জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় চার দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে) নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে সংস্থার সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ভার্চুয়াল জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে দেয়া বিবৃতিতে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিনিয়োগের সময় ‘টেকসই ভবিষ্যৎ’ নিশ্চিত করার আহ্ববান জানিয়ে প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবী এবং আমাদেরকে রক্ষার জন্য বিনিয়োগের সময় আমাদের টেকসই ভবিষ্যতের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।’
দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেছেন ‘শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গবেষণার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বৃহত্তর গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং জাতীয় পর্যায়ে আইন-কানুন জোরদার করা এবং নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া জীববৈচিত্র্য রক্ষার মূল পদক্ষেপ।’
৩য় প্রস্তাবে বলেছেন ‘জেনেটিক রিসোর্স এবং ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের প্রকৃত মালিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী সুফল বাটোয়ারায় প্রবেশাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে’।
চতুর্থ প্রস্তাবে ‘প্যারিসের (সনদ) লক্ষ্য অর্জন আমাদের বিলুপ্তি এবং টিকে থাকার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে। আমাদের অবশ্যই সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’ বলে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন- কারো পরামর্শে নয় ছয়দফা প্রস্তাব ছিলো বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব প্রচেষ্টা : প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি আন্তঃনির্ভরশীল বিশ্বে বাস করি। যেখানে পৃথিবী গ্রহের প্রতিটি প্রজাতি আমাদের বাস্তুসংস্থানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ডব্লিউডব্লিউএফ এবং লন্ডন জিওলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য মতে, ১৯৭০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বন্য প্রাণীর সংখ্যা গড়ে ৬৮ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ মিঠা পানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। মিঠা পানির জীববৈচিত্র্য বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতহারে হ্রাস পাচ্ছে, বৈশ্বিক জলাভূমির ৮৫ শতাংশ ইতোমধ্যে শিল্প বিপ্লবের পরে হারিয়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭০ সাল থেকে মিঠা পানির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, উভচর, সরীসৃপ ও মাছের সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে তুলছি এবং ফলস্বরূপ, কোভিড-১৯ এর মতো ‘জুনটিক’(প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত) রোগের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে সংবিধানে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকেই বন্য প্রাণী সংরক্ষণের আদেশ কার্যকর করেন। জৈববৈচিত্র্য সম্পর্কিত কনভেনশন বাস্তবায়নের জন্য আইন-প্রণয়নকারী অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের সংসদ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট ২০১৭ পাস করেছে।’
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘সরকার দেশের মোট স্থলভাগের ৫ শতাংশেরও বেশি এবং সামুদ্রিক জলভাগের প্রায় ৫ শতাংশ অঞ্চলকে ‘সংরক্ষিত ও পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল’ ঘোষণা করেছে।’
ঢাকা ব্যুরো চীফ, ১ অক্টোবর ২০২০