দেশে প্রতিবছর ৬ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে দগ্ধ হন। চিকিৎসার সুযোগের তুলনায় এ সংখ্যা অনেক বেশি। ৬৪ জেলার পোড়া রোগীদেরই আসতে হয় ঢাকায়
সক্ষমতার তুলনায় বেশি রোগী থাকায় কদিন আগ পর্যন্তও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩০০ শয্যার বার্ন ইউনিটে সারাবছরই লেগে থাকতো উপচেপড়া ভিড়। এতে করে চিকিৎসকরা হিমশিম খেতেন, রোগীরাও পেতেন না উপযুক্ত সেবা, ইউনিটের মেঝে আর বারান্দায় গাদাগাদি করে রোগীদের থাকতে হয়। ফলে ছড়িয়ে পড়তো সংক্রমণ। (বাংলা ট্রিবিউন)
এসব কারণে ঢামেক হাসপাতালের পাশেই নির্মিত হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দূর-দূরান্ত থেকে রোগীদের ঢাকায় নিয়ে আসতে অনেকটা সময় চলে যায়। এজন্য সারাদেশে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা থাকা দরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১২৪ জন। তারপর ১৪টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য বার্ন ইউনিট খোলার উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু তারা জানাচ্ছেন, সে উদ্যোগ সেভাবে কার্যকর হয়নি। যদি সেটা হতো তাহলে অনেক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে বার্ন ইউনিটগুলোর বেহাল দশা। ৮ বিভাগের হাসপাতালগুলোতে কোথাও নেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, নেই যন্ত্রপাতি, আবার কোথাও নেই চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল, কোনোটিতে নেই বার্ন ইউনিটই। যেসব কারণে দেশের যে কোনও জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীদের আসতে হয় ঢাকায়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের তল্লা বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ ৩৭ জন। তাদের আনা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুইজন আর হাসপাতালে আছেন একজন, ৩৪ জন মারা গেছেন।
২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল দিনাজপুর সদরে যমুনা অটোমেটিক রাইস মিলে বয়লার বিস্ফোরণ হয়ে ২৩ শ্রমিক দগ্ধ হন। পরে তাদের দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে পাঠানো হয় রংপুর ও ঢাকা মেডিক্যালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জনের মধ্যে ১৮ জন শ্রমিক মারা যান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখন বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তখনই এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, অথচ সব হাসপাতালে যদি পোড়া রোগীর চিকিৎসা করার ব্যবস্থা থাকতো তাহলে তাদের চিকিৎসা দেওয়া অনেক সহজ হতো।
সারাদেশের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার উদ্যোগ নিতে বলেন। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। ঢাকার বাইরে ১৪টি মেডিক্যাল কলেজে বার্ন ইউনিট রয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। পদ সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল না হওয়াতে ভালোভাবে চলছে না সেগুলো।
সারাদেশে বার্ন ইউনিট পূর্ণাঙ্গভাবে হয়ে চালু করা উচিত জানিয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, একজন পোড়া রোগীর ২৪ ঘণ্টা হচ্ছে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। রংপুরের কোনও জেলাতে যদি একজন মানুষ পুড়ে যায় তাহলে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসতে ২৪ ঘণ্টা নয়, ৪৮ ঘণ্টাতেও পারে না। সে হিসেবে যদি তেঁতুলিয়াতে একজন পুড়ে থাকেন এবং তাকে যদি রংপুর মেডিক্যালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতো তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়। আর সবার পক্ষে ঢাকায় আসা সম্ভবও নয়। তাই পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ডিসেন্ট্রালাইজড করতে হবে। মানুষের দোরগোড়ায় বার্ন চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
গত সপ্তাহেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মান্নানের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেছি জানিয়ে তিনি বলেন, সব মেডিক্যাল কলেজের পরিচালকদের নিয়ে আরেকটি বৈঠক করার কথা ভাবছি, কাজ এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি জানান, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অনুমোদিত পদ রয়েছে এক হাজার ১২২ জনের অথচ কাজ করছেন ৪৬৪ জন। আবার সারাদেশে অধ্যাপকের পদ রয়েছে ১২টি কিন্তু কাজ করছেন ছয় জন, সহযোগী অধ্যাপকের পদ রয়েছে ১৭টি, কাজ করছেন দুজন আর সহকারী অধ্যাপকের পদ রয়েছে ২৬টি আর কাজ করছেন ২২ জন।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ঢাকার বাইরের ইউনিটগুলোতে সহকারী অধ্যাপক দিয়ে চালানো হচ্ছে, সহযোগী অধ্যাপক যত দ্রুত নিয়োগ পাবেন তত ইউনিট ভালো চালাতে পারবেন। এ উদ্যোগটাও নেওয়া দরকার।
তিনি জানান, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গত বছর জরুরি ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৪ হাজার ৮৯৩ জন আর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন আট হাজার ৯৩৪ জন।
দেশের আট বিভাগের হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও নেই একটি পূর্ণাঙ্গ ও সচল বার্ন ইউনিট। যার কারণে রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
রংপুরে নেই ওষুধ সরবরাহ, চিকিৎসক একজন
উত্তরাঞ্চলের একমাত্র আগুনে দগ্ধ রোগীদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেই কোনও চিকিৎসার উপকরণ, নেই ওষুধ সরবরাহ, নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পেয়ে গত দুমাসে ১৫ জন আগুনে দগ্ধ রোগী মারা গেছেন।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসকের পদ ৯ জন, রয়েছেন মাত্র একজন। তিনি সহকারী পদমর্যাদার এবং বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ধার করে নিয়ে আসা হয় ইন্টার্নি চিকিৎসক, তাদের দিয়েই চলছে রোগীদের চিকিৎসা সেবা।
অন্যদিকে পোড়া রোগীদের তেমন কোনও চিকিৎসা সুবিধা নেই এখানে। ফলে ৩০ শতাংশ বা তার বেশি পোড়া রোগীদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা এম এ হামিদ পলাশ জানান নানা সীমাবদ্ধতার কথা তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেই আইসিইউ
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৫০ বেডের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটটি বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে করোনা রোগীদের জন্য। আর সার্জারি ইউনিটের ১৪টি বেড দিয়ে বার্ন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রোগী বেশি হওয়ায় মেঝেতে, বারান্দায় রাখতে হচ্ছে। যাদেরকে ভালো করে ড্রেসিং করা যাচ্ছে না, যে কারণে তাদের রিকভারিও দেরিতে হচ্ছে। অনেকের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে।
বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মোছা. আফরোজা নাজনীন জানান, ক্রিটিকাল রোগীদের ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে, অপারেশন করা যাচ্ছে না। আবার আগের ওয়ার্ডে শিশু, মহিলা, পুরুষ আলাদা ওয়ার্ড ছিল সেটা নেই, এখন ঢালাওভাবে রোগী রাখতে হচ্ছে। বার্ন ইউনিটের আইসিউ নেই এলসিউ নেই। মেডিক্যালে যে নরমাল আইসিউ আছে সেখানে বার্নের রোগী অ্যালাউ করা হয় না। বলা হয় বার্নের রোগী রাখলে অন্যান্য রোগীর ইনফেকশন হয়ে যাবে। আর আগেরও বার্ন ইউনিটের আইসিউ ছিল না। যার কারণে ঢাকায় রোগী পাঠাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘একটা বার্ন ইউনিটে মিনিমাম যে ফ্যাসিলিটি থাকা দরকার, তার কোনওটাই এখন নেই, এক রকম উদ্বাস্তুর মতো একটা সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।’
এমএমসি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নেই
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে আধুনিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় আগুনে শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়া বেশিরভাগ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে জনবল সংকট।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান লিমন কুমার ধর জানান, হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হওয়া ক্রিটিকাল (৩০ শতাংশের ওপরে শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়া) রোগীদের চিকিৎসায় আধুনিক ব্যবস্থাপনার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এবং হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) না থাকায় তাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে এসব ক্রিটিকাল রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হয়।
একইসঙ্গে রয়েছে জনবল সংকট। ৮ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র তিনজন। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাক্তার লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, আধুনিক ব্যবস্থাপনার আইসিইউ এবং এইচডিইউ স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
খুলনার ২টি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে জনবল সংকট, নেই আইসিইউ
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত আবু নাসের হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে জায়গা ও জনবল সংকট তীব্র। যার কারণে রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসা দেওয়া কঠিন।
খুলনার আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে পরিচালক ডা. বিধান চন্দ্র গোস্বামী জায়গা ও চিকিৎসকের সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, ৩৫ জনের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তাব ও অনুমোদন থাকলেও রয়েছে ২০ বেড, জায়গার অভাবে বাকি ১৫টি বেড স্থাপন করা যাচ্ছে না। আর একজন চিকিৎসক মাত্র একজন।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, স্বাভাবিক চিকিৎসা প্রদানে চিকিৎসক সমস্যা প্রকট। গত ৬ মাস ধরে দুই জন সহকারী ও একজন রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য রয়েছে। এখানের বার্ন ইউনিটে গত ৮ বছর ধরে কোনও নিয়োগ বা পদোন্নতি নেই। নেই আইসিইউ, রয়েছে যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততা।
দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্নে চিকিৎসা দেন সার্জারির চিকিৎসকরা।
২০১৫ সালে পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে ১০ শয্যার বার্ন ইউনিট শুরু হয় অর্থ বরাদ্দ ছাড়াই। সে সময়ে এর জন্য একজন সার্জারি কনসালটেন্ট, তিনজন সহকারী চিকিৎসকসহ ৬ জন চিকিৎসক এবং কমপক্ষে ১৬ জন নার্সের জন্য অর্থ ও জনবল বরাদ্দ চাওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের অভাবে ইউনিটটি যুক্ত করা হয়েছে সার্জারি ইউনিটের সঙ্গে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে রোগীর অবস্থা গুরুত্বর হলে তাদেরকে রংপুর বা ঢাকায় প্রেরণ করতে হয়। তবে ইউনিটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়নি, সংযুক্ত করা হয়েছে সার্জারি ইউনিটের সঙ্গে, পোড়া রোগীদের চিকিৎসাও দেন সার্জারির চিকিৎসক ও নার্সরা।
কুমিল্লা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে বেড ও লোকবল সংকট, নেই আইসিইউ
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেকে) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রোগী তুলনায় বেডের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রয়েছে জনবল সংকট, নেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। যার কারণে ২৫-৩০ ভাগের বেশি এবং শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়া রোগীদের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
কুমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মির্জ্জা মু. তাইয়েবুর ইসলাম জানান, বর্তমানে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের সঙ্গে শেয়ার করে বার্ন ইউনিটকে চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এদিকে দীর্ঘদিনের লোকবল সংকটও রয়েছে। বিভাগীয় অধ্যাপকের পদটি আজীবনের জন্য খালি পড়ে আছে। নেই আইসিইউ সুবিধা। শরীরের ২৫ ভাগ পুড়ে যাওয়া রোগীদের ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি নিতে হচ্ছে। অনেক সময় চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে।
বরিশালে মারাত্মক দুর্ভোগে পোড়া রোগীরা
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দায়িত্বে ছিলেন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান ডা. এম.এ. আজাদ সজল। গত এপ্রিলে ওই চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর চিকিৎসক সংকটে ওই ওয়ার্ডটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে দায়িত্বরত নার্স ও ব্রাদার এবং কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন।
আর ওয়ার্ডটি চালু না থাকায় অগ্নিদগ্ধ রোগীরা মারাত্মক দুর্ভোগে আছেন। তাদের ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যেতে হচ্ছে। হাসপাতাল পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, চিকিৎসক সংকটে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট আপাতত বন্ধ। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
অনেক শূন্যপদ সিলেট ওসমানী মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে
সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মো: আব্দুল মান্নান বলেন, মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। শূন্যপদ অনেক, একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে বার্ন ইউনিট। সেইসঙ্গে নেই আইসিউ-এইচডিইউ। যার কারণে ২৫ শতাংশের নিচে পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না, তাদের পাঠাতে হয় ঢাকায়। সেই সঙ্গে বার্ন ইউনিটে পোড়া রোগীদের জন্য যে অক্সিজেন সিস্টেমের প্রয়োজন তা নেই।
এক বেডে তিনজন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় চমেকে
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আইসিইউ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স সহ পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকায় একটু বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীর প্রায় ঢাকায় নিয়ে যেতে হয়।
ইউনিটের বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, বার্ন ইউনিটে জায়গা এবং জনবল দুটোরই স্বল্পতা আছে। ২৬ শয্যার ইউনিট হলেও গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে, আর শীতকালে সেটা আরও বেড়ে যায়। এর বিপরীতে রয়েছেন পাঁচ জন চিকিৎসক, ১৩ জন নার্স আর চার জন ওয়ার্ড বয়। এক বেডের বিপরীতে গড়ে ৩ জন রোগীকে সেবা দেওয়া অনেক কঠিন, নেই আইসিইউ।
বার্ন ইউনিটকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা শুরু করেছিলাম, কিন্তু করোনার কারণে কিছু কাজ থেমে আছে। তবে এখন আবার শুরু করছি। আট বিভাগীয় শহরে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ইউনিট চালু করা হবে জানিয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, একইসঙ্গে প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও চালু করা হবে বার্ন ইউনিট।
বার্তা কক্ষ,৫ অক্টোবর ২০২০