জাতীয়

প্রকৃত রাজাকারদের দালিলিক প্রমাণ নষ্ট : তালিকা প্রণয়নে জটিলতা

বেতন ও অস্ত্রপ্রাপ্ত রাজাকারদের তালিকা তৈরীর জন্য মাঠ প্রশাসনে পাঠানো চিঠি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বিভাগীয় কমিশনাররা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কারা পাকিস্তান সরকারকে তাদের বেতনভুক্ত হয়ে সহযোগিতা করছেন তার দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করা নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সরকারের সময় সেই সব দালিলিক প্রমাণ অনেকাংশে বিনষ্ট করা হয়েছে। ফলে তা সংগ্রহ করা বেশ দুষ্কর হয়ে উঠেছে।

‘১৯৭১ সালে বেতন ও অস্ত্রপ্রাপ্ত রাজাকারদের তালিকা প্রেরণ সংক্রান্ত’ একটি চিঠি গত ১৯ অক্টোবর সাত বিভাগের কমিশনার বরাবর পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সিনিয়র সহকারী সচিব মাকসুদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বেতন ও অস্ত্রপ্রাপ্ত রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ওই সময়ে কারা বেতন ও অস্ত্রপ্রাপ্ত রাজকার ছিল, সে রকম তথ্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংরক্ষণ নেই বলে বিভাগীয় কমিশনারদের জানাচ্ছেন জেলা প্রশাসকরা। ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো রাজাকার চিহ্নিতকরণের কাজ তেমন এগুচ্ছে না।

বরিশালের বিভাগী কমিশনার মো. গাউস এ বিষয়ে বলেন, ‘ওরা রাজাকার ছিল, আলবদর ছিল, ওরা পুলিশের কাছ থেকে বেতন নিয়েছে। ডিসি তো তাদের বেতন দেয়নি। এখন ডিসি সাহেবরা এসপি সাহেবদের বলেছেন খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য। বেতন বই আছে কিনা— খোঁজা হচ্ছে। অনেকে জানিয়েছেন বেতন বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের বলেছি, গ্রামে গিয়ে রাজাকারদের খোঁজ নেওয়ার জন্য।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর এবং আল-শামসদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পুলিশের কাছে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু পুলিশ সে তালিকা দিতে পারেনি। এখন আবার নতুন করে বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের কাছে চেয়েছে। এতে তথ্য সংগ্রহে নানা সমস্যায় পড়েছেন তারা।

খুলনার বিভাগীয় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘এই ধরনের তথ্য আছে কোথায়, এটাই একটি বড় প্রশ্ন। আমরা ডিসিদের কাছে পাঠিয়েছি। সমস্যা হচ্ছে, যারা ওই সময়ে বেতন পেয়েছে, তারা এ্যাকাউন্টস থেকে পেয়েছে না-কি ডিসি অফিস থেকে পেয়েছে তার কোনো ডকুমেন্ট নেই। এগুলো কী হয়েছিল সে বিষয়ে কোনো ক্লু (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে) দেওয়া হয়নি।’

‘চিঠি নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। ডিসিরা উল্টো প্রশ্ন করছেন কীভাবে তারা তথ্য সংগ্রহ করবেন। বিভিন্ন জেলা থেকে মৌখিকভাবে তারা নির্দেশনা চেয়েছেন।’ যোগ করেন তিনি।

রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘এই বিষয়ে এখনো তেমন কাজ এগোয়নি। খোঁজ নিয়ে কথা বলতে হবে।’

একজন বিভাগীয় কমিশনার নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, যুদ্ধের সময় অস্ত্র ও বেতনপ্রাপ্ত রাজাকারদের বিষয়ে যতটুকু তথ্য থাকার কথা সেটা পুলিশই ভাল জানবে। তাই আমরাও পুলিশের (এসপিদের) কাছেই তথ্য চেয়েছি। কারণ সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার যখন এগিয়ে চলছে, তখন সরকার ১৯৭১ সালে বেতন ও অস্ত্রপ্রাপ্ত রাজাকারদের তালিকা তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের অনেক সরকার কর্তৃক স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তাই আমার জানা নেই।’

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৪:২২ পিএম,  ২৭ নভেম্বর ২০১৫,  শুক্রবার

এমআরআর

Share