পুরুষের পেটে নারীর জরায়ু আর ডিম্বাশয়

পুরুষ রোগীর পেটে জরায়ু আর ডিম্বাশয় ‘খুঁজে পেয়েছিল’ এক রোগনির্ণয় কেন্দ্র। সেই রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক আবারও পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। তার আগেই একরকম বিনা চিকিৎসাতেই মারা গেলেন সেই রোগী। ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-নগরী দূর্গাপুরের।

পেটে যন্ত্রণা নিয়ে রোববার (১৯ জু) রাতে একটি সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অরুণ খাঁ নামের ৫৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি।
ডাক্তার কয়েকটা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু সেই ব্যবস্থা হাসপাতালে ছিল না। তাই রোগীর পরিবারকে একটি বেসরকারি কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

সে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র থেকে আরেকজন নারীর রোগনির্ণয়ের রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল অরুন খাঁ-এর নামে।
রিপোর্ট যখন হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তিনি দেখেন যে, রোগি একজন পুরুষ হলেও তার রিপোর্টে জরায়ু এবং ডিম্বাশয় উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন ডাক্তার।
অরুণ খাঁ-র ভগ্নীপতি সমীরণ মাঝি বিবিসিকে বলছিলেন, “ওই রোগনির্ণয় কেন্দ্র থেকে আমরা সোমবার পরীক্ষা করাই। সেদিন রাতেই রিপোর্ট দেওয়া হয়। গতকাল সকালে ডাক্তারবাবু রিপোর্ট দেখে বলেন এ তো মেয়ের শরীরের রিপোর্ট, চিকিৎসা করাব কী করে?”
ওই পুরুষ র পেটে রোগীজরায়ু আর ডিম্বাশয় স্বাভাবিক অবস্থাতেই রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা ছিল।
রোগীর আত্মীয়স্বজনকে আবারও পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয় আর হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্টের কাছে অভিযোগ জানাতেও বলা হয়।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার বেলার দিকে একরকম বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় মি. খাঁয়ের।
রোগনির্ণয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চলেছে তাদের বিরুদ্ধে।
স্বাস্থ্য বিভাগ আর মহকুমা শাসকের কাছে ওই রোগনির্ণয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে পরিবারটি।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, যথেষ্ট গুরুতর অভিযোগ এটা। প্রাথমিক খোঁজখবরও করা হয়েছে। আজই ওই রোগনির্ণয় কেন্দ্রটি সিল করে দেওয়া হতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ওই রোগনির্ণয় কেন্দ্রের কর্তা অলোক মিত্রের কথায়, “ভুল তো হয়েইছে। তবে এটা ক্ল্যারিকাল মিসটেক – ছাপার ভুল। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি দোষী কর্মীর বিরুদ্ধে।“
মৃত রোগীর পরিবার অবশ্য বলছে, একটা ছাপার ভুলের জন্য বিনা চিকিৎসায় একজন মারা গেল। এখন ক্ষতিপূরণ দিক ওই সংস্থাটি।
অরুণ খাঁ একটি বেসরকারি স্কুলে অ-শিক্ষক কর্মচারী ছিলেন। তাঁর তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, কিন্তু তাঁর স্ত্রীর সংসার চলবে কী করে, এই চিন্তাই এখন ভাবাচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। (সূত্র- বিবিসি)

Share