চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ রোববার সকাল সাতটার দিকে বাসা থেকে ৩০০ গজ দূরত্বে নগরের পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে গিয়েছিলেন তিনি।
জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এসপির সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, এই দুর্বৃত্তরাও মোটরসাইকেলে করে এসেছিল।
নগরের ও আর নিজাম আবাসিক এলাকার ‘ইক্যুটি সেনটিয়াম’ নামের একটি বাড়ির সপ্তম তলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন বাবুল আক্তার। বাসায় তাঁর স্ত্রী, ছেলে আকতার মাহমুদ মাহির, মেয়ে তাবাসসুম তাজনীন ও গৃহকর্মী ফাতেমা আক্তার ছিলেন।
আজ সকাল সাড়ে সাতটায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জিইসি মোড় এলাকায় রাস্তায় পড়ে আছে বাবুল আক্তারের স্ত্রীর মরদেহ। পরনে কালো বোরকা। মাথায় হিজাব। লাশটিকে ঘিরে আছে লোকজন।
সকাল পৌনে আটটায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে চারপাশে ঘিরে রাখেন। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন নগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহারসহ নগর ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহের পর সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মিতশ্রী বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, নিহত মাহমুদার মাথার বাঁ পাশে একটি ও শরীরে একটি গুলি লেগেছে। এ ছাড়া সেখান থেকে অব্যবহৃত তিনটি বুলেট উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো ৭.৬৫ বোর পিস্তলের গুলি হতে পারে। হত্যাকারীরা খুব কাছ থেকে গুলি করেছে। আলামত সংগ্রহ শেষে সকাল সাড়ে আটটায় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।
একই তথ্য জানালেন পিবিআই চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির আহম্মেদ। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যবহৃত এবং তিনটি অব্যবহৃত গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে আসা চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ জানান, একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবুল আক্তারের স্ত্রী বাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে তাঁর ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে জিইসি মোড়ে আসছিলেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে করে এসে তিন যুবক প্রথমে বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে ধাক্কা দেয়। এরপর তাদের একজন তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি করে গোলপাহাড়ের দিকে চলে যায়। চলে যাওয়ায় সময় তারা একটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলের আশপাশে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এগুলো থেকে ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
ঘটনাস্থলে আসা চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার মো. ইকবাল বাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কে বা কারা কী জন্য এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। বাবুল আক্তার যেহেতু জঙ্গিদের গ্রেপ্তার ও অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন, সে জন্য জঙ্গিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, তা উড়িয়ে দিচ্ছি না। সব কটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
এ দিকে আজ সকাল নয়টায় ঘটনাস্থলের পাশে বাবুল আক্তারের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ছেলে আকতার মাহমুদ কাঁদছে আর বলছে, ‘আম্মু কোথায়? আম্মু কোথায়?’ আর নির্বাক হয়ে আছে তার ছোট বোন তাবাসসুম।
বাসার গৃহকর্মী ফাতেমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে আকতার মাহমুদকে স্কুলবাসে তুলে দিতে সকাল পৌনে সাতটায় বের হন মাহমুদা খানম। বাসার দারোয়ান আবদুস সাত্তার সাতটার দিকে বাসায় খবর দেন মাহমুদাকে কে বা কারা গুলি করেছে।
এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম। ছবিটি অ্যালবাম থেকে নেওয়া।দারোয়ান আবদুস সাত্তার জানান, বাসার সামনে জিই সিমোড়-গোলপাহাড় সড়কের জিইসি মোড়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে কে বা কারা গুলি করেছে—লোকজনের কাছ থেকে এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি দেখতে পান, রাস্তায় বোরকা পরা অবস্থায় পড়ে আছেন বাবুল আক্তারের স্ত্রী। আর আকতার মাহমুদের পুরো শরীর রক্তে ভেজা। মাহমুদা খানমকে তিনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করলে লোকজন জানান, তিনি মারা গেছেন। পরে তিনি আকতার মাহমুদকে বাসায় নিয়ে আসেন।
সম্প্রতি পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বাবুল আক্তার গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে যোগদান করেন। তাঁকে নতুন কোনো জায়গায় পদায়ন করা হয়নি। এর আগে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী অসুস্থ, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে—এমন খবর পেয়ে তিনি হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছান। এসেই তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে স্ত্রীকে খুঁজতে থাকেন। সবার কাছে জানতে চাইছিলেন, তাঁর স্ত্রীর কী হয়েছে। ২০০৭ সালে তাঁদের বিয়ে হয়।
বেলা ১১টায় হাসপাতালে আসেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না; নিরপরাধ কাউকে খুন করা। এটি দিয়ে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করো হয়েছে। জনগণ ও প্রশাসন মিলে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে বাবুল আক্তারকে অনেকবার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার যেন এখানেই শেষ হয়। তিনি আশা করেন, অচিরেই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’ (প্রথম আলো)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০১:১০ পিএম, ৫ জুন ২০১৬, রোববার
ডিএইচ