Home / জাতীয় / নির্বাচনে মাঠে থাকবে ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ
নির্বাচনে মাঠে থাকবে ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ

নির্বাচনে মাঠে থাকবে ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য নির্বাচনের সময় মাঠে থাকবে পুলিশের ১ লাখ ৭০ হাজার সদস্য। ২ লাখ ১০ হাজারের ফোর্সের ৮০ ভাগ সদস্য এদিন ব্যস্ত থাকবে নির্বাচনী দায়িত্বে। কাউকে দুই শিফট আবার কাউকে আরও বেশি সময় ডিউটি করতে হবে।

নির্বাচনে প্রার্থী, ভোটার, প্রিসাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসারসহ প্রত্যেককে নিরাপত্তা দিতে ইতোমধ্যে নির্বাচনী ছক তৈরি করেছে পুলিশ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, র‌্যাব সদস্যরা মাঠে থাকলেও নিরাপত্তার মূল দায়িত্ব থাকবে পুলিশের ওপর।

ইতোমধ্যে সারাদেশের বিভাগীয় রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও জেলা পুলিশ সুপারদের (এসপি) ঢাকায় দুই দফা ব্রিফ করেছে নির্বাচন কমিশন ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সারাদেশে নির্বাচন আগেপরে কমবেশি ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। তাদের মধ্যে কেউ ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা মাঠে কাজ করবেন, কেউ দুই শিফটে ১৮ ঘণ্টা, আবার কাউকে এর চেয়েও বেশি দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের ২-১ দিন আগ থেকে নির্বাচনের ২-৩ দিন পর পর্যন্ত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, কেন্দ্রে ব্যালট ও ব্যালট বাক্স আনা-নেয়াসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। এ গুরুত্বপূর্ণ সময় অতি জরুরি এবং একান্তই পারিবারিক কোনো সমস্যা না থাকলে কাউকে ছুটি দেয়া হচ্ছে না।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর অংশ হিসেবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ২৪ তারিখ থেকে প্রতি জেলায় ছোট আকারে সেনাবাহিনীর টিম পাঠাবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন। সেনাবাহিনীর প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, সেনাবাহিনী ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষে ঢুকতে পারবে না। তবে রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চাইলে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিমের সদস্যরা প্রয়োজনে ভোট কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভোট কেন্দ্র পাহারায় মেট্রোপলিটন এলাকার সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশ, আনসারের মোট ১৬ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ ৩-৫ জন, অঙ্গীভূত আনসার ১১ জন ও গ্রাম পুলিশের একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৭ জন ও অস্ত্রসহ ৪-৬ সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবে ন্যূনতম চারজন।

মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৪ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ একজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের দু-একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৫ জন ও অস্ত্রসহ তিন-চারজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন; এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন ন্যূনতম দু ‘জন।

অন্যদিকে পার্বত্য এলাকা, হাওর, দ্বীপাঞ্চলকে বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৫ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ দু’জন, আনসার ১২ জন (অস্ত্রছাড়া) ও গ্রাম পুলিশের ১-২ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৬ জন ও অস্ত্রসহ ৪-৫ সদস্য নিযুক্ত থাকবেন; এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন ন্যূনতম তিনজন।

ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোট গ্রহণের দু’দিন আগে এবং ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিনসহ চারদিন মাঠে থাকবেন। আনসার সদস্যরা ভোটগ্রহণের তিন দিন আগে মাঠে নেমে পরের দিন পর্যন্ত থাকবেন।

নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও দু’জন নিহতের ঘটনাও ঘটেছে।

নির্বাচনী পরিবেশ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা কিছু প্রয়োজন বাংলাদেশ পুলিশ তা করছে। নির্বাচন কেন্দ্রভিত্তিক যেসব নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন তা নেয়া হয়েছে। আশা করছি, পুলিশি নিরাপত্তায় নির্বাচন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ হবে।’

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সারাদেশে ১ হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তাদের টহল দিতে দেখা গেছে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকে পুলিশ বিএনপির প্রায় ১৯০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ দলটির। সোমবার তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে একটি তালিকাও দিয়েছে তারা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, পুলিশ সরকারের নির্দেশে কারণ ছাড়া বিএনপি নেতাদের হয়রানি ও গ্রেফতার করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এআইজি সোহেল রানা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ একটি পেশাদার বাহিনী। পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করছে। পুলিশ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইন মেনে দায়িত্বপালন করছে। মামলা দায়ের, আসামি গ্রেফতার পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। পুলিশ যা করছে আইন মেনেই করছে। পুলিশ ব্যক্তি কিংবা কারো পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করছে না।’ (জাগো নিউজ)

বার্তা কক্ষ
২১ ডিসেম্বর,২০১৮