বিশ্বের কোনো সরকারি কলেজের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) প্রিন্সিপাল দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের পর তিনি বলেছেন তিনি “হেরে গেছেন।”
২০১৫ সালের ৯ জুন মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব নেন।
মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ওই কলেজটিতে ১৮ মাস দায়িত্ব পালনের পর চাকরি ছাড়তে তিনি বাধ্য হয়েছেন কারণ সেখানে তার পরিচয় নিয়ে তাকে অনবরত হয়রানি সহ্য করতে হয়েছে।
তিনি কলেজের দুজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের অভিযোগ এনে।
কিন্তু ৫১ বছর বয়স্ক ড: মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় কেন চাকরি ছেড়েছেন তা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
কলেজের শিক্ষকরা বলছেন তারা তার প্রশাসনিক নিয়মনীতির বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি নারী না পুরুষ সেটা তাদের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় ছিল না।
তার নিয়োগের সময় ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ওই কলেজে প্রিন্সিপাল হিসাবে তার নিয়োগ “অজ্ঞতার বিরুদ্ধে একটা বিজয়।”
পদত্যাগের পর মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন বেশ কিছু শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক তার সঙ্গে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন এর কারণ “তিনি ট্রান্সজেন্ডার”।
সহশিক্ষকরা অবশ্য বলেছেন তারা তার কার্যপরিচালনা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ছিলেন।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের অধিকার অর্জনের আন্দোলনেও একজন পরিচিত মুখ, বিভিন্ন সময়ে তাঁকে সেই আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় দেখা গেছে।
কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের প্রিন্সিপালের পদটি খালি হলে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পদের জন্য আবেদন করেন, এবং তারপর নিয়মমাফিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার শেষে তিনি ওই চাকরির জন্য মনোনীত হন।
মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ওই সময় বলেছেন, এই পদে নিযুক্ত হলে তিনিই হবেন সারা দেশে কোনও কলেজের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত প্রিন্সিপাল – চাকরিটা নেওয়ার আগে এমন কোনও ভাবনা তার মাথায় আদৌ কাজ করেনি।
বরং তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কৃষ্ণনগরে বদলি হলে নৈহাটিতে আমার ৯২ বছর বয়সী অসুস্থ বাবার দেখাশুনো করা সহজ হবে – চাকরিটা নেওয়ার পেছনে সেটাই ছিল আমার প্রধান উদ্দেশ্য!’
ভারতে প্রায় পাঁচ লক্ষ ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত ব্যক্তি রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। এখনও সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা সেভাবে নেই এবং মূলধারায় কাজ পাওয়া এখনও তাদের জন্য কঠিন। (বিবিসি)
নিউজ ডেস্ক
।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ৫ : ০০ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ শনিবার
ডিএইচ