চাঁদপুর

পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত যত গ্রন্থ সৃষ্ঠি হয়েছে এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন । পবিত্র আল কোরআন হচ্ছে মানব জাতির কল্যাণে আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান ।

মানুষের সাথে তার সৃষ্টার সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করছে এ মহাগ্রন্থ আল কোরআন । মানব জাতির জন্য লাওহে মাহফুজ থেকে অবতীর্ণ হওয়া মহাগ্রন্থ আল কোরআন। অতীতে সকল নবীর দাওয়াত ও আসমানী গ্রন্থ সমূহের সার-নির্যাস মহাগ্রন্থ আল কোরআনে অন্তর্নিহিত আছে । তাই মহাগ্রন্থ আল কোরআনের কিছু তথ্য মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ রচিত কোরআন সংকলন গ্রন্থ থেকে উপস্থাপন করা হলো ।

মহাগ্রন্থ আল কোরআনের আয়াত বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নিকট জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে হেরা গুহায় অবতীর্ণ হয় । নবীজীর বয়স তখন ৪০ বছর । বিশ্বভ্রমান্ড এর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তালার লাওহে মাহফুজ থেকে রমজান মাসের ২৭ তারিখ সরাসরি অবতীর্ণ হয়। এর প্রথম আয়াত ছিলো,‘ ইকরা বেছমে রাব্বি কাল্লাজি খালাকা।’ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে পড়ুন-‘ আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি আপনাকে সৃষ্ঠি করছেন।’

দুনিয়ার সকল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইলম বিদ্যার সমাবেশ ঘটেছে এ পবিত্র আল কোরআনে । কোরআনের প্রকৃত নাম ৫ টি এবং সংজ্ঞা ৩টি । আলোচ্য বিষয় বস্তুগুলো ৫ ভাগে এবং ৭ মঞ্জিলে বিভক্ত। কোরআনের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পঠিত গ্রন্থ বা একত্র করা বা জমা করা ।

তাই পবিত্র কোরআনই হচ্ছে একমাত্র সারা বিশ্বে পঠিত গ্রন্থ । যা সুদীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ নাযিল হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষত ও কোনো রূপ পরিবর্তন ব্যতিত থাকবে । প্রথম আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার ৩ বছর পর্যন্ত পরবর্তী ওহী বা আয়াত আসা বন্ধ ছিল ।

পবিত্র কোরআনের সর্বশেষ আয়াত নাযিল হওয়ার ৩১ দিন পর বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মৃত্যুবরণ করেন । তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর । শেষ আয়াত হচ্ছে ‘আল ইয়াওমা আখমাতু লাকুম’।

কোরআনের ভাষা আরবী এবং আরবী ভাষায় প্রথম অনুদিত হয়। প্রথমে আয়াতগুলো বিক্ষিপ্ত পাতায়,ছালে,পাথরে কিংবা চামড়ায় লিপিবদ্ধ ছিল। সূরা ফাতেহাকে বলা হয় উদ্বোধনী সূরা বা প্রথম সূরা এবং নাস হলো সর্বশেষ নাযিলকৃত সূরা।

মক্কায় অবতীর্ণ সূরার সংখ্যা ৩২টি এবং মদীনায় অবতীর্ণ হয় ২২ টি । কোরআানের সূরা ১১৪টি। সর্বশেষ ছোট সূরা হচ্ছে সূরা আল কাউসার এবং বড় সূরা আল বাকারা । সূরার ক্রমবিকাশ বা সাজানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল জায়েদ ইবনে ছাবেদ (রা.) এর ওপর নবীজীর মৃত্যুর পর পরই কোরআন সংকলনের উদ্যোগ নেয়া হয় । এতে ৪২ জন ব্যাক্তির ওপর দায়িত্ব ছিল।

পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো বিক্ষিপ্ত স্থান থেকে একত্র করে প্রথম গ্রন্থ আকারে সংকলন করেন হযরত ওসমান (রা) । মুদ্রণযন্ত্র আবিস্কারের পর সর্বপ্রথম ১১১৩ হিজরীসনে মুদ্রিত হয়। মুদ্রিত কপিটির সংকলন এখনো মিশরের ‘দারুল কুতুবে’ রক্ষিত আছে ।

মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম মাওলায়ে ওচমান নামের একজন রাশিয়ার অধিবাসী সেন্ট পিটার্স বার্ক শহরে ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে কোরআন শরিফ মুদ্রণ করেন। একই সালে ইরানের রাজধানী তেহরানে লিথু মুদ্রণযন্ত্রে কোরআন মুদ্রিত হয়।

পবিত্র কোরআন বাংলায় প্রথম অনুবাদ করেন গিরিশ চন্দ্র সেন। তিনি তৎকালীন সময়ের বাংলা ভাষার একজন পন্ডিত ছিলেন। পবিত্র কোরানের ব্যাখ্যাই হাদিস হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ৭ পদ্ধতিতে কোরআন নাজিল হয়।

পবিত্র কোরআনের অক্ষরের সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ৬ শ ৭১ টি, যের ৩৯ হাজার ৫ শ’৮২ টি,পেস ৮ হাজার ৮ শ’৪টি, শব্দ ৮৬ হাজার ৪ শ’৩০ টি, তাসদিদ ১ হাজার ৪শ ৫৩টি, আয়াত ৬ হাজার ৬ শ ৬৬টি, নুকতা ১ লাখ ৫ হাজার ৬ শ ৮৪ টি, জযম ১ হাজার ৭ শ’৭১ টি, সিজদা ১৪ টি, জবর ৫৩ হাজার ২ শ’২৩টি,প্যারা ৩০টি,আল্লাহ শব্দ আছে ২ হাজার ৫ শ ৮৪টি, মুহাম্মদ শব্দ আছে ৪ বার, ওয়াদার আয়াত ১ হাজারটি,ও ভীতি প্রদর্শন আয়াত ১ হাজারটি।

আরবি বর্ণমালার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে প্রথম বর্ণ আলিফ । যার সংখ্যা ৪৮ হাজার ৮ শ ৭৬ টি । সবচেয়ে কম আছে জোয়া । যার সংখ্যা ৮ শ’৪২ টি । বিসমিল্লাহ নেই সুরা তওবায় । পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পঠিত হচ্ছে পবিত্র কোরআন । প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর পবিত্র কোরআন শিক্ষা গ্রহণ ওয়াজিব । সকল প্রকার নামাজ পবিত্র কোরআনের আয়াত দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়।

সংগ্রহে : আবদুল গনি,
সহ-সম্পাদক,চাঁদপুর টাইমস।

Share