমে প্রমান করলাম যে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।

আলহাজ্ব ইউছুফ গাজী আরো বলেন, আমি চাঁদপুর পৌরসভা এবং উপজেলার সফল চেয়ারম্যান ছিলাম। দীর্ঘ ১২ বছর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও ১৭ বছর ধরে চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দলের দায়িত্ব পালন করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনে ২০০১ সালে আমাকে নৌকার মনোনীত প্রার্থী করেছিলেন। আমার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল এই জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আমাকে দলীয় সমর্থন। আমার মনোনয়ন পাওয়ায় সারা চাঁদপুর জেলার স্বর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে যেভাবে ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছিলাম তা আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পাওয়া। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ ডাঃ দিপু মনি যেভাবে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন তার জন্য আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। এছাড়াও চাঁদপুর জেলার সবগুলো সংসদীয় আসনের সাংসদদের, জেলা আওয়ামীলীগের সকল নেতা কর্মীদের আমার পাশে থাকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশা করছি ভবিষ্যতেও সকলের এই সমর্থন ও ভালোবাসা পাবো। মানুষের ভালোবাসাই আমার রাজনীতির শক্তি। পদ-পদবী ক্ষমতার জন্য আমি কখনো রাজনীতি করিনি। আমি যাতে আমৃত্যু আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি সেজন্য আপনারা আমাকে দোয়া ও সমর্থন দিবেন সেই প্রত্যাশাই করি। দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সারাজীবন নিবেদিত প্রান হয়ে দলের এবং চাঁদপুরবাসীর জন্য আমৃত্যু কাজ করে যাব, ইনশাল্লাহ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় কুমার ভৌমিক, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, সাবেক সভাপতি শরীফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সোহেল রুশদী, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, চাঁদপুর ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক কেএম মাসুদসহ জাতীয় এবং স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১৫ অক্টোবর ২০২২

Share