প্রবাসী আয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড

সমাপ্ত বছরে বাংলাদেশের প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার (২৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন) সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন।

এর আগে এত বড় অংকের রেমিট্যান্স কোনো বছরে আসেনি অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি এক বছরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আহরণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে প্রবাসী আয় তার আগের বছরের (২০২৩ সালের ) চেয়ে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বা ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের ১২ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি (২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলার।

এছাড়া ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৬৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। একক মাসে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আগে কখনো আসেনি। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার এসেছিল ওটাই ছিল একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

এছাড়া আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গত ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৫ কোটি ডলার বা ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি কোটি ডলার।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অন্যতম উপাদান হলো প্রবাসী আয়, রাপ্তানি আয় ও বিদেশি ঋণ। তবে এর মধ্যে প্রবাসী আয় ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না, আবার কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। কিন্তু রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে রিজার্ভ বাড়ে। অর্থনীতি শক্তিশালী হয়।

গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে যা বছরের শেষ মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এসময় প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। এর ফলে ২০২৪ সালের সার্বিক পুরো বছরে রেকর্ড পরিমান প্রবাসী আয় এসেছে।

২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ২১১ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারি-২১৬ কোটি ডলার, মার্চে ১৯৮ কোটি, এপ্রিলে ২০৪ কোটি, মে ২২৫ কোটি, জুন মাসে ২৫৩ কোটি, জুলাইয়ে দেশে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৪০ কোটি ন‌ভেম্ব‌রে ২২০ কোটি এবং সবশেষ ডিসেম্বর মাসে এসেছে ২৬৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার, ২০২৩ সালে এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার, ২০২২ সালে আসে ২ হাজার ১২৯ কোটি, ২০২১ সালে ছিল ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার। ২০২০ সালে রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ১৭৪ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে আসে এক হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার। এর আগে ২০১৮ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৫৫৫ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে এসেছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগের বছর ২০১৬ সালে ছিল এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। ২০১৫ সালে এসেছে এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। আর ২০১৪ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডি‌সেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

এর আগে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রারর রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রার যার পরিমাণ দুই লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। রেমিট্যান্স অংক এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিল। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

প্রবাসী আয়ের জোরালো প্রবাহের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬১০ কোটি ডলার (২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব)। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ১৩৪ কোটি ডলার। দীর্ঘদিন পর বিপিএম৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ দুই হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

চাঁদপুর টাইমস
জানুয়ারি ২, ২০২৫
এজি

Share