ফরিদগঞ্জ

প্রচার বিমূখ ফরিদগঞ্জের জালাল আহাম্মেদের বিরল দৃষ্টান্ত

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের পূর্ব বড়ালী গ্রামের সেই যুবক জালাল আহাম্মেদ এখন কাতারের শিল্পপতি বটে । সততা, দক্ষতা আর পরিশ্রমের বলে যে কেউ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

এ তিনগুনের সমাহারে ফরিদগঞ্জের বড়ালী গ্রামের কৃতি সন্তান জালাল আহাম্মদ নিজের কর্মগুনে তারই প্রমাণ দিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

জালাল বর্তমানে মধ্যেপ্রাচ্যের দেশ কাতারে একজন স্বনামধন্য শিল্পপতি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। সমাজসেবায় তার রয়েছে বিশাল অবদান।

সমাজসেবায় জালালের বে-হিসাবি দানের বিপরীতে কোন প্রতিদান চাওয়ার ছিটেফোটো তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি।

জালাল আহম্মেদের রাজনৈতিক কোনো দলের সাথেই জড়িত না হলেও সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকদের সাথেই রয়েছে সক্ষ্যতা।

সাদামাটা ভাবে চলাফেরা করা জালাল এত বড়মাপের ধর্ন্যাঢ্য ব্যক্তি হলেও তার মধ্যে নূন্যতম কোন বিলাসিতার ছাপ দেখা যায়না। প্রচার বিমূখ এই জালাল আহাম্মেদ এক সময়ে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পাড়ি জমায় মধ্যেপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। সেই দেশেই জালাল নিজের সততা দক্ষতা আর পরিশ্রমের গুনে এখন ওই দেশের স্বনামধন্য একজন শিল্পপতি হয়ে দেশ বিদেশে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পাশাপাশি দেশ এবং বিদেশে সমাজ সেবায়ও নিজের অর্থ বিলিয়ে দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন ।

জালালের পারিবারিক সুত্রে জানা যায, ‘দীর্ঘ ২২ বছর জালাল আহম্মেদ কাতারে সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছেন। সেখানে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি ও সম্মানিত ব্যবসায়ী। কাতারে তাঁর পরিচালনাধীন প্রতিষ্ঠানের নাম গোল্ডেন মার্বেল। সেখানে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ৪টি মার্বেল পাথরের কারখানা। কাতারে স্থাপিত জালালের শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের ৪ থেকে ৫’শ লোক বিভিন্ন পদে কাজ করে আসছেন। তাছাড়া তার পরিচলনাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এক থেকে দেড় হাজার লোক কাজ করছেন। এর মধ্যে তাঁর নিজ এলাকা ফরিদগঞ্জের লোকের সংখ্যাই বেশি।

এই প্রবাসী ব্যবসায়ী জালাল আহাম্মেদ সমাজের অবহেলিত জনগনের জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়নের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নে নিরবে নির্বিতে ব্যাপকহারে কাজ করে যাচ্ছেন। দান-অনুদান প্রদানসহ যে কোন সমাজসেবা মূলক কাজে তিনি প্রচারবিমুখ। প্রচারে নয়, তিনি বিশ^াস করেন কাজে।

এ পর্যন্ত তিনি ৩’শ জনকে উপার্জনের পথ সুগম করতে নতুন ৩’শটি রিক্সা প্রদান করেছেন। গৃহহীন ব্যক্তির গৃহনির্মাণে ৫’হাজার বান টিন প্রদান করেছেন। যার মাধ্যমে গৃহহীনদের মাথা গোঁজার ঠাই নিশ্চিত হয়েছে।

পিতা-মাতাহীন এতিম শিশুদের প্রতি অযতœ অবহেলা হৃদয়বান জালাল আহম্মেদের মনে কষ্টদেয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এতিমদের শিক্ষা ও থাকার জন্য একটি তার বাবা মায়ের নামে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান করবেন।

সেইমতে তিনি ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের পাশে বড়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটতম স্থানে প্রায় ২০ শতাংশ জায়গা নিয়ে তার বাবা ও মায়ের নামে মনোয়ারা রশিদ ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

এতে ব্যায় হয়েছে তার প্রায় ২ কোটি টাকা । জালালের নিজস্ব অর্থে প্রতিষ্ঠিত ওই ধমীয় প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় ২০১৬ সালে। প্রথম বছরেই এ প্রতিষ্ঠানে ১’শ ৮০জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ জন এতিম শিশু রয়েছে। এই ৩০ জন শিশু সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এই ছাত্রদের পড়ালেখা পরিচালনার জন্য ৫ জন শিক্ষক রয়েছে। মাদ্রাসায় নূরানী শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজী ও গনিত শিক্ষা দেয়া হয়।

জালাল আহম্মেদের মহতি উদ্যোগের মধ্যে আরো রয়েছে সমাজের গরীব অসহায় অবিবাহিত মেয়ের বিয়ে দেওয়া, চিকিৎসা ও ব্যবসা করতে সহযোগীতা করা। এছাড়া বিভিন্ন এতিম খানায় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা, ঈদে উপহার সামগ্রী ও কোরবানীর ঈদে গরু প্রদান করে আসছেন।

শিল্পপতি জালাল আহাম্মেদের ভাই মো. শাহাবুদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ব্যক্তি জীবনে আমারই প্রাণপ্রিয় বড় ভাই জালাল শতভাগ ভালো মনের মানুষ। আমাদের পরিবারের ৭ ভাই ও ২ বোন ওনাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আমাদের সমাজে অনেকের টাকা পয়সা থাকা সত্ত্বেও তারা নিকট আত্মীয়দের খোঁজ খবর নেয় না। কিন্তু তিনি ব্যতিক্রম। জালাল ভাই শত ব্যস্ততার মাঝেও সবার খোঁজ খবর রাখেন। এমনকি নিকট আত্মীয়দের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি বিলাসিতা মোটেই পছন্দ করেন না। তিনি নিজে যেভাবে চলেন আমাদেরকে সেভাবে পরিচালনা করেন। ব্যক্তি জীবনে জালাল আহমেদ তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে কাতারেই বসবাস করছেন। প্রায়ই তিনি দেশে এসে সব কিছুরই খোঁজ খবর নিয়ে আবার ছুটে যানকাতারে।

প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩: ৩০ এএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ

Share