মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন জানিয়েছে, ব্যক্তির কোনো অপকর্মের দায় বাংলাদেশ পুলিশ বহন করে না। এ ঘটনায় দেশবাসীর ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য দুঃখিত ও মর্মাহত। বাংলাদেশ পুলিশ এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এসোসিয়েশন বিশ্বাস করে যে, অতীতের ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যকার বিদ্যমান আস্থা, বিশ্বাস এবং আন্তরিক ও শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভবিষ্যতে তা আরো দৃঢ় ও সংহত হবে।
গতকাল গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ বলেন, এ ঘটনাকে উপজীব্য করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে চলমান আইনি কার্যক্রমকে প্রভাবিত ও বাধাগ্রস্ত করতে তৎপর রয়েছে।
উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি পেশাদার বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর এ অপচেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। আমরা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল থেকে সংবিধান ও মানবাধিকার সমুন্নত রেখে দেশ ও মানুষের কল্যাণে সর্বদা কাজ করে যাবে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণই দিনশেষে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চায় যে, ব্যক্তির কোনো অপকর্মের দায় বাংলাদেশ পুলিশ বহন করে না। বাংলাদেশ পুলিশ অপরাধীকে কঠোর শাস্তি প্রদানে সবসময় সর্বাত্মক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে পুলিশের অবদানের কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাযুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধা নিয়মিত পুলিশি কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক প্রত্যয়ে উজ্জীবিত হয়ে করোনা বিস্তার রোধে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এ লড়াইয়ে ইতিমধ্যে পুলিশের ৬৬ জন বীর সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন; আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে অনেকেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। শুধু পুলিশ সদস্যই নয়, আক্রান্ত হয়েছেন তাদের পরিবারের অগণিত সদস্য। দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও নিবিড় দায়িত্ববোধে নিজের জীবন বিপন্ন করে পুলিশ সদস্যরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সকল ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনাকালীন এ বিপর্যয়ে প্রিয়জনেরা যখন লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে, লাশ সৎকারে বাধা দিচ্ছে অথবা অসহযোগিতা করছে, তেমনই এক জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের নির্ভীক সদস্যরা লাশের সৎকারে মানবিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ করোনাযুদ্ধে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও জনগণের সেবায় আত্মনিবেদিত হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশ আজ বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। জঙ্গি দমনের পাশাপাশি অগ্নি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশের অনেক অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সদস্য আত্মোৎসর্গ করেছেন। এ ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের গৌরবময় অবদানের কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে পুলিশের দেশপ্রেমিক সদস্যগণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের মাধ্যমে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। বাংলাদেশের দুই লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা ও দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে অদ্যাবধি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্নকরণ, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন মেগা ইভেন্টে নিরাপত্তা প্রদানসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুঃসময় ও যেকোনো ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির আবহে একযোগে কাজ করে দেশ ও জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে। জাতিসংঘ মিশনেও পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যগণ অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, অতীতের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামী দিনগুলোতেও দেশ ও মানুষের সেবায় একযোগে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবে।
বার্তা কক্ল, ১৪ জুলাই