=> মৌখিক দিলেও লিখিত আদেশে রাজি নন ইউএনও
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায়, সাম্প্রতিক সময়ের আইনশৃঙ্খলার অবনতির সুযোগ নিয়ে একটি জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। ১৪ আগস্ট, ভুক্তভোগী আব্দুল হক মাস্টার শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। দখল ছেড়ে দিতে ইউএনও অভিযুক্ত পক্ষকে মৌখিক আদেশ দিলেও ভিকটিম পরিবারের অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহলের চাপে তিনি লিখিত আদেশ দিতে রাজি হননি।
অভিযোগ অনুযায়ী জানা গেছে, ৭ আগস্ট, শাহরাস্তি পৌরসভার নিজমোহর এলাকার ১৪ শতাংশ জমি দখল করেছেন প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন রাঢ়ীর ছেলে আমির হোসেন, সুলতান আহমেদ, কামাল উদ্দিন, রহিম উদ্দিন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এই জমিটি বহুদিন ধরে আব্দুল হকের পরিবারের মালিকানায় ছিল এবং তারা এটিকে ভবিষ্যতের বসবাসের জন্য রেখে দিয়েছিলেন। জমি বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায়, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ওই জমি জবরদখল করেন।
ঘটনার সময় আব্দুল হক মাস্টার তাঁর পরিবার এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে জমিতে গেলে, আনোয়ার হোসেনের তিন ছেলে ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের হুমকি দিয়ে জমি থেকে বের করে দেন।
জমি দখলের সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মো: দেলোয়ার হোসেন জানান,‘তাদের দুই পক্ষের মাঝে জমি সংক্রান্ত জটিলতা অনেক দিন যাবৎ চলমান রয়েছে। অভিযুক্তরা ৫ তারিখের পরে ওই জমিতে বালি ভরাট করেছে এটি সত্য। এ ঘটনায় ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে এবং কোর্টেও মামলা চলমান রয়েছে।’
অবস্থার দ্রুত অবনতির পর, আব্দুল হক মাস্টার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিচার চেয়েও সমাধান পাননি। পরবর্তীতে ১৫ আগস্ট তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন, এবং ৪ সেপ্টেম্বর ইউএনও জমির কাগজপত্র যাচাই করেন। ইউএনও আব্দুল হকের কাগজপত্র সঠিক বলে নিশ্চিত করেন এবং প্রতিপক্ষকে দ্রুত জমি খালি করার নির্দেশ দেন। তবে, প্রতিপক্ষ সেই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করে এবং জমিতে স্থাপনা গড়ে তোলে।
আব্দুল হকের বড় ছেলে জহিরুল আলম জানান, জমির ১৪ শতাংশের মধ্যে ৫.২৫ শতাংশ তাদের নানা ১৯৭৮ সালে হেবানামা করে দেন। বাকি ৮.৭৫ শতাংশ জমি ১৯৮১ ও ১৯৮৮ সালে নানার ভাই ও বোনের কাছ থেকে কিনে নেয়া হয়। দীর্ঘদিন তারা এই জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন। ৬ আগস্ট রাত ১২টার দিকে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জমিতে বালি ভরাট করে দখল করে নেয়।
তিনি আরও জানান, আইন মেনে প্রথমে স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। ১৩ আগস্ট দু’পক্ষকে নিয়ে গ্রাম শালিসের আয়োজন করা হলেও প্রতিপক্ষ শালিস মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে উঠে যায়। পরবর্তীতে ১৫ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করলে, ইউএনও ৪ সেপ্টেম্বর কাগজপত্র নিয়ে হাজির হওয়ার নোটিশ দেন। ইউএনও কাগজ যাচাই-বাছাই করে তাদের মালিকানার সঠিকতা নিশ্চিত করেন এবং প্রতিপক্ষকে দ্রুত জমি খালি করার মৌখিক নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ সেই নির্দেশ না মেনে জমিতে স্থাপনা তৈরি করে। তারপরে লিখিত আদেশ চাইলে ইউএনও দিতে রাজি হননি।
জমি দখলের সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মো: দেলোয়ার হোসেন জানান ,‘ তাদের দুই পক্ষের মাঝে জমি সংক্রান্ত জটিলতা অনেক দিন যাবৎ চলমান রয়েছে। অভিযুক্তরা ৫ তারিখের পরে ওই জমিতে বালি ভরাট করেছে এটি সত্য। এ ঘটনায় ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।’
বালি ভরাট করে নতুন করে দখলের চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্তরা প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন, ‘‘তারা ২৮ বছর ধরে এখানে ১৩ শতক জায়গায় বসত ঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা করে বসবাস করছেন। দলিল অনুযায়ী ১৩শতক জমির বৈধ মালিক। দলিল দেখতে চাইলে তারা কোনো দলিল দেখাতে পারেননি।
এ বিষয়ে শহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানান, ‘যারা দখলে আছে তারা গাঁয়ের জোরে আছে। যেহেতু পাবলিক জমি তাই আইন অনুযায়ী আমাদের কিছু করার সুযোগ নাই। দরখাস্তকারীকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, ২৩ নভেম্বর ২০২৪