Home / জাতীয় / রাজনীতি / পৌর নির্বাচন যুদ্ধে অবিচল থাকবো : খালেদা জিয়া

পৌর নির্বাচন যুদ্ধে অবিচল থাকবো : খালেদা জিয়া

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যদিও তিনি অভিযোগ করেছেন, শাসক দল নির্বাচনের উপর অশুভ প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা করেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তি যেকোন স্বৈরশাসকের অসৎ উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আমরাও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে অবিচল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সোমবার বিকেলে গুলশানে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বেগম জিয়া। লন্ডন থেকে ফেরার পর এটিই তার প্রথম সংবাদ সম্মেলন।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনের বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আগামী পরশু দেশের ২শ ৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই নির্বাচনটি খুবই তড়িঘড়ি করে ঘোষণা করা হয়েছে। রেওয়াজ থাকা সত্ত্বেও সময় স্বল্পতার অজুহাতে ইলেকশন কমিশন এ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেনি। অথচ এবারের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে।’

দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে লড়বেন মেয়র পদপ্রার্থীরা। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন তার বক্তব্যে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের দলীয় প্রতীক এই স্থানীয় নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া খুবই প্রয়োজন ছিল বলে আমরা মনে করি। দেশবাসী দেখেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন বছরের পর বছর ধরে অনুষ্ঠিত না হলেও সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। শাসক দলের সুবিধাজনক সময়ের জন্য তারা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা পৌর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় মাত্র ১০ দিন পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু খোঁড়া যুক্তি তুলে নির্বাচন কমিশন তা মানেনি।’

বেগম জিয়া বলেন, ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ব্যাপারেও কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরমধেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, আসন্ন পৌর নির্বাচনকেও প্রহসনে পরিণত করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। বিরোধীদলের অফিস ও প্রার্থীর ওপর হামলা, সমর্থকদের হত্যা, প্রচারণায় বাধা দেয়া, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, গ্রেপ্তার ও হুমকি চরম আকার ধারণ করেছে। বিরোধীদল সমর্থক ভোটার ও সম্ভাব্য এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। সন্ত্রাসী ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর একশ্রেণির সদস্যকে এই অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে- এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ভোটকেন্দ্র দখলের হুমকিও দেয়া হচ্ছে। শাসক দলের মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী আচরণবিধি বেপরোয়াভাবে লঙ্ঘন করে চলছেন। এর কিছু কিছু খবর সংবাদ-মাধ্যমে প্রচারিত হলেও মামুলি কারণ দর্শানো নোটিশ এবং তারপর লোক দেখানো দুঃখ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন দায় সারছে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীনদের আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মাধ্যমে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্ব ও অক্ষমতাই প্রকাশ করেছে।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘চাপ ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে অনেক জায়গায় বিরোধীদলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়া হয়নি এবং প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ৭ জন মেয়র ও ১শ ৩২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান অদ্ভুত সরকারের তথাকথিত বিরোধীদলের এক নেতা, যিনি আবার প্রধানমন্ত্রীরও দূত, তিনি বলেছেন যে, ভোটের দিন সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট শেষ হয়ে যাবে। এক মন্ত্রীও বলেছেন যে, ভোট হওয়ার আগেই নাকি বিএনপির পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। এসব কথা থেকেই সকলের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, পৌর নির্বাচনকে কী ধরনের প্রহসনে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগুচ্ছে।’

এরআগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন আখ্যা দিয়ে ওই নির্বাচনে যোগ দেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। পরে ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা যোগ দিলেও মাঝপথে তারা নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের যে দাবি বিএনপির ছিল সে বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করেছি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ দাবি নাকচ করে বলা হয়েছে যে, সেনাবাহিনী মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি নাকি সৃষ্টি হয়নি। আমরা জানি না, আর কত ভয়াবহ অবস্থা হলে নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করবেন। আমরা জানি না, নির্বাচনী দায়িত্বে জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের এতো অনীহার কারণ কি? সকলেই এ বাস্তবতা স্বীকার করবেন যে, আমাদের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।’

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ০৫:৫৮ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫, সোমবার

ডিএইচ