নিউজ ডেস্ক :
‘বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে চাকরি’র জন্য দিতে হবে মাত্র তিন থেকে ছয় লাখ টাকা। এর পরেই মিলবে চাকরি নামের ‘সোনার হরিণ’। চাকরির নিয়োগপত্র নিতে ঢাকায় এলে তাদের মেডিকেল পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার কথা বলা হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ টাকা আদায়ের জন্য এক কৌশল বেছে নেয় প্রতারক চক্র। প্রার্থীদের কাছে ফাঁকা ‘নিকাহনামা’য় স্বাক্ষর নিয়ে রাখতো।
এভাবেই ‘প্রতারণার বিয়ে’র কৌশল অবলম্বন করে অনেকের কাছেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল প্রতারক চক্র। গত সোমবার এই প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। এসময় তাদের হাতে জিম্মি থাকা ৪৬ জন চাকরি প্রার্থীকেও উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর পল্লবী থানাধীন ডিওএইচএস এলাকা থেকে যাদের আটক করা হয়, তারা হলেন- বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত সিভিল স্টাফ মো. জহিরুল ইসলাম, সহযোগী মো. স্বপন হোসেন ও এনামুল হক লিটন।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম দাবি করেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আটক সিদ্দিকুর রহমান ও মো. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, অপরাধীরা বিমানবাহিনীর অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জেলা হতে বেকার যুবকদের চাকরি পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দিয়ে আসছিল।’
তিনি দাবি করেন, ‘ইতোমধ্যে তারা বিমানবাহিনীর এমওডিসি ও সৈনিক পদে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার নাম করে সাইদুর রহমানসহ ৪৬ জনকে পল্লবীর ডিওএইচএস এর ৯ নম্বর রোডের একটি বাসায় জিম্মি করে। তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নেয়। এরপর নিয়োগপত্র পেলে সবাইকে ৩ থেকে ৬ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জিম্মি করে।’
শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘ভুয়া নিয়োগপত্র পেয়ে কেউ টাকা না দিয়ে ছাড়া না পায়, সেজন্য তাদের কাছ থেকে ফাঁকা নিকাহনামায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। যাতে পরবর্তীতে টাকার দাবিতে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করা যায়।’
প্রতারক ওই চার ব্যক্তিসহ আরো অনেকেই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের একাধিক জেলায় এজেন্ট রয়েছে বলেও জানান ডিএমপির এই উপ-পুলিশ কমিশনার।
পুলিশের দাবি, ‘প্রতারকরা গেল ১০ থেকে ১২ দিন ধরে চাকরি প্রত্যাশীদের জিম্মি করে রাখা হয়। তাদের পরীক্ষা বগুড়ায় হওয়ার কথা থাকলেও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।’
‘প্রতারকদের’ কাছ থেকে উপজেলা সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা, সরকারি ডাক্তার, ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের প্রায় ৫০ জনের সিলমোহর, ৪৬টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও নিকাহনামা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এমওডিসি (মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স কনস্টেবল) পদে চাকুরির আবেদন ফরম ও বিভিন্ন প্রার্থীর ৫২টি মেডিকেল রিপোর্টের নথি পেয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান শেখ নাজমুল আলম।