ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে প্যাথলজি ও ডাক্তারি পরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধন করছে সরকার।
২০০৯ সালের এ আইন সংশোধন হলে রক্ত, মল-মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই, এনজিওগ্রাম, ইসিজি ও ইটিটি পরীক্ষার মূল্য তালিকা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে ‘সহজে দৃশ্যমান স্থানে’ প্রদর্শন করতে হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠান তা না করলে এক বছর কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্ধদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়।
বর্তমানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে বিভিন্ন ‘সেবা’র মূল্যতালিকা প্রদশর্নের কথা বলা হলেও সেবাগুলো নির্দিষ্ট করা ছিল না।
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন মিঞা শুক্রবার বলেন, ভোক্তাদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই আইনটি সময়োপযোগী করা হচ্ছে।
“কোনো পণ্যের দাম বাড়লে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারী ব্যবসায়ীদের দোষ দেয়। আর পাকইকাররা দোষ দেন খুচরা ব্যবসায়ীদের। কাগজ (বিভিন্ন পণ্যের দাম টাঙানো) থাকলে কেউ কাউকে দায়ী করতে পারবেন না।”
আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ই-মেইলে (dncrp@yahoo.com ) খসড়ার ওপর মতামত দেওয়া যাবে জানিয়ে আবুল হোসেন বলেন, সবার মতামত পাওয়ায় পর সংশোধিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।
সংশোধিত আকারে আইনটি পাস হলে সরকার এ আইনের আলোকে বিধি প্রণয়ন করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
খসড়া অনুযায়ী, সব দোকান বা প্রতিষ্ঠানকে ২৭ ধরনের মোকড়বিহীন নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন করতে হবে। এই নির্দেশনা অমান্য করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
খোলা নিত্যপণ্যের এই তালিকায় রয়েছে- চিনি, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, সরিষার তেল, লবণ, খেঁজুর, ডিম গরু-মহিষ-ছাগলের মাংস, চাল, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, ছোলার ডাল, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা ও বেসন।
আইন সংশোধনের পর ভোক্তাদের অভিযোগ কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রহণ, সমন্বয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থাকে দিয়ে তা নিষ্পত্তিতে জাতীয় ভোক্ত অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অধীন ‘ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র’ স্থাপন করবে সরকার।
এই অভিযোগ কেন্দ্রে একজন পরিচালক, একজন উপ-পরিচালক এবং দুইজন সহকারী পরিচালক রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়।
এতে বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ক্রেতাদের ক্ষতি করলে এক বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা অর্ধদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
নিম্নমানের পণ্য, খাদ্য, ওষুধ ও সেবা বিক্রির শাস্তি হিসেবে খসড়ায় এক বছর কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সরকারের অনুমোদন না নিয়ে কেউ কোনো পণ্য, খাদ্য, ওষুধ, সেবা প্রস্তুত, উৎপাদন বা বিক্রি করলে এক বছরের কারদণ্ড, এক লাখ টাক অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
বর্তমান আইনে বৈধ কোনো কারখানায় তৈরি পণ্য ভোজাল বা ক্রটিপূর্ণ হলে দোকান মালিক বা পরিচালককে (যদি ওই পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকে) দায়ী করা যেত না। খসড়ায় এ বিধানটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইনটি সংশোধন হলে তার আলোকে সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে ভোক্তা শিক্ষা কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ কর্মসূচিতে ভোক্তা অধিকার, ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্যক্রম, পরিবেশগত ও সামাজিক সচেতনতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সুফল, ভোক্তা অধিকারবিরোধী কাজের কুফল, দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব সমস্যা, পণ্য ক্রয়ে যাচাই-বাছাই এবং অভিযোগ দায়েরের বিষয়গুলো থাকবে।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৭:৪২ অপরাহ্ন, ০৪ মার্চ ২০১৬, শুক্রবার
এমআরআর