চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গত ৮দিনে ৫টি পোল্ট্রি মুরগির খামারের প্রায় ২১ হাজার মুরগি মারা গেছে বলে এ সব মুরগী খামারিদের নিকট থেকে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে এ সব মুরগী খামারিরা পথে বসার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
তাদের এ বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ায় তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এ সব খামারিরা পুরনায় এলাকায় খামার গড়ে তুলতে সরকারের পৃস্টপোষকতা ও অনুদান কামনা করছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর, পশ্চিম হাঁসা, ও খাজুরিয়া এলাকায়।
ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা জানিয়েছেন, তারা এ পর্যন্ত এসব মুরগি মারা যাওয়ায় তাদের অন্তত ২৫ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের নিকট থেকে ঔষধ এনেও প্রয়োগ করে মুরগি খামারের শত-শত মুরগী গুলোকে রক্ষা করতে পারেনি ।
খামারিরা রানীক্ষেত ও অজ্ঞাত রোগের কারণে এমনটি হয়েছে বলে দাবী করলেও ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম হাঁসা গ্রামে খাজে আহমেদ গাজীর মালিকানাধীন মেসার্স আল আকসা পোল্ট্রি এন্ড মৎস্য খামারের তিনটি শেডে ১৪ হাজার ও এর পাশেই খোরশেদ গাজীর মালিকানাধীন গাজী পোল্ট্রি খামার নামে দুটি খামারে ৭ হাজার মুরগির ছিল। এতে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধিত হয়েছে।
সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত খামার গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, আল আকসা পোল্ট্রি এন্ড মৎস্য খামারের তত্বাবধানকারী হুমায়ূন গাজী ও খোকন গাজী জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উক্ত তিনটি খামারের প্রায় ১৪ হাজার মুরগি রানীক্ষেত ও বার্ডফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। পাশেই মারা যাওয়া মুরগিগুলোকে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। এ সময় সর্বশেষ ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে মারা যাওয়া হাজার হাজার মুরগিগুলো মাটি চাপা দিয়েছে খামারিরা।
অন্যদিকে গাজী পোল্ট্রি খামারের মালিক খোরশেদ গাজী জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি পোল্ট্রি খামারের ব্যবসা করে আসছেন। তার দুইটি পোল্ট্রি ফার্মের মধ্যে একটি তার নিজের ভুমিতে ও অপরটি ভাড়া নেয়া ভুমিতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রানীক্ষেত ও অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে তার ২টি পোল্ট্রি মুরগির খামারের প্রায় ৭ হাজার মুরগি মারা গেছে।
সর্বশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে তার প্রায় দেড় হাজার মুরগি মারা গেছে। মুরিগগুলো রক্ষা করতে কুমিল্লাসহ নানা স্থান থেকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র আনলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
খাজে আহমেদ এর লোকজন জানান, খাজে আহমদ একসময় প্রবাসে ছিলেন। প্রায় ৮/৯বছর পুর্বে দেশে ফিরে গড়ে তোলেন মেসার্স আল আকসা পোল্ট্রি এন্ড মৎস্য খামার নামে প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে তার ৩টি পোল্ট্রি মুরগির খামারের সকল মুরগি মারা যাওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েছেন।
এমতাবস্থায় বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নেয়া টাকার কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করবেন এনিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খাজে আহমদ।
খামারি খোরশেদ গাজী জানান, এই খামার পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও সমবায় সমিতি থেকে ঋন নিয়েছেন। এখন সর্বস্ব হারিয়ে তিনি চোখেমুখে সর্ষেফুল দেখছেন। তাই ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে হয়তোবা তারা ব্যবসাটি পুনরায় চালু করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে ফরিদগঞ্জের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডা: জুলফিকার আলীকে তার দপ্তরে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তবে উপ-সহকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র সমাজপতি জানান, বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে রোগ নির্নয় করে খামারিদের নিদের্শনা দেওয়া হবে। তবে মুরগি গুলো কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তা তিনি এই মুহূর্তে নিশ্চিত নন এবং তা এখন সঠিক ভাবে বলতে পারছেননা।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান