জাতীয়

পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই দেড় কোটি ভোটারের

প্রায় দেড় কোটি ভোটারের পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। সংশ্লিষ্ট ভোটারদের ঐ ১৮ ধরনের তথ্য না থাকায় উন্নতমানের স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট দিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট হয় সাধারণত স্বয়ংক্রিয় মেশিনে। এক্ষেত্রে কোনো ভোটারের ১৮ ধরনের তথ্য না থাকলে সেটাকে মেশিন বা সিস্টেম ‘নট ফাউন্ড ডাটা’ দেখায়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভোটারের কার্ডটিও প্রিন্ট করা থেকে বিরত থাকে। এই সংখ্যা প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোটারের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিইএ (স্মার্ট কার্ড) প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল কাদের বলেন, ভোটারের তথ্যগত ভুলের কারণে কার্ড প্রিন্টের সময় ‘নট ফাউন্ড ডাটা’ দেখাচ্ছে। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি মিটিং হয়েছে। সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব ভোটারের তথ্যগত সমস্যা আছে তা ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।

ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন ভোটার হওয়ার জন্য একজন নাগরিককে ভোটার ফরমে ৪৬ ধরনের তথ্য দিতে হয়। এর মধ্যে স্মার্ট কার্ড প্রিন্টের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ ধরনের তথ্য। তবে দেখা গেছে—যেসব ‘ভোটারের নট ফাউন্ড ডাটা’ এসেছে তাদের কারোর ওয়ার্ড নম্বর নেই, কারোর ইউনিয়নের নাম নেই, আবার কারো ফরমে ভোটার এলাকার নাম সংযোজন হয়নি। এসব তথ্যগত ভুলের কারণে সংশ্লিষ্ট প্রায় দেড় কোটি ভোটারের স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট বন্ধ আছে। আপাতত ভোটারদের নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ করা ছাড়া এ সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই। যেহেতু নির্দিষ্ট সংখ্যক তথ্য না থাকলে কার্ড প্রিন্ট হয় না, সেহেতু তথ্য পূরণ করে দিলেই হবে। এজন্য যার যার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে ফরম পাওয়া যাবে। সেখানে পূরণ করে জমা দিলে সাতদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কার্ড প্রিন্ট হয়ে যাবে। এক মাসের মধ্যেই সেটা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে এবং তথ্য পূরণকারী তা পেয়ে যাবেন।

সম্প্রতি নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে ইসি সচিব, এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বলেন, ২০০৮ সালের ভোটারদের প্রায় ১৫-২০ শতাংশ কার্ড তথ্যগত সমস্যার কারণে প্রিন্ট হয়নি, যা ‘নট ফাউন্ড ডাটা’ নামে পরিচিত। এসব ভোটারের স্মার্ট এনআইডি কার্ড এখন পর্যন্ত প্রিন্ট করা সম্ভব হয়নি।

২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটারের কার্যক্রম শুরু হলে দেশে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের মতো। ২০১১ সালে যখন নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় তখন ভোটার ছিল ৯ কোটি। স্মার্ট কার্ড উত্পাদনকারী ফরাসি কোম্পানি ওবার্থারের কাছ থেকে ৯ কোটি কার্ড পাওয়ার কথা থাকলেও ৭ কোটির কিছু বেশি কার্ড পেয়েছে ইসি। ইতিমধ্যে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। ৬ কোটি ৩৩ লাখ কার্ড উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আর বিতরণ হয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ স্মার্ট কার্ড। বর্তমানে স্মার্ট কার্ড উত্পাদন ও বিতরণ চলমান রয়েছে।

আইডিইএ (স্মার্ট কার্ড) প্রকল্প পরিচালক বলেন, আরো দুই কোটি কার্ড আমাদের হাতে নেই। ২০২৫ সালের মধ্যে নিবন্ধিত সব নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার জন্য আমরা সব পদক্ষেপ নিচ্ছি। বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ ভোটারের তথ্য আছে। ২০২৫ সাল নাগাদ আরো প্রায় ৪ কোটি ভোটার যুক্ত হবে। সেই সঙ্গে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সিদেরও স্মার্ট কার্ড দেবে ইসি।

আটকে আছে পৌনে ২ লাখ ভোটারের এনআইডি সংশোধন

সারা দেশে বর্তমানে থানা/উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালকের কাছে মোট ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৬৪ ভোটারের সংশোধনের ফাইল আটকে আছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এনআইডিগুলো সংশোধনের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ইসি। সম্প্রতি এনআইডি মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা ব্যুরো চীফ,১৫ মার্চ ২০২১

Share