মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। রায় প্রকাশের পর সেটি ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে রায়ের কপি যাবে কারাগারে। যদি রাষ্ট্রপতির কাছে নিজামী ক্ষমা না চান, তবে যেকোনো দিন ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তাঁর সামনে রয়েছে শুধু প্রাণভিক্ষা। তবে নিজামী প্রাণ ভিক্ষার সুযোগ চাইবেন না বলে পরিবারের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
গত ৫ মে রিভিউ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর গত শুক্রবার (৬ মে) নিজামীর স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়ে কারাগারে দেখা করতে গেলে নিজামী তাঁর এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নিজামীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মুমিন বলেন, “তিনি (নিজামী) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন না। তিনি বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করছি, প্রাণের মালিক আল্লাহ। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি দেশবাসীকে আমার সালাম জানাচ্ছি ও দোয়া চাচ্ছি, যাতে আমি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঈমানের ওপর দৃঢ় ও অবিচল থাকতে পারি। আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। আমার মাঝে কোনো দুর্বলতা নেই। আমি কোনো অন্যায় করিনি। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এ সরকার আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। আল্লাহ যদি আমাকে শহীদী মৃত্যু দেন, তাহলে সেটা হবে আমার চরম সৌভাগ্য’।”
গত বৃহস্পতিবার আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এর আগে গত মঙ্গলবার রিভিউ শুনানি শেষে ৫ মে রায়ের দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর আসামি পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আপিলেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহালের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত ২৯ মার্চ আবেদন করেন নিজামী। ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউ আবেদনের সঙ্গে ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে তাঁর দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি (গ্রাউন্ড) যুক্তি তুলে ধরা হয়।
গত ১৫ মার্চ নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আপিল বিভাগের চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর এ রায় প্রকাশ করা হয়।
গত ৬ জানুয়ারি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উসকানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিনটি অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে নিজামীর করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় ঘোষণা করা হয়।
বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের রায় গত ৬ জানুয়ারি ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ জামায়াতের এই শীর্ষ নেতার বিষয়ে রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ প্রকাশ করেন। পরে ১৫ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট ০৪:২৪ পিএম, ০৯ মে ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ