বিশাল জমিতে সারি সারি বাঁধাকপি, ফুলকপি আর টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে চাষি আলহাজ্ব মো. আব্দুল হাই এর মুখের হাসি বিস্তৃত হয়।
তিনি বলেন,২৯ বছর আগে সৌদি আরব থেকে এসে সবজি চাষ শুরু করি, তখন এমন সাফল্য আসবে ধারণা করতে পারিনি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে গুলিশা গ্রামের সফল চাষি আলহাজ মো. আব্দুল হাই এখন স্থানীয় কৃষকদের জন্য দৃষ্টান্ত। বর্তমানে তিনি ১ একর ৭০ শতাংশ জমিতে বছরে কমপক্ষে সবজি, ফল ও মাছ চাষ করে আয় করছেন আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা।
আব্দুল হাই বর্তমানে চাষ করেন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওরকপি, বাহুবলী টমেটো, ব্লাক টমেটো, হাইটম, ললিতা আলু ডায়মন্ড, উপসী সিম, ইপসা-১ সিম ও ইপসা-২ সিম, বারিসিম, রেড কুইন পেপে ও রেড লেডী পেপে, মুলা তাকিজ জাপান, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, লাল শাক, ডাটা, দনিয়া পাতা দেশী ও বিলেতি, পালংশাক, করলা, বিজলি মরিচ ও দেশী মরিচ, ভেন্ডি, বরবটি।
ফলের মধ্যে রয়েছে- শপরি কলা, বাংলা কলা, সাগর কলা ও চাপা কলা, কাজী পেয়ারা, থাই পেয়ারা ও দেশী পেয়ারা, আমরূপালী, বানানা আম, হাড়িভাঙ্গা, বাড়ী-৩, বাড়ী-৪, লেংড়া, বাড়ী ফজলি, সবেদা, মাল্টা, কমলা, আমলকি, জলপাই,বাড়ী জলপাই,বাড়ী কামরাঙা, জামরুল, মন্ডফল সাদা ও সবুজ।
মাছের মধ্যে রয়েছে- তেলাপিয়া, রুই, কাতল, কার্প, ব্রিগেড। শবজি, ফল ও মাছ চাষে রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সার অনেক বেশি ব্যবহার করেন। এভাবে তিনভাগে বছরে কমপক্ষে বিভিন্ন সবজি, মাছ ও ফল চাষ করেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে তিনজন কাজ করেন জমিতে। তাঁর ছেলেও মাঝেমধ্যে সাহায্যের হাত বাড়ান।
আব্দুল হাই এর এই সাফল্যের পেছনে কৃষি কর্মকর্তাদেরও ভূমিকা আছে। তারা তাঁকে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে থাকেন। তার চাষে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে তিনি কৃষি বিভাগের সহায়তা নেন। তাঁর সাফল্য দেখে ওই এলাকার অর্ধশতাধিক চাষি বর্তমানে সবজি, ফল চাষ করছেন। অনেকেই তাঁর কাছে পরামর্শের জন্যও আসেন।
সম্প্রতি গুলিশা গ্রামে গেলে কথা হয় মো. আব্দুল হাই চাঁঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমি সৌদি আরবে ৭ বছর থাকার পর ১৯৯২ সালে দেশে আসার পর বেকার হয়ে যাই। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এখন আমার কিছু করতে হবে। আর শিক্ষিত লোক কৃষি কাজে আসে না। কোন কৃষক শিক্ষিত হলে দেশ ও জাতি এগিয়ে যাবে। এচিন্তা করে আমি কৃষি জগতে আসলাম। তখন আমি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিলাম। চাষাবাদ শুরু করলাম। গাজর গাছ একসময় এলাকার মানুষ চিনতো না। আমি দোহার, মানিকগঞ্জ, সাটুরিয়া গিয়ে সরকারিভাবে গাজর চাষের উপর প্রশিক্ষণ নেই। পরে আমি গাজর চাষ করে সাফল্য অর্জন করলাম। এখন এলাকার মানুষ গাজর চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। একসময় এলাকার মানুষ ভালো জাতের টমেটো চাষ জানতো না, এখন তারা আমার কাছ থেকে শিখে চাষ করে। আসি যে চমেটো চাষ করেছি, সেই টমেটো ৩ মাস ঘরে সংরক্ষণ করা যাবে নষ্ট হবে না।
তিনি আরো বলেন, আমি মৎস্য অধিদপ্তরে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ২টি ঝিলে মাছ চাষ করছি। কৃষি বিভাগের উপর প্রশিক্ষণ নিকে আমি বাংলাদেশেন অধিকাংশ জেলায় গিয়েছি। আমাদের এলাকায় মাল্টা চাষ হবে তা জানতাম না। আমি ময়মনসিংহ থেকে বাড়ী-৩ একটি মাল্টার চারা এনে লাগিয়েছি।এরপর দেখলাম ভালো ফলন হয়েছে। এরপর থেকে আমি মাল্টার চাষ শুরু করলাম। আমি ভাবলাম কৃষি ক্ষেত্রে ভালো কোন মডেল উৎপান করতে পারলে এলাকায় সকলের কাছে গ্রহণ যোগ্য হবে। সবাই সেই কাজে উদ্বুদ্ধ হবে। এজগতে এসে নিজেকে সফল মনে করছি।
আব্দুল হাই বলেন, সরকার আমার এ প্রজেক্টের দিকে নজর দিলে, আমি আরো উদ্বুদ্ধ হতাম। দেশ, জাতি ও এলাকাবাসী উপকৃত হতো।
প্রতিবেশী কৃষক আনোয়ার, সবুজ মীর, মোক্তার মীর বলেন, আব্দুল হাই এর ক্ষেতের ফসল দেখে সবজি চাষের প্রতি আমাদের আগ্রহ জন্মেছে। আমরাও সবজি, মাছ ও ফল চাষ করে সাফল্য পায়েছি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সোহাইল আহমেদ জানায়, বালিয়া ইউনিয়নে আমাদের ৩ জন কর্মকর্তা রয়েছে। তারা সবসময় তাকে কৃষিতে ভাল ফলনের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তিনি যদি আমাদের প্রদর্শনীর আওতায় পড়েন তাহলেও আমরা তাকে সার, বিজ বিতরণ করব। এছাড়া তিনি কৃষিতে উচ্চমূল্যের ফলনের জন্য আমাদের পরামর্শ পাবেন।
সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট,৭ মার্চ ২০২১