আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে এবং বাউন্ডারির ভেতর দিন দিনই বেড়ে চলছে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। যার কারণে পথচারীসহ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন রোগীরা।
হাসপাতালের বাউন্ডারীর ভেতর এবং তার বাইরের রাস্তায় বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রোগীদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। হাসপাতালের ভেতরে কোন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং না করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার তা নিষেধ করলেও তা কর্ণপাত করেননি চালকরা।
কর্তৃপক্ষের এমন নিষেধের পরেও দিনে এবং রাতের বেলায় হাসপাতালের বাউন্ডিরর বেতর সেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করছেন অ্যাম্বুলেন্স চালক ও হেলপাররা।
এমনও অভিযোগ রয়েছে যে বিভিন্ন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও হেলপাররা রাতের বেলায় বাউন্ডারির ভেতর গাড়ি পাকিং করে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ফিরে রোগীর লোকজনের সাথে ইভটিজিংয়ে লিপ্ত হন। এমন কি এদের ভেতর অনেকে হেলপার ও চালক সুযোগ পেলে হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং রোগীদের মোবাইল সেট চুরি করেও থাকেন।
দিন দিনই চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের সামনে বেড়ে চলছে এসব প্রাইভেট অ্যাম্বলেন্সের দৌরাত্ব। কেউ কেউ লাইন্সেস বিহিন ও ফিটনেস বিহিন গাড়ীকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করছেন।
চাঁদপুর শহর এবং বিভিন্ন উপজেলাসহ শহরের আশপাশের অনেক রোগীই চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন কবি নজরুল সড়কস্থ এ সরকারি হাসপাতালে। এখান থেকে অনেক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা ঢাকায় প্রেরণ করেন। আর কোনো রোগীকে ঢাকায় প্রেরণ করার কথা শুনলেই সেই রোগীর লোকজনের কাছে দৌড়ে এগিয়ে যান প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালক ও হেলপাররা।
অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী ও চালকরা রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় পৌঁছে দিতে ৪/৫ হাজার টাকা চুক্তি করে চালক ও হেলপাররা।
যাদের সাথে কথা মিলে যায় তারাই রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যান। কিন্তু সেখানেও রয়েছে অনেক রোগীর নানা অভিযোগ। কোনো কোনো অ্যাম্বুলেন্স চালক যেখানে রোগীকে রেফার করা হয় সে হাসপাতালে না নিয়ে তাদের পরিচিত হাসপাতালে নিয়ে যান। তার বিনিময়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক ওই হাসপাতাল থেকে ভালো কমিশন পান।
এমনকি চাঁদপুর সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীকে ঢাকায় আনা-নেয়ার ব্যাপারে অনেক সময় ওই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের নিজেদের মাঝে তুমুল ঝগড়ার সৃষ্টি হয় বলেও জানা যায়।
খবর নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে রোগী নিয়ে এসব অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বেশ কয়েকবার হাসপাতালের সামনে মারামারি এবং ঝগড়া করার ঘটনাও ঘটিয়েছে। তাদের এ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার আড়ালে দালালিতে রোগীরা ঢাকায় গিয়ে প্রতারিত হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রতিদিন হাসপাতালের বাউন্ডারির ভেতর এবং তার বাইরে রাস্তার উপর হাসপাতালের গেট থেকে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের গেট পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে অ্যাম্বুলেন্স রাখার কারণে যানবাহনসহ অসুবিধার মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ পথচারী এবং হাসপাতালে আসা রোগীদের।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মোঃ সফিউল আলম জানায়, এসব অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বাউন্ডারির ভেতর গাড়ি পার্কিং করার বিষয়ে তাদেরকে বার বার নিষেধ করা হয়েছে। তারপরেও তারা যখন সে নিষেধ অমান্য করে বাউন্ডারির ভেতর গাড়ি পার্কিং করেছে তখন এ ব্যাপারে বেশ, কয়েকবার থানায় জানানো হয়েছে। এখন ভেতরে গাড়ি পার্কিং অনেকটা কমে এসেছে।
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ আনয়ারুল আজিম জানান, আমি আসার পর যখন জানতে পেরেছি এসব অ্যাম্বুলেন্স চালক ও হেলপাররা হাসপাতালের বাউন্ডারির ভেতর গাড়ি পার্কিং করে, তখন আমরা তা না করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। তারপর থেকে এখন ভেতরে গাড়ি পার্কিংয়ের দৌরাত্ম কিছুটা কমে এসেছে।
প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি