কুমিল্লার বরুড়ায় পুলিশ সদস্য স্বামী মোনায়েমের নির্যাতনের শিকার হয়ে স্ত্রী ও সন্তানরা সংবাদ সম্মেলন করেছে। রবিবার ১১ টায় বরুড়া প্রেসক্লাবে পুলিশ সদস্য মোনায়েম হোসেনের শাস্তির দাবিতে স্ত্রী ও সন্তানরা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
লিখিত বক্তব্যে হেলেনা বেগম বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার আড্ডা ইউনিয়ন এর পোম্বাইশ গ্রামে । অভিযুক্ত আমার স্বামী মো. মোনায়েম হোসেন বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর এএসআই পদে কক্সবাজার জেলায় ৮-এপিবিএন জামতলী ক্যাম্পে কর্মরত আছেন।
আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ালেখা পড়ায় অবস্থায় একই এলাকার মোনায়েম হোসেন আমাকে বিয়ে করার জন্য আমার পরিবারকে নানান কৌশলে ভয়-ভীতি দেখায় তৎকালীন সময় আমার বাবা প্রবাসে থাকার কারণে আমার মা ও আত্মীয়-স্বজন একমত হয়ে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০১ সালে বেকার থাকা অবস্থায় মোনায়েম হোসেন তখন কিছুই করতো না, আমার পরিবার তার সকল খরচ বহন করতো। এরই মধ্যে ২০০৩ সালে কনস্টেবল পদে তার পুলিশ বাহিনীতে চাকরি হয়। তার বিপি নং- ৮৩০৩০৬৪৮২০ চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম- চাঁদপুর সহ বিভিন্ন স্থানে এক সঙ্গে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস করি। ভালোমতোই আমাদের সুখের ঘর সংসার চলছিল। ২০০৯ সালের পর একাধিক বার অন্য নারীদের সাথে কথা বলার বিষয় নিয়ে টুকটাক তার সাথে মনোমালিন্য হত, সর্বশেষ ২০১৯ সাল থেকে ব্যাপকভাবে পরকীয়া আসক্ত হতে শুরু করে আমার স্বামী মোনায়েম হোসেন।
আমার প্রথম সন্তান এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, ছেলে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, তৃতীয় ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছোট মেয়ের বয়স ২ বছর ৬ মাস। বিপত্তি বাদে ছোট মেয়েকে নিয়ে ২০২১ সালে করোনা কালিন সময়ে করোনায় আক্রান্ত থাকা অবস্থায় আমার ভুল বসত ছোট মেয়েটি কনসেপ্ট হয়। এই বিষয়টা মোনায়েম ভালো ভাবে নেয়নি, সে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে, সে সহ আমি এই বিষয়ে চাঁদপুর গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফাতেমা বেগম ও ডা. লতিফা নাসরিন এবং সিনিয়র নার্সের সাথে পরামর্শ নেই। তখন ডাক্তার ও নার্স আমার শারিরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখে বাচ্চা নষ্ট করতে গেলে আমার শারীরিকভাবে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই আমি বাচ্চা নষ্ট করিনি তার কথা মতো এটাই আমার বড় অপরাধ।
তার বক্তব্য হচ্ছে যেটা আমি চাইনি দুনিয়াতে আসুক সেটা কেনো আসলো, প্রকৃতপক্ষে ঘটনা হচ্ছে পরকীয়া আসক্ত লক্ষীপুর জেলার জনৈক এক বিধবা মহিলার সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ওই মহিলার সাথে সম্পর্কের পর থেকে সে নানান অজুহাত দেখিয়ে আমাকে মানসিকভাবে চরম টর্চারিং করতো এক পর্যায়ে তার অনৈতিক কর্মকান্ড নানান মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চাঁদপুরের বাসা থেকে সন্তান নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। ২০২১ সাল থেকে আমার ভরণপোষণ,হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ, বাচ্চাদের লেখা পড়া ভরণপোষণ কোন কিছুই দিচ্ছে না।
আমরা তিন বোন আমাদের কোন ভাই নেই, বাবা মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করছি। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একটি বারের জন্যও লম্পট মোনায়েম কথা বলে না, এমনকি তাদের পড়াশোনাও টোটালি বন্ধ করে দেয়। মানুষের থেকে ধার নিতে নিতে এখন প্রায় ১০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ঋণ হয়ে গেছি। আর ধার নিতে পারছিনা, যতটুকু নিয়েছি তাও শোধ করতে পারছিনা। আমার চার সন্তান ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে কান্নাকাটি করে। আমি তাদেরকে, কি দিয়ে শান্তনা দিবো।
মোনায়েম চাকরির শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমার পরিবারের কাছ থেকে চাকরির তদবির, প্রমোশন সহ নানান অজুহাত দিয়ে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি এই চারটি সন্তান নিয়ে এখন কি করবো দিশে হারা হয়ে আছি। জীবিত থেকেও মরার মতন অবস্থা আমার আর আমার সন্তানদের। তাদের ভরণপোষণ ইত্যাদি কোন কিছুই তার বাবা দিচ্ছে না, এমন কি একবারের জন্যও কোন খোঁজ খবর নেয়না। আমি চার সন্তান নিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।
মোনায়েমের পরকীয়া ও নানা নির্যাতনের বিষয়ে আমি পুলিশের কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ করে কোন সমাধান না পেয়ে কুমিল্লা বিজ্ঞ আমলি আদালতে মোনায়েম হোসেন এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি, মামলা নং- সি.আর ১০১/২০২৩। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালত মোনায়েম কে আমার সাথে সুসম্পর্ক তৈরি, তার সাথে রাখার জন্য এবং বাচ্চাদের যাবতীয় ভরণপোষণের বিষয় সঠিক ভাবে দায়িত্ব নিবে মর্মে আপোষ শর্তে তাকে জামিন দেন। আমাকে এবং আমার সন্তানদের নিয়ে কক্সবাজার একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়, ভাড়া বাসায় থাকা অবস্থায় তাকে বাসায় আসতে বললে নানান ধরনের অযুহাত দেখানো শুরু করে। তিনমাস ভাড়া বাসায় রাখার পর আমাকে জানান তার ঢাকায় দু’মাসের ট্রেনিং আছে। আমাকে এ ভাড়া বাসা ছেড়ে দিতে হবে। তার সাথে ঢাকা নিয়ে যেতে বললে সে আমাকে ট্রেনিং শেষে নিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেয়। দু’মাস পর তাকে বাসা নিতে বললে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। সে কোন স্বার্থ পূরণ না করায় আমি আবারও কুমিল্লা বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হই। যার মামলা নং- সি, আর ১৪০৮/২০২৪। আদালত মামলা টি আমল নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
অথচ মোনায়েম ক্ষমতার দাপটে গ্রেফতার না হয়ে আমাকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে, কয়েক দিন আগে আদালত থেকে জামিন নিয়েছে শুনেছি, বর্তমানে বিভিন্ন লোক মারফতে বলে বেড়াচ্ছে আমাকে ডিভোর্স করে দিয়েছে। অথচ আমি এই ধরনের কোন কাগজপত্র এখনো অব্দি পাইনি। সে একজন পুলিশ কর্মকতা হয়ে বেআইনি ভাবে আমাদের হয়রানি করে যাচ্ছে।
আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ এবং আমার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও মাননীয় পুলিশের আইজিপি মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন করছি, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি। বর্তমানে এএসআই মোনায়েম হোসেন কক্সবাজার জেলার জামতলী ক্যাম্প এ ৮-এপিবিএনে কর্মরত আছেন। আইনের রক্ষক হয়ে সে তার সন্তান ও স্ত্রীর উপর যে অমানবিক আচরণ করে চলছে তার থেকে সাধারণ মানুষ কোন সেবা পাবে এটা বিশ্বাস করতে পারিছিনা। এসময় হেলেনা বেগম লম্পট পুলিশ সদস্য মোনায়েম হোসেনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত দাবি করেন। এ বিষয়ে তিনি স্বামী ও তার সন্তানদের অধিকার ফিরে পেতে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইফনুস ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)’র হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪