প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মডেল ও অভিনয়শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বামী এহসান রহমান জিয়ার ফেসবুক পেজে তিনি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমার একমাত্র কন্যা প্রকৃতির সঙ্গে ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণভাবে অনুভব করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমার জানা নেই। তিনি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের একজন পরীক্ষিত, প্রকৃত ও সুযোগ্য অভিভাবক, এই ভূমিকার বাইরেও তিনি যে একজন মমতাময়ী মা, তা আবারও আমি নিজে একজন মা হিসেবে বুঝতে পেরেছি।’
নিরাপদ সড়কসহ কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার কাজী নওশাবা আহমেদ ঈদের আগের দিন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার কাজী নওশাবা আহমেদ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। তথ্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য তারিখ ১ অক্টোবর পর্যন্ত নওশাবার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বহাল থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কাজী নওশাবা আহমেদ। তিনি লিখেছেন, ‘দেশের সবাইকে ঈদুল আজহার বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনারা জানেন, আমাকে ঈদের আগের দিন বিকেলে নিম্ন আদালত জামিন প্রদান করেছেন। এর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ তার মানবিকতার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমি অভিভূত। আমার আইনজীবীদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।’
নওশাবা ধন্যবাদ জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। তিনি লিখেছেন, ‘পুলিশ, র্যাব, ডিবি, সাইবার ক্রাইম ইউনিট আর কাশিমপুর কারাগারে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্য, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স—যারা আমাকে অনেক সহমর্মিতার সঙ্গে প্রতিটি স্তরে হেফাজত করেছেন। তাদের প্রতি আমার অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা।’
নিজের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কাজী নওশাবা আহমেদ। তিনি লিখেছেন, ‘অভিনয়শিল্পী সংঘের প্রেসিডেন্ট এবং সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী, বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মী আর আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের বলতে চাই, আপনারা যারা গত কয়েক সপ্তাহ আমার পরিবারের পাশে থেকেছেন, ক্রমাগত সাহস জুগিয়েছেন, যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছেন, তাদের জন্য আমার অনেক ভালোবাসা। আপনাদের সবার নিঃস্বার্থ প্রার্থনার কারণে আমার মেয়ে প্রকৃতি ঈদের সারাটা দিন তার মাকে কাছে পেয়েছে।’
গ্রেপ্তারের ১৬ দিনের মাথায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় নওশাবা আহমেদ জামিন পান। গত মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এ আদেশ দেন। নওশাবার আইনজীবী আদালতে আবারও জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে কাজী নওশাবা আহমেদকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেওয়া হয়। এর আগে গত সোমবার অবশ্য আদালত তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করেন। অসুস্থ নওশাবাকে গতকাল আদালতে হাজির করে পুলিশ। সরেজমিনে দেখা যায়, নওশাবা হাঁটতে পারছেন না। বসেছিলেন হুইল চেয়ারে।
নওশাবাকে ৫ আগস্ট গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। সেদিন আদালত তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আরও দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। নওশাবাকে রিমান্ড নেওয়ার আবেদনে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি স্বীকার করেছেন যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ‘দুই ছাত্রের মৃত্যু এবং একজনের চোখ তুলে ফেলা’র কথা নিজের ফেসবুকে ছড়ান। এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে, তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোই নওশাবার উদ্দেশ্য ছিল।
৪ আগস্ট দুপুরের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ের কর্মীদের সংঘর্ষে জিগাতলা এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চলা সংঘর্ষে হেলমেট পরা একদল যুবককে দেখা গেছে। সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে অভিনেত্রী নওশাবা বিকেল চারটার দিকে ফেসবুক লাইভে আসেন। ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওর শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমি কাজী নওশাবা আহমেদ বলছি। আপনাদের জানাতে চাই, একটু আগে জিগাতলায় আমাদের ছোট ভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, দুজনকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোই নওশাবার উদ্দেশ্য ছিল বলে জানিয়েছে র্যাব। র্যাবের ভাষ্য, নওশাবা স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে আসার আগে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি জিগাতলা নিয়ে কথা বলার সময় উত্তরায় ছিলেন। রুদ্র নামের এক ছেলে তাঁকে লাইভ করতে বলেন। তাই তিনি উত্তরা থেকে লাইভ করেছেন।
ফেসবুকে গুজব ছাড়ানোর অভিযোগে ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে নওশাবাকে আটক করে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুজব ছাড়ানোর কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে র্যাব বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে এ মামলা করে নওশাবাকে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
প্রথম আলো