Home / আন্তর্জাতিক / প্রবাস / করোনায় বিভিন্ন দেশে ১১০৬ প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু
প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু
ফাইল ছবি

করোনায় বিভিন্ন দেশে ১১০৬ প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু

দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর জানা যায় ১৮ মার্চ দুপুরে। ওই​ দিনই সন্ধ্যায় জানা গেল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর। সেটাই ছিল দেশের বাইরে প্রথম কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু।

এরপর প্রায় প্রতিদিনই নিউইয়র্কে বাংলাদেশির মৃত্যু হচ্ছিল। একই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছিল নতুন নতুন দেশ, যেখানে একের পর এক প্রবাসী আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছিলেন। গতকাল শনিবার পর্যন্ত মোট ১৯ দেশে অন্তত ১ হাজার ১০৬ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাঁদের স্বজনদের কাছ থেকে এসব মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন সৌদি আরবে। গত শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে ৩৬০ জন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন। এরপরই আছে যুক্তরাজ্য। সে দেশে মারা গেছেন ৩০৫ জন। শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশির মৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হলেও গত ১০ দিনে নতুন কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২৭২ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫০ জন, কুয়েতে ৪২ জন, কাতারে ১৮ জন, ইতালিতে ১৪ জন, কানাডা ও বাহরাইনে ৯ জন করে, সুইডেনে ৮ জন, ফ্রান্সে ৭ জন, স্পেনে ৫ জন মারা গেছেন। ভারত, মালদ্বীপ, পর্তুগাল, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশির করোনায় মারা যা​ওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হলেও রিয়াদ থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে নিহত বাংলাদেশিদের সম্পর্কে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের মধ্যে পার্থক্যটা খুব বেশি। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার পর্যন্ত মারা গেছেন ১১৫ জন বাংলাদেশি। তবে সরকারি ও বেসরকারি সূত্র মিলিয়ে আমাদের তথ্য অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা এরই মধ্যে ৩৬০ জন ছাড়িয়ে গেছে।’

রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ জানান, সৌদিতে এখন পর্যন্ত করোনায় অন্তত ১৪ হাজার বাংলাদেশি সংক্রমিত হয়ে গেছেন। এঁদের মধ্যে বড় অংশটি সুস্থ হয়ে উঠেছে। তবে নতুন করে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর ফলে দুই সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে সংক্রমিত বাংলাদেশির সংখ্যা এক জায়গায় আটকে থাকছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে বিদেশে থাকা অনেকের পরিবারের সদস্যদের কাছে বাইরে থেকে ফোন আসা মানেই যেন নতুন কোনো দুঃসংবাদ। ঢাকার ব্যবসায়ী কাজী মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দীন গতকাল প্রথম আলোকে বললেন, নিউইয়র্কে গত এপ্রিলে তাঁর দুই ভাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

বড় ভাই কাজী মোহাম্মদ আশরাফউদ্দীন ২৫ এপ্রিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অবশ্য ছোট ভাই এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘নিজের ভাই ছাড়াও আমার কাছের কয়েকজন মানুষ নিউইয়র্কে করোনায় মারা গেছেন। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে নিউইয়র্ক থেকে ফোন এলে মনে হতো, আবার কোনো দুঃসংবাদ শুনতে যাচ্ছি।’

এখন পর্যন্ত বিদেশে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়াদের ওই সব দেশেই দাফন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশহুদ আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত এখানে যাঁরা করোনাভাইরাসে মারা যাচ্ছেন, বিদেশি নাগরিক হলে এখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই দেশের মিশনকে নিহতের তথ্য জানায়। এরপর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্তৃপক্ষ দাফনের ব্যবস্থা করছে।

আট দেশে ৫৮,৩০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশে আক্রান্তের নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন সিঙ্গাপুরে। যাঁদের বেশির ভাগই শ্রমিক। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ২২ হাজার। এঁদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন। তবে কেউ মারা যাননি। সিঙ্গাপুরে প্রথম আক্রান্ত বাংলাদেশি নাগরিকের শারীরিক জটিলতার কারণে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। দুই মাসের বেশি সময় ধরে তাঁকে আইসিইউতে রেখে সুস্থ করে তুলেছে সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ।

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ডরমিটরিতে অভিবাসীদের মধ্যে এপ্রিলের শেষে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ ছড়ানোর আগে পর্যন্ত দেশটি পরিস্থিতি খুব ভালো সামাল দিয়েছে। তারা যেভাবে ভেবেছে, পরিস্থিতি তেমন দিকেই গেছে। কারণ, তারা বেশ আগেভাগেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নেমে পড়েছিল। সার্সের অভিজ্ঞতাও তাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশি কর্মীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ব্যাপক থাকায় সিঙ্গাপুর সরকার যথেষ্ট সতর্ক।

রাষ্ট্রদূত জানান, সিঙ্গাপুরে কারও দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ১৪ দিনের জন্য সঙ্গনিরোধে (কোয়ারেন্টিন) পাঠানো হয় নির্ধারিত অবকাঠামোতে। কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাঁকে পাঠানো হয় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিশেষায়িত ক্যাম্পে। ১১ দিন পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁকে পাঠানো হয়েছে নির্দিষ্ট হোটেলে, প্রমোদতরিতে কিংবা সরকারি অ্যাপার্টমেন্টে।

সিঙ্গাপুরের বাইরে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে ১৪ হাজার, কাতারে ১২ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ও কাতারে ৪ হাজার করে, মালদ্বীপে ১ হাজার, বাহরাইনে ১ হাজার এবং ইতালিতে ৩০০ বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ওই আট দেশে গতকাল পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৩০০ জন আক্রান্ত বলে খবর পাওয়া গেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে কত বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই তিন দেশের প্রবাসী এবং দেশে তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিয়েছেন। অবস্থা খারাপ হওয়ার পর হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের অনেকে মারা গেছেন। ধারণা করা ​হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ১৫ থেকে ১৮ হাজার হতে পারে।

বার্তা কক্ষ, ২১ জুন ২০২০