বিশেষ সংবাদ

প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সাঈদী পুত্রের ফেসবুক স্টাটাসে তোলপাড়

‘বিচারপতিদের অবসরের পর রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী’ প্রধান বিচারপতি এ বক্তব্য থেকে সরে না আসলে পুরোনো অনেক রায় বাতিল হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত

‘বিচারপতিদের অবসরের পর রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী’ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এ মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন যুদ্ধাপরাধের মামলায় আমুত্যু কারাদ-প্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। এজন্য তিনি প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানান এবং একইসঙ্গে তার বাবার বিরুদ্ধে লেখা রায় বাতিলের দাবি জানান।

তিনি বলেছেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন তার অবসরের প্রায় ১৫ মাস পর এবং আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন মানিক তার অবসরে যাওয়ার প্রায় ৩/৪মাস পর সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়ে স্বাক্ষর করেন।

সম্প্রতি মাসুদ সাঈদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সমর্থনে তার এ মন্তব্য এবং দাবি জানান।

মাসুদ সাঈদী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘অভিনন্দন মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আপনাকে। অবসরপ্রপ্ত বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবেন না, আপনার এই বক্তব্যই সঠিক। আপিল বিভাগের সাবেক শাচৌ মানিককে (শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক) আর কোনো রায় লিখতে দিবেন না আপনি, এটাও আপনার সঠিক সিদ্ধান্ত।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর অবৈধভাবে ত্রয়োদশ সংশোধনীর যে রায় লিখেছেন এটাও বাতিল করুন। একইভাবে সাবেক বিচারক শাচৌ মানিক অবসরে থাকাকালীন সময়ে অবৈধভাবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায় লিখেছেন, তাও অবৈধ, দয়া করে সেটাও বাতিল করুন।

সংবিধান সমুন্নত রাখার স্বার্থে এভাবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের লেখা যত রায় আছে ১৫তম, ১৩তম, ৫ম, ৭ম সংশোধনী মামলার রায়, মাজদার হোসেন মামলার রায়সহ সব বাতিল করুন। যেসব ত্রুটিপূর্ণ অবৈধ রায় পাওয়া যাবে, সব বাতিল করে পুনরায় বিচারের ব্যবস্থা করুন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘বর্তমান প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনুসারে অবসরে গিয়ে রায় লেখা অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী। তাই সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন তার অবসরের প্রায় ১৫ মাস পর এবং আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন মানিক তার অবসরে যাবার প্রায় ৩/৪মাস পর বাবার রায় লিখে তাতে স্বাক্ষর করেন। সুতরাং বাবার আপিলের রায় অবৈধ ও বাতিল।’

মাসুদ সাঈদী আরো বলেন, ‘অবসরে রায় লেখা অবৈধ ও বাতিল। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি রুল দিলেই আমরা মামলাটি নিয়ে আবার আপিলে যাবো। অন্যদিকে তিনি রুল জারি না করলে আমরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করবো। তবে সরকারের এক মন্ত্রী (সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ) কিছুদিন আগে বলেছিলেন প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ধরে পুরনো রায় বাতিল চেয়ে রিট করলে তা খারিজ হয়ে যাবে। তাই রিট করলেও তা সরকারিভাবে খারিজ হয়ে যাবে। তবুও যেহেতু প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে এখনো অনড় রয়েছেন, সেজন্য আমরাও অপেক্ষা করছি প্রধান বিচারপতি রুল দিলেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপে যাবো।’

এদিকে অনেক আইনজ্ঞের দাবি- প্রধান বিচারপতি তার দেয়া মন্তব্য থেকে যদি সরে না আসেন তবে সংবিধান সমুন্নত রাখার স্বার্থে এভাবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের লেখা যত রায় আছে, বিশেষ করে ৫ম, ৭ম ও ১৩তম সংশোধনী মামলার রায়, মাজদার হোসেন মামলার রায়সহ সব রায় ‘বাতিল’ করতে হবে। কেননা সংবিধানের ৫ম সংশোধনী অনুসারে ‘১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় কর্মকা-কে বৈধতা দান’ করা হয়েছিলো। যা কিনা পরবর্তীতে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত ও বাতিলকৃত করা হয়। সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক সংবিধানের ৭ম সংশোধনীকেও অবৈধ ঘোষণা ও বাতিল করা হয়। বাতিলকৃত এই সংশোধনীতে বলা হয়, ‘১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ই নভেম্বর পর্যন্ত সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন সময় প্রণীত সব ফরমান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, নির্দেশ ও অধ্যাদেশসহ অন্যান্য সকল আইন অনুমোদিত।’

এছাড়াও সুপ্রিমকোর্টের আরেক রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন’কে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। তাই প্রধান বিচারপতি যে মন্তব্য করেছেন তাতে করে সংবিধানের ও সুপ্রিমকোর্টে ‘বাতিল’ বিতর্কটি এখন এসব বিষয়কেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ধরে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোনো প্রসিকিউটর মন্তব্য করতে রাজি হননি। মামলাটি যেহেতু আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে সেহেতু এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মন্তব্য করবেন বলে প্রসিকিউশন জানায়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাঈদীর রায় প্রসঙ্গে বলেন, ‘নিজ নিজ স্বার্থ পূরণের জন্যই প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। সময় আসলে সব বিতর্ক স্পষ্ট হয়ে যাবে।’

সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী বাতিল বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন চুপচাপ বসে আছি। কারণ প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পর অবসরে লেখা সকল রায় বাতিল হয়ে গেছে। এখন পুরো দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির ওপর। তিনি এখন সকল অবৈধ রায় বাতিল করবেন।’

অন্যদিকে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবিএম নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অবসরে রায় লেখা অবৈধ এমন কথা আইন ও সংবিধানের কোথাও উল্লেখ নেই। তাই প্রধান বিচারপতির কথা এখানে যুক্তিযুক্ত নয়’। (বাংলামেইল)

: আপডেট ০৭:০৬ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বুধবার

ডিএইচ

Share