আসন্ন পৌর নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল দু’একদিনের মধ্যে সম্মিলিত প্রচারে নামবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জামায়াতের সঙ্গে দু’এক জায়গায় সমস্যা থাকলেও তা স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শনিবার ২০ দলের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ২০ দলের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘সরকার যেন (নির্বাচনে) কোনো হস্তক্ষেপ না করে।’
‘গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার, বাক-স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য’ ২০ দল এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ পেলে জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দেবে।’
বৈঠকে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান বিষয় ছিল আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ২০ দলের যারা প্রার্থী রয়েছেন, তাদেরকে সমর্থন দেওয়া হবে। কোনো কোনো জায়গায় নিজস্ব প্রতীক নিয়ে কেউ কেউ নির্বাচন করছেন। যারা ২০ দলের ঐক্যমতে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকেও সমর্থন দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে ২০ দলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা শুরু হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) দিনাজপুর, রংপুরে প্রচারণা শুরু হয়েছে। ২০ দলের নেতারা ওখানে এক সঙ্গে প্রচারণা চালিয়েছেন।’
‘২০ দলের সম্মিলিত প্রচারণা আগামী দু-এক দিনের মধ্যে শুরু হবে। আমরা আশা করছি ২০ দলের নেতারা এ প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০ দলের প্রার্থীর পক্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা চলাব।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘এ পৌর নির্বাচনকে আমরা আন্দোলনের ধাপ হিসেবে নিয়েছি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পর্যায় হিসেবে নিয়েছি। অতীতে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ওই নির্বাচনগুলোর কোনোটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। এরপরও আমরা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি গণতন্ত্রের স্বার্থে; গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হবে নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ থাকতে পারে। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে কতটুকু কাজ করতে পারে। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন কি-না।’
বিএনপির প্রার্থীরা গ্রেফতার আতঙ্কে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারছে না অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। বিগত কয়েক মাস ধরে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে জেলখানা ভরে ফেলা হয়েছে।’
‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা থেকে সরকারকে বিরত থাকা ও গ্রেফতার করা নেতাকর্মীদের মুক্তিরও দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীরা ইতোমধ্যে বিধি লঙ্ঘন করেছেন। নাটোরে একজন মন্ত্রী সরকারি দলের প্রার্থীর বাসায় এক ঘণ্টা থেকে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করেছেন। এতেই প্রমাণ হয় নির্বাচন কমিশন তাদের বিরত রাখতে পারছেন না। তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আবার তারা অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।’
জামায়াতের প্রার্থীদের পক্ষে আপনারা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেবেন কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে একটু সমস্যা আছে। স্থানীয়ভাবে এর সমাধান করা হবে।’
ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আব্দুল মবিনের মৃত্যুতে সভায় শোক প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৈঠকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের, ডিএল এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস, বিজেপির মহাসচিব আব্দুল মতিন প্রকাশ, মুসলিম লীগের মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধূরী, জমিয়তে ওলামার মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন একরাম, পিপলস লীগের মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব হোসেন, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৩:৫২ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫, শনিবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur