সুন্দরী ডায়নার প্রেমে প্রতারিত অর্ধশতাধিক প্রবাসী

তিনটি অক্ষরে নাম হলো ডায়না আক্তার। সুন্দরী ও বহুরূপী লাবণ্যময় এক রহস্যময়ী তরুণী। যার রূপ ও প্রেমের সাগরে ডুবেই প্রতারিত হচ্ছে দেশ-বিদেশের অর্ধশতাধিক যুবক। ভয়ঙ্কর সুন্দরী বহুরূপী ডায়নার প্রেমের ফাঁদে পড়ে সৌদি আরব, কাতার, ওমান, দুবাই, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, ইতালি, ইরাক, ইরান ও গ্রিস প্রবাসীসহ দেশে অবস্থানরত বিত্তশীল পরিবারের যুবক নিঃস্ব হয়েছেন।

প্রেমকে পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৌদি প্রবাসীদের সঙ্গে খাতির জমাতেন। কখনো আবার সংসারের আর্থিক সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন অনেক টাকা। দেশে ফিরলে তাদের সঙ্গে দেখা করতেন নীরবে। একান্তে সময় কাটিয়ে গোপনে ছবি তুলতেন। পরে সেই অন্তরঙ্গ ছবি দেখিয়ে করতেন বিয়ে।

ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন নগদ টাকা-পয়সা। তার পুরো পরিবারের সবাই এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই পরিবারটিকে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। বহুরূপী ডায়না আক্তার নানা তালবাহানা করে সুকৌশলে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এ ঘটনায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

এ আলোচিত ঘটনার রহস্যময়ী তরুণী হলেন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক শিল্পনগরী উপজেলার জাউয়া বাজার ইউনিয়নের মুলতানপুর গ্রামের ফনা উল্লা ও দিলা বেগমের কন্যা ডায়না আক্তার (৩০)।

জানা যায়, ফনা উল্লা ও দিলা বেগম দম্পতির ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলে। ১৫ সদস্য একটি প্রতারক চক্র গঠন করে ডায়নার বড় বোন সৌদি প্রবাসী গৃহকর্মী রিনা বেগমের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে অনলাইনে ভিডিওকলের মাধ্যমে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ প্রবাসী ১২টি দেশের অর্ধশতাধিক যুবক প্রতারিত করেছেন।

যুবকদের প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে অর্থ-লুট, প্রতারণা-ব্ল্যাকমেইল, জালিয়াতি ও নিরীহ লোকদের হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের নানা অসামাজিক কার্যকলাপের ছাতকে বহুলালোচিত সৌদি প্রবাসী গৃহকর্মী রিনা বেগম, তার স্বামী আলী হোসেন, আপন ভাই ইমাদ উদ্দিন, ছোট বোন রোবেনা ও ডায়না আক্তারের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিল।

এসব ঘটনার প্রতারক চক্রের মূল হোতা ও প্রধান সহযোগী সৌদি গৃহকর্মী রিনা বেগম ও তার স্বামী আলী হোসেন। গৃহকর্মী রিনা বেগম ফলা উল্লা’র ২য় মেয়ে। রিনা বেগমকে একই উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের মামনপুর গ্রামে আলী হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দিলেও সে ঘর জামাই হিসেবে ফনা উল্লা’র বাড়িতে বসবাস করে। বিয়ের কিছুদিন পর আলী হোসেনের স্ত্রী গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে চলে যায়।

স্ত্রী প্রবাসে থাকার সুযোগে আলী হোসেন তার শ্যালিকা রোবেনা ও ডায়নার বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘরজামাই আলী হোসেন স্ত্রী প্রবাসে থাকায় স্ত্রীকে ব্যবহার করে সৌদি প্রবাসে বসবাসরত টাকাওয়ালা যুবকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন।

গৃহকর্মী রিনা ও তার স্বামী আলী হোসেনের মূল টার্গেট সম্পদশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী যুবক। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথা মালার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলে টার্গেটকৃত যুবকদের।

২০১৯ সাল থেকে গৃহকর্মী রিনা সৌদি যাওয়ার পর কিছু সংখ্যক প্রবাসী যুবকদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে প্রথমে সে নিজে, পরে তার আপন ছোট বোন রোবেনা ও ডায়না আক্তারকে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তাদের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘায়িত হলে ভিডিওকলে ডায়না আক্তার ও রোবেনা তাদের শরীর দেখিয়ে যুবকদেরকে আকৃষ্ট করে।

সুকৌশলে ভিডিওকলের কিছু অংশ স্ক্রিন রেকর্ড রেখে যুবকদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি দিয়ে তা অনলাইনে প্রকাশ করার কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব টাকা গৃহকর্মী রিনা ও তার স্বামী আলী হোসেন, রিনার বড় ভাই জয়নাল ও ইমাদ মিলে ডায়না আক্তার ও রোবেনাকে জিম্মি করে তাদের ব্ল্যাকমেইলের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন।

গত জুন মাসে প্রথম সপ্তাহে ডায়না আক্তার তার পরিবারের জিম্মিদশা থেকে সুকৌশলে বের হয়ে রাতের আধারে পিত্রালয় থেকে পালিয়ে মৌলভীবাজার জেলাধীন বড়লেখা উপজেলার আব্দুল গফুরের ছেলে সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিলের কাছে চলে যায়। পালিয়ে যাবার ঘটনায় তার বড় ভাই জয়নাল বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি অপহরণ নাটক সাজিয়ে এলাকার খাদিজা ও সাবানা বেগম নামের দুটি নিরীহ গৃহবধূর নামে একটি অভিযোগ থানায় দায়ের করেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশ-বিদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক যুবকের প্রতারণার রহস্যময় ঘটনা বেরিয়ে আসছে।

এ চক্রে প্রতারিত যুবকরা হয়েছেন- মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সৌদি প্রবাসী আব্দুল জলিল, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার গ্রিস প্রবাসী হাছান তালুকদার, মালয়েশিয়া প্রবাসী আব্দুর রহিম, পর্তুগাল প্রবাসী তুফায়েল আহমদ, কাতার প্রবাসী রুকন উদ্দিন, দুবাই প্রবাসী আলী আকবর, ওমান প্রবাসী নোমান আহমদ, ইতালি প্রবাসী ছাদিকুর রহমান, ইরান প্রবাসী মকবুল আলী, ইরাক প্রবাসী মিছবাহ উদ্দিন ফকিরসহ দেশে-বিদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক যুবক। এদের কাছ থেকে বিভিন্ন তালবাহানা দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আলী হোসেন-জয়নাল চক্র।

পুলিশ জানায়, সৌদি গৃহকর্মী রিনা বেগম ও তার স্বামী আলী হোসেন, জয়নাল, ইমাদ চক্রের বেপরোয়া তৎপরতা বৃদ্ধির কারণে দেশ-বিদেশের অনেক যুবক প্রতিনিয়তভাবে প্রতারিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ডায়না আক্তারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সে জানায়, জিম্মিদশা থেকে মুক্তি লাভ ও নিজের ভবিষ্যত বিবেচনায় রাতের আধারে নিজ গৃহ ত্যাগ করেছেন।

সে জানায়, তার বোন সৌদি প্রবাসী রিনা বেগমের স্বামী আলী হোসেন প্রায় রাতে তার রুমে অনধিকার প্রবেশ করে বিভিন্ন টাকাওয়ালা যুবকের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আনার জন্য জোরপূর্বক বাধ্য করেছে।

ডায়নার দাবি, এ বিষয়ে তাকে মানা করলে সে আমাকে এসিড নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারবে এবং তার সঙ্গে রাতে না ঘুমালে আমাকে আমার মা-বাবার সামনে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করত। এসব নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আর কোনো যুবকের সঙ্গে প্রতারণা না করার উদ্দেশ্যে আমি নিজ স্বেচ্ছায় ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছি। কেউ আমাকে অপহরণ করেনি বলে দাবি করে।

ওরা আমাকে উলঙ্গ করে মারপিট করে ইমো মাধ্যমে সৌদি আরবের একাধিক যুবকের কাছে ছবি দিয়ে প্রথমে প্রেম তার বিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে দুটি সিম বিকাশের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব বিষয় প্রতিকারের দাবি ডায়না আক্তারের।

এব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা এহতেশাম তালুকদার বলেন, মেয়েটির সঙ্গে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত একাধিক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক নিয়ে একটি ছেলের সঙ্গে সে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় সন্দেহের তীর বাদীর দিকে।

এ ব্যাপারে ওসি শেখ নাজিম উদ্দিন জানান, নিখোঁজ ভিকটিমকে উদ্ধারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। শীঘ্রই তাকে উদ্ধার করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন ডেস্ক, ২৪ জুলাই ২০২১

Share