শিক্ষাঙ্গন

প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু ১৫ মার্চ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা আগামী ১৫ মার্চ থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। তবে এসএসসি পরীক্ষার কারণে তা পিছিয়ে মার্চে নেয়া হয়েছে। এবার পরীক্ষা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮’ পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চ থেকে লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা মার্চে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ পাবলিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্র সংকট থাকায় লিখিত পরীক্ষ ৪টি অথবা ৫টি ধাপে আয়োজন করা হবে।’ নিয়োগ-সংক্রান্ত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সভা সূত্রে জানা গেছে, এবার নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে নেয়া হবে। নির্ধারিত জেলায় পরীক্ষা আয়োজনের আগের রাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রশ্নপত্রের সকল সেট পাঠানো হবে। পরীক্ষার দিন সকাল ৮টায় প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে তা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে।

সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশে ১২ হাজার পদে ২৪ লাখের বেশি আবেদনকারী হওয়ায় এবার প্রথমবারের মতো লিখিত পরীক্ষা কয়েকটি ধাপে আয়োজন করা হবে। তবে এবার একসঙ্গে সকল জেলার ফল প্রকাশ করা হবে না। যে জেলার পরীক্ষা আগে শেষ হবে সেখানে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে আগেই মৌখিক পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এভাবে যে জেলার পরীক্ষা আগে শেষ হবে পর্যায়ক্রমে আগেই মৌখিক পরীক্ষা আয়োজন করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।

কর্মকর্তারা জানান, পাশাপাশি বসা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ যাতে একই সেট না পায় সেই জন্য এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রার্থীদের প্রশ্ন সেট নির্ধারণ করা হবে। পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরের ওপর প্রশ্ন সেট নির্ধারণ করা হবে। এবার পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শক নিয়োগের ক্ষমতা কেন্দ্র সুপারের কাছে থাকছে না। এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে অন্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব দেয়া হবে। সেন্ট্রাল থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শকদের শুধু দায়িত্ব বুঝে দেবেন কেন্দ্র সুপার।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনজুর কাদির বলেন, ‘স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নিয়োগ পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরীক্ষার দিন প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। যদি কেউ কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে লিপ্ত হয় তাহলে পরীক্ষা কেন্দ্রে তাকে বহিষ্কার করে সেই প্রার্থীর খাতা বাতিল করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা পদ্ধতি ডিজিটালাইজড করতে আমরা বুয়েটের সহায়তায় একটি আধুনিক সফটওয়্যার তৈরি করেছি। সেই সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর সিট বিন্যাস, পরিদর্শক নির্বাচনসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য বারের চাইতে ২০১৮ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী আবেদন করেছেন। গত বছরের ১ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম শেষ হয়। এ সময়ের মধ্যে ২৪ লাখের বেশি আবেদন জমা হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৬০টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৫টি, রাজশাহী বিভাগে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৯২৫টি, খুলনা বিভাগে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৩০টি, বরিশাল বিভাগে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮২৭টি, সিলেট বিভাগে ১ লাখ ২০ হাজার ৬২৩টি, রংপুর বিভাগে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬৮টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৭টি আবেদন জমা হয়েছে।

ডিপিই কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ নিয়োগে প্রায় ১২ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছিল। এই হিসাবে এবার আবেদনকৃত প্রার্থীর সংখ্যা এবার দ্বিগুণ। গত নিয়োগে সারাদেশে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬২। এবার দ্বিগুণ প্রার্থী হওয়ায় কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ২০ সেটের বেশি প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে। পরীক্ষার সময়সূচি, ওএমআর ফরম ডিজাইন ও মূল্যায়ন, ফলাফল প্রকাশ কার্যক্রম কোন পদ্ধতিতে করা হবে তা বুয়েট কর্তৃক নির্ধারণ করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবারও আগের মতোই লিখিত ও মৌখিক দুই স্তরেই পরীক্ষা নেয়া হবে। আগের নিয়ম অনুযায়ী এমসিকিউ পদ্ধতির লিখিত পরীক্ষা ৮০ নম্বর ও ভাইভায় ২০ নম্বর থাকবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হাসানের সভাপতিত্বে নিয়োগ সংক্রান্ত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা প্রমুখ।

প্রার্থীরা dpe.teletalk.com.bd ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। এ ছাড়া ওএমআর শিট পূরণের নির্দেশাবলী এবং পরীক্ষা-সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য ওয়েবসাইট (www.dpe.gov.bd) এ পাওয়া যাবে। (জাগো নিউজ)

বার্তা কক্ষ
১৬ জানুয়ারি,২০১৯

Share