পুরুষের পাশাপাশি যেসব কারণে নেশার জগতে সুন্দরী নারীরা

নিউজ ডেস্ক:
গত কয়েক বছরে দেশে মরণনেশা ইয়াবা বড়ির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। পুরুষের পাশাপাশি এই মাদক ব্যবসা ও আসক্তিতে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে নারীদের সংখ্যা। ফেনসিডিল, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদক ব্যবসায় সাধারণত নিম্ন আয়ের নারীরা জড়িত। এমনকি ইয়াবা ব্যবসায় নারীর সংখ্যাও বাড়ছে। গ্লামার জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত সুন্দরী নারীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া তরুণীরাও জড়িয়ে পড়েছেন ইয়াবা ব্যবসা ও সেবনে। সশ্লিষ্টরা বলছেন, যৌবনের তাড়ানা ও অর্থনৈতিক মোহে পড়ে এসব সর্বনাশা কাজে লিপ্ত হচ্ছে নারীরা।

নিরাময়কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে জানাজানি হবে। এতে বিয়ে-শাদিতে পরবর্তীকালে সমস্যা হতে পারে। ক্ষুণœ হতে পারে সামাজিক মর্যাদাও। এসব কারণে মাদকাসক্ত নারীরা লোকলজ্জায় চিকিৎসা নিতে নিরাময়কেন্দ্রে যেতে অনীহা দেখান। চিকিৎসা না নেওয়ার প্রবণতায় দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। পাশাপাশি নেশার জগৎ থেকেও ফিরতে পারছেন না। এর প্রভাব পড়ছে পুরো পরিবারে।


বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) পরিচালিত ২০১২ সালের এক জরিপে বলা হয়, এ দেশে মাদকাসক্তদের ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ ও ২০ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।

অর্থাৎ মোট মাদকাসক্তের পাঁচ ভাগের এক ভাগই নারী। অন্যদিকে জাতিসংঘের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে কমপে ৬৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। সেই হিসেবে এ দেশে ১৩ লাখের বেশি নারী কোনো না কোনো মাদক সেবন করছেন। কিন্তু এসব নারীর ১০ হাজার ভাগের এক ভাগও নিরাময়কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা নেন না।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) মো. আবুল হোসেন জানান, মাদকাসক্ত নারীকে সমাজ ভিন্ন চোখে দেখে। এই মানসিকতা ও লোকলজ্জায় নারী মাদকাসক্তরা চিকিৎসা সেবা নেন না বললেই চলে। মাদকাসক্ত নারীরা পুরুষের তুলনায় দ্রুত আক্রান্ত হয়। তাদের চিকিৎসা না দিলে ব্যক্তিজীবনেও প্রভাব পড়বে।

আহছানিয়া মিশনের নারী মাদকাসক্তি কেন্দ্রের প্রকল্প অফিসার ফারহানা হক মিতু বলেন, নারী মাদকাসক্তদের প্রথম পছন্দ ইয়াবা। এরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সহিংস আচরণ দেখায়। আর এসব বিষয় গোপন রাখায় নারীরা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোগে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পারিবারিক সচেতনতা জোরদার করা জরুরি।
সূত্র জানায়, সরকারিভাবে ঢাকার তেজগাঁও, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। কুমিল্লা, যশোর ও রাজশাহী কারা হাসপাতালগুলোতেও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সংযোজন করা হয়। কিন্তু সরকারিভাবে নারীদের জন্য আলাদা নিরাময় কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি, কোথাও সিটও বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকা আহছানিয়া মিশন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইকবাল রোডে একটি নারী মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। এরপর উদ্যোগ নেয় আপন, মুক্তি, প্রত্যয়, লাইট হাউস নামক নিরাময় কেন্দ্রগুলো।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গত ১০ মাসে তাদের চিকিৎসা কেন্দ্রে ৩৯ জন নারী ভর্তি হন। শুধু আহছানিয়া মিশনই নয়, অন্য নিরাময় কেন্দ্রগুলোয়ও নারীদের সেবাগ্রহণে একই হাল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১২ সালে সরকারি নিরাময় কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৪৬ জন পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হন। আর নারী ছিল মাত্র ৩ জন। একই বছর বহির্বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন ৮ হাজার ৭৯২ জন। নারী মাত্র ৬২ জন। ২০১৩ সালে ১ হাজার ৫৬৫ জন পুরুষ ভর্তি হলেও নারী ছিল না। বহির্বিভাগ ৬ হাজার ৫৫৬। নারী ছিল ১২ জন। গতবছর ২ হাজার ৩১৫ জন পুরুষ ভর্তি হলেও নারী ছিল না। বহির্বিভাগে প্রাথমিক ৬ হাজার ২৮১ পুরুষের তুলনায় নারী আসেন মাত্র ২২ জন।

অন্যদিকে ২০১২ সালের বেসরকারি নিবন্ধিত বা বৈধ নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন ১৩ হাজার ৪৫২। ২০১৩ সালে ১৭ হাজার ২৪১ এবং গত বছর নিবন্ধিত ১০১টি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার ২৭৫ জন পুরুষ ভর্তি হন। এখানেও নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা নগণ্য।
মাদকগ্রহণে দিন দিন এগিয়ে গেলেও চিকিৎসা গ্রহণে অনীহা প্রসঙ্গে আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি কেন্দ্রের প্রোগ্রাম অফিসার জাহিদ ইকবাল আমাদের সময়কে বলেন, অনেকেই মনে করেন মাদকাসক্ত তরুণীরা ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কও গড়ে তোলে। এ কারণে বিয়েতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ওই তরুণীর পরিবার মুখবুঝে মেয়েটির মানসিক সমস্যা লুকিয়ে রাখে।
চাঁদপুর টাইমস-ডিএইচ-2015।

Share