চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ পরস্পর বিরোধী হামলার ঘটনায় কোন মামলা নেই। দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে ককটেল বোমা ফাটিয়ে হামলায় উপজেলার কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সামনেই রনক্ষেত্র পরিণত হয়েছিল। আহতও হয়েছে কয়েকজন নেতাকর্মী।
এ নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো.জহির উদ্দিন বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিলকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাটি দু:খজনক।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রমজান মাসের ১৪ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগ কর্তৃক ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগে ও পৌর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই এই কমিটিকে এলাকার এমপি শফিকুর রহমানের অনুসারী নেতাকর্মীরা পকেট কমিটি আখ্যা দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদের ঝড় তুলে।
এমপির পক্ষের অভিযোগ, এলাকার এমপির কোন মতামত কিংবা আলাপ আলোচনা ছাড়াই ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া হয়েছে। এরপরই এলাকার এমপি মো. শফিকুর রহমানের সম্মতি নিয়ে তার অনুসারীরা নেতাকর্মীরা উপজেলা ছাত্রলীগ ও পৌর ছাত্রলীগের স্বঘোষিত কমিটি প্রকাশ করেই মাঠে নেমে পড়েন।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের ঘোষণা দেয়া ফরিদগঞ্জের দুটি কমিটি ফরিদগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট জাহিদুল ইসলামের রোমান অনুসারীর আখ্যা দিয়ে এ কমিটির বিভিন্ন কার্যক্রম প্রতিহত করতে নানাভাবে তৎপরতা চালান এমপির অনুসারী নেতাকর্মীরা।
এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান দেখাতে জেলা কমিটি কর্তৃক ঘোষিত ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বাকি বিল্লাহ পূর্ব থেকেই ৭ মে শনিবার কর্মসূচী হওয়ার কথা থাকলেও একই দিন প্রতিপক্ষ গ্রুপও কর্মসূচি দিলে তা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে একদিন পিছিয়ে ৮ মে উপজেলা সদরে ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অপরদিকে এমপির অনুসারী পৌর ছাত্রলীগের স্ব-ঘোষিত কমিটির সভাপতি আলী নেওয়াজও ঘোষণা দিয়ে জানান, তারাও ৮ মে ঈদ পূর্নমিলনী সভা ও আনন্দ মিছিল করা হবে। পরস্পর বিরোধী উক্ত কর্মসূচি সফল করার জন্য দুটি পক্ষই তাদের নেতাকর্মীদের জড়ো করতে নানা তৎপরতা শুরু করেন।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, রাজনীতির নামে দুটি পরস্পর বিরোধী গ্রুপের এমন বেগতিক অবস্থা দেখে পুলিশের পক্ষ দুই পক্ষকেই তাদের কর্মসূচি স্থগিত করার নির্দেশ প্রদান করেন। এক পর্যায়ে দুটি পক্ষই পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের ওইদিনের কর্মসূচি বন্ধ রাখলেও দিনভর বিক্ষিপ্ত ভাবে উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ককটেল ফুটিয়ে মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
তবে দিন শেষে বিকেলে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কেরোয়া ব্রীজের পূর্ব পাড়ে জেলা ছাত্রলীগ কর্তৃক ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের একটি খন্ড মিছিল করার খবর শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রতিপক্ষরা। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাতবোমার বিস্ফোরণ, কাঁচের বোতল ছোঁড়াসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
পুলিশের হস্তক্ষেপে উক্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হলেও ততক্ষনে হামলার শিকার হন উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী জেলা পরিষদের দুই সদস্য সাইফুল ইসলাম রিপন ও মশিউর রহমান মিটু এবং এমপির অনুসারী রুবেল নামের এক নেতা আহত হয়েছেন।
৯ মে সোমবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো.জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা ও পৌর কমিটি দিয়েছি। আমরা ছাত্রলীগের কার্যক্রমে যাকে সক্রিয়ভাবে মাঠে পেয়েছি তাকে দিয়েই কমিটি দিয়েছি।’
তিনি আরও জানান, ‘ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার পূর্বে আমি ব্যক্তিগত ভাবে এমপি মহোদয়ের সাথে কথা বলার সময় তিনি সরাসরি যখন আমাকে বলেন, তোমরাতো ছাত্রলীগ করো না। তোমরা তো করো ভাইলীগ। একজন এমপি এই কথা বলার পর আর কি বলার আছে।’
ফরিদগঞ্জ থানার তদন্ত (পরিদর্শক) প্রদীপ মন্ডল জানান, ‘গতকালের ঘটনায় কোন পক্ষই থানায় মামলা কিংবা কোন অভিযোগ দেয়নি। পুলিশের বাধা উপক্ষো করে যখন কেউই কর্মসূচি পালন করবে না বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। কিন্তু একটি পক্ষ আবার পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কেরোয়া ব্রীজের পাশে একটি খন্ড মিছিল বের করার পরই দুই পক্ষ কিছুটা সময়ে সংঘষেং লিপ্ত হলেও পুলিশ আবার তা নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সামনে কেউ অস্ত্র উচিয়ে মহড়া দিলে অবশ্যই তাকে আটক করতে পুলিশ বাধ্য কিন্তু পুলিশের সামনে কেউ অস্ত্র উচিয়ে মহড়া দেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৯ মে ২০২২