পেকুয়ার ইউএনও’র বদলির আদেশ স্থগিত! কক্সবাজারে ত্রাণের ১৫ টন চাল উত্তোলনের পর গায়েব হওয়ার ঘটনায় প্রত্যাহার হওয়া পেকুয়া উপজেলার আলোচিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাতের বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ মে) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার জানিয়েছেন, ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয়ের ঘটনা তদন্তের স্বার্থে আপাতত ইউএনও’র বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটি একটি রুটিন বদলি। তাই যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। আপাতত ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পেকুয়ায়ই থাকছেন। এমন ঘটনা আমার ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। কে জানে কাল আমি বদলি হবো না।’
এ সময় সেই ইউএনও’র ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয়ের ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুর বদলে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘আসলে ওই ঘটনা তদন্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিভাগীয় অভিযুক্ত ইউএনও’র আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আছে। তাই তিনি আরো কয়েকদিন পেকুয়ায়ই দায়িত্ব পালন করবেন। এর পরই আগের নির্দেশনাটি কার্যকর হবে।’
প্রসঙ্গত, ২৭ এপ্রিল ত্রাণের চাল গায়েবের ঘটনা প্রকাশের পর এবং পেকুয়ার বারবাকিয়া হোসনে আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩০০ বস্তা চাল জব্দের ঘটনায় ‘পেকুয়ায় ত্রাণের ৩০০ বস্তা জব্দ চাল নিয়ে চলছে চালবাজি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে তদন্তে নামে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
এরপরই বেরিয়ে আসে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই মানবিক সহায়তা হিসেবে পেকুয়ার টেইটং ইউনিয়নে ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে ২৫ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ১৫ টন চকরিয়ার খাদ্য গুদামে মজুত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর, রিকশাচালক ও অসহায় দুস্থ পরিবারের জন্য সরকারের নতুন বরাদ্দ আসছে জেনে গুদাম খালি করতে ২০১৯ সালের বরাদ্দের সেই ১৫ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করতে গত ৩১ মার্চ টেইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম চৌধুরীর অনুকূলে পরিপত্র স্বাক্ষর করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাত। সেই সব চালের ৩ টন ৬ এপ্রিল, বাকি চাল ৯ এপ্রিল পৃথক স্বাক্ষরে তোলেন উল্লেখিত ইউপি চেয়ারম্যান।
তবে উত্তোলন করা চাল কী করা হয়েছে এ হিসাব ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা ইউএনও কারও কাছে নেই। দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়েও বরাদ্দকৃত ওই চালের কোনো হদিস মেলেনি এখনও।
ফলে সরকারি ত্রাণের এসব চালের হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়। চেয়ারম্যান ও দলীয় পদ থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়।
একই সঙ্গে ইউএনও সাঈকা সাহাদাতের বিরুদ্ধে ১৫ টন চাল কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় বৃহস্পতিবার তাকে বদলি করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা।