জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি : ওএমএসে আসছে ১০ টাকা কেজি দরের চাল

করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় ওএমএসে পাওয়া যাবে ১০ টাকা কেজি দরের চাল। চলতি মাস থেকেই শুরু হচ্ছে সরকারের এ কর্মসূচি। চলবে জুন পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজধানীর খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যই নেয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ। মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। আজকালের মধ্যেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম বুধবার বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি চলছে সেটা একপ্রকার লকডাউন বলা যায়। কারণ বাস, লঞ্চ, রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজন বাসায় থাকতে হচ্ছে। ফলে হতদরিদ্র লোকজন বেকার হয়ে পড়েছেন। এতে তাদের জীবনধারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে এ কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছি।’

মঙ্গলবার খাদ্য সচিবকে পাঠানো অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়- ‘বর্তমানে বিশ্বের ১৯৯টি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওএমএসের মাধ্যমে ভোক্তাপর্যায়ে কেজিপ্রতি ১০ টাকা দরে চাল বিতরণের ঘোষণা দেন। এমতাবস্থায় চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) অবশিষ্ট তিন মাস (এপ্রিল-জুন ২০২০) সময়ের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস বা ওপেন মার্কেট সেল) খাতে চালের গুদাম মূল্য কেজিপ্রতি ২৮ টাকার পরিবর্তে ৮ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৩০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হল।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওএমএসের দায়িত্বে থাকা খাদ্য অধিদফতরের পরিচালক (সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন) আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ওএমএসে ১০ টাকা কেজি দরের চাল দেয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে ওএমএসে চালের দাম ১০ টাকা কেজির বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে খাদ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অধিদফতরে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে। এরপরই এ কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হবে।’

জানা গেছে, ওএমএসের (খোলাবাজারে বিক্রি) মাধ্যমে নির্দিষ্ট দোকান ও ট্রাক থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে একটি পরিবার একবারে সর্বোচ্চ ৫ কেজি করে চাল কিনতে পারেন। বর্তমানে গ্রামীণ এলাকায় কার্ডধারী প্রায় ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হচ্ছে।

কিন্তু ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এ কার্যক্রম চালু নেই। এক্ষেত্রে নগরবাসীর জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে খোলাবাজারে (ওএমএস) ১০৭টি দোকানে ও ১৩ ট্রাকে করে এ চাল বিক্রি করা হয়।

চালের পাশাপাশি আটাও বিক্রি করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন ২ টন ৩০ টাকা কেজিতে চাল ও ১৮ টাকা কেজিতে আটা দেয়া হচ্ছে। তবে ৩০ টাকা কেজির চাল মোটা হওয়ায় ওএমএসের চাল কেউ কেনেন না। এবার ৩০ টাকা কেজির চাল ১০ টাকা কেজিতে দেয়া হলে রাজধানীর কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষ এর সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও জানান, শুক্রবার ছাড়া সরকারি ছুটিতেও ওএমএস চালু রাখা হবে।

জানা গেছে, দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিন সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। মঙ্গলবার এ সময়সীমা আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এ সময়ে অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। শহর এলাকায় বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে শহর এলাকায় বসবাসরত খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

হকার, রিকশা, ভ্যানচালক, দিনমজুর, বাস ড্রাইভার, হেলপারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হতদরিদ্র মানুষকে এ সুবিধা দিতেই মূলত এ কর্মসূচি চালু করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ৩০ টাকা দরে খোলাবাজারে (ওএমএস) এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে ১ লাখ ৪০ হাজার টন চাল বরাদ্দ রয়েছে।

কিন্তু এবার বাজারে চালের দাম বেশি না হওয়ায় এর চাহিদা একেবারেই কম। তাই গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বরাদ্দকৃত চালের মাত্র ১ হাজার টন বিক্রি হয়েছে। বাকি চাল এখনও অবিক্রীত রয়ে গেছে।

এসব অবিক্রীত চালই আরও বেশি ভর্তুকি দিয়ে জরুরি অবস্থায় খোলাবাজারে দরিদ্র মানুষের কাছে ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে চায় সরকার। এজন্য সরকারকে অতিরিক্ত কোনো ভর্তুকিও দিতে হবে না।

কারণ চলতি বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ওএমএসের চাল বিক্রি না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এখন ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি করলে আগের বরাদ্দকৃত ভর্তুকি ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকায় হয়ে যাবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

ঢাকা ব্যুরো চীফ,২ এপ্রিল ২০২০

Share